ভারতের অনুরোধ রাখতে নতুন সিদ্ধান্ত আইসিসির

ভারত-শ্রীলঙ্কা ম্যাচে এভাবে রাজনৈতিক বার্তা ছড়াতে দেখা গেছে। ছবি: রয়টার্স
ভারত-শ্রীলঙ্কা ম্যাচে এভাবে রাজনৈতিক বার্তা ছড়াতে দেখা গেছে। ছবি: রয়টার্স
>

গত ৬ জুলাই ভারত-শ্রীলঙ্কা ম্যাচে তিনবার রাজনৈতিক বার্তা সংবলিত উড়োজাহাজ উড়ে গিয়েছিল। এ ব্যাপারে ব্যাখ্যা চেয়ে আইসিসিকে চিঠি দিয়েছিল বিসিসিআই। বিসিসিআইয়ের সেই চিঠির জবাবে আইসিসি নিশ্চয়তা দিয়েছে, আগামীকালের সেমিফাইনালে যেন এমন পরিস্থিতির উদ্রেক না হয়, সে ব্যাপারে সর্বোচ্চ সতর্ক অবস্থানে আছে আইসিসি।

ভারত-শ্রীলঙ্কা ম্যাচে দৃশ্যটি নজরে পড়েছিল অনেকেরই। হেডিংলিতে ম্যাচ চলাকালীন সময়ে ‘কাশ্মীরের জন্য ন্যায়বিচার’ স্লোগান নিয়ে উড়ে গিয়েছিল একটি উড়োজাহাজ। এরপর আরও দুটি রাজনৈতিক বার্তা সংবলিত উড়োজাহাজ দেখা গেছে সেদিন হেডিংলির আকাশে। বিষয়টি ভালোভাবে নেয়নি ভারতীয় ক্রিকেট কন্ট্রোল বোর্ড (বিসিসিআই)। এমন ঘটনার যেন পুনরাবৃত্তি না ঘটে, সেটি নিশ্চিত করতে আইসিসির কাছে আবেদন জানিয়েছিল তারা। আর সে আবেদনের প্রেক্ষিতেই এবার নতুন সিদ্ধান্ত নিয়েছে আইসিসি।

ম্যানচেস্টারে আগামীকাল প্রথম সেমিফাইনালে নিউজিল্যান্ডের মুখোমুখি হবে ভারত। সেখানেও যেন হেডিংলির মতো অপ্রত্যাশিত পরিস্থিতির সৃষ্টি না হয়, সেটি নিশ্চিত করতে আইসিসির কাছে আনুষ্ঠানিক আবেদন জানিয়েছিল বিসিসিআই। ভারতের আবেদনের প্রেক্ষিতেই আইসিসি সিদ্ধান্ত নিয়েছে, আগামীকাল ম্যাচ চলাকালীন সময় ওল্ড ট্রাফোর্ডের আকাশসীমায় কোনো উড়োজাহাজ প্রবেশ করতে দেওয়া হবে না।

বিশ্বকাপের মাঠে এ রকম রাজনৈতিক বার্তা নিয়ে উড়োজাহাজ কীভাবে প্রবেশ করল, সে ব্যাপারে ব্যাখ্যা চেয়ে আইসিসির কাছে চিঠি দিয়েছিল বিসিসিআই। কীভাবে এমন অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতিকে এড়ানো যায়, সে ব্যাপারে ব্যবস্থা নিতেও অনুরোধ করা হয়েছিল। এর পরিপ্রেক্ষিতেই বিশ্বকাপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক স্টিভ এলওয়ার্দি বিসিসিআইকে কথা দিয়েছেন, নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে যেন এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি না হয়, সে ব্যাপারে সম্ভাব্য সবকিছুর ব্যবস্থা করবে আইসিসি

বিসিসিআইকে পাঠানো এক চিঠিতে এলওয়ার্দি বলেছেন, ‘সোমবারের ম্যাচ নিয়ে বিশ্বকাপের নিরাপত্তা পরিচালক জিল ম্যাকক্রাকেন পুলিশ গোল্ড কমান্ডারের সঙ্গে বৈঠকে বসেছেন। খেলা চলার সময় ওল্ড ট্রাফোর্ডের আকাশসীমায় উড়োজাহাজ প্রবেশ নিষিদ্ধ করা যায় কি না, সে ব্যাপারে আলোচনা চলছে। নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণের জন্য সম্ভাব্য সব ব্যবস্থা আমরা নেব।’

এ ব্যাপারে যুক্তরাজ্যের সিভিল অ্যাভিয়েশন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করা হচ্ছে বলেও জানিয়েছেন এলওয়ার্দি, ‘আমি এরই মধ্যে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তার সঙ্গে যোগাযোগ করেছি। তিনি সিভিল অ্যাভিয়েশন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করেছেন, একই সঙ্গে পরিবহন মন্ত্রণালয়ের সঙ্গেও আলোচনায় বসা হবে। বৈঠক শেষে যেসব সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে তা পরে জানিয়ে দেওয়া হবে।’

গত ৬ জুলাই হেডিংলির চেস্টার-লি-স্ট্রিটে ভারত-শ্রীলঙ্কার ম্যাচ চলাকালীন সময়ে ‘কাশ্মীরের জন্য ন্যায়বিচার’ এমন স্লোগান নিয়ে একটি উড়োজাহাজ উড়ে যায়। একটু পর ‘ভারত জেনোসাইড বন্ধ করো এবং কাশ্মীরকে স্বাধীনতা দাও’ এই স্লোগান নিয়ে আরেকটি উড়োজাহাজ যায়। একই ম্যাচে ভারতে বিচারবহির্ভূত হত্যা বন্ধ সংবলিত স্লোগান নিয়ে তৃতীয় উড়োজাহাজও দেখা গেছে।

এর আগে গত ২৯ জুন পাকিস্তান-আফগানিস্তান ম্যাচেও বেলুচিস্তান প্রদেশকে কেন্দ্র করে রাজনৈতিক বার্তা সংবলিত উড়োজাহাজ উড়ে যেতে দেখা গিয়েছিল। আয়তনের দিক দিয়ে বেলুচিস্তান পাকিস্তানের সর্ববৃহৎ প্রদেশ এবং এটি উত্তর আফগানিস্তানের সীমান্ত ঘেঁষা। ১৯৪৮ সাল থেকেই বেলুচিস্তানের স্বাধীনতার জন্য বিচ্ছিন্নতাবাদী আন্দোলন চলছে। পাকিস্তান বরাবরই দাবি করে আসছে, বেলুচ বিদ্রোহীদের মদদ জোগাচ্ছে ভারত ও আফগানিস্তান। তাই সাম্প্রতিক সময়ে পাকিস্তান ও আফগানিস্তানের মধ্যকার রাজনৈতিক সম্পর্ক বেশ নড়বড়ে। সমর্থকদের মাঝে অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি যাতে আর তৈরি না হয়, তার জন্য আইসিসি স্থানীয় কর্তৃপক্ষের সঙ্গে একাত্ম হয়ে কাজ করছে বলে জানিয়েছিলেন আইসিসির প্রধান নির্বাহী ডেভিড রিচার্ডসন। এ ছাড়াও স্টেডিয়ামগুলোতে যেন কোনো ধরনের রাজনৈতিক স্লোগান কেউ প্রচার করতে না পারে, তা নিশ্চিত করতেও কঠোর অবস্থানে রয়েছে আইসিসি, এমনটাও জানিয়েছিলেন রিচার্ডসন।