'ক্রিকেট কোচ' হয়ে যাচ্ছেন জেমি ডে!

জাতীয় ফুটবল দলের কোচ জেমি ডে। ফাইল ছবি
জাতীয় ফুটবল দলের কোচ জেমি ডে। ফাইল ছবি

‘মাঠে জাতীয় দলের কোচ না থাকলে আর ভালো খেলে লাভ কী!’ খুব হতাশা নিয়ে কথাগুলো বলছিলেন আবাহনী লিমিটেডের এক তরুণ ফুটবলার। নিজে ভালো খেললে ব্যক্তিগত ও দলের লাভ তো অবশ্যই। কিন্তু জাতীয় দলের কোচ সে খেলা না দেখলে তাঁর যে জাতীয় দলে খেলার স্বপ্ন পূরণ হচ্ছে না। ম্যাচ শেষে তাই হতাশা ঝাড়লেন সেই তরুণ। একদিকে এক তরুণের স্বপ্ন পূরণ হচ্ছে না, ওদিকে জাতীয় দলও হারাতে পারে সম্ভাবনাময় এক তরুণকে।

সাম্প্রতিক সময়ে জাতীয় দলের কথা উঠলেই সবার আগে আসে কোচ জেমি ডের নাম। ইংলিশ এই কোচের অধীনে বাংলাদেশ দলের কঙ্কালসার চেহারাটা বদলে যেতে শুরু করেছে। শেষ তিন আন্তর্জাতিক ম্যাচে কোনো গোল হজম না করে বাংলাদেশের জয় দুটি। এর মধ্যে বিশ্বকাপ প্রাক্‌বাছাইয়ে লাওস–বাধা পেরিয়ে জামাল ভূঁইয়ারা নিশ্চিত করেছেন মূল বাছাইপর্বের টিকিট। সামনে অপেক্ষা করছে একই সঙ্গে বিশ্বকাপ ও এশিয়ান কাপের বাছাইপর্ব। প্রতিপক্ষ চূড়ান্ত না হলেও আটটি ম্যাচ নিশ্চিত আছে বাংলাদেশের। সেপ্টেম্বরে শুরু হবে সে বাছাইপর্ব। এ ছাড়া সূচিতে আছে বঙ্গবন্ধু গোল্ডকাপের আসরও। সব মিলিয়ে কঠিন ও ব্যস্ত পরীক্ষার সামনে দাঁড়িয়ে বাংলাদেশ। আর লম্বা পরীক্ষার জন্য স্কোয়াডে প্রয়োজন বেশিসংখ্যক খেলোয়াড়।

কিন্তু খেলোয়াড় বাছাই বা পুরোনো খেলোয়াড়দের পরখ করবেন কে? প্রধান কোচ জেমি ছুটিতে। সহকারী কোচ স্টুয়ার্টও তাই। লাওসের বিপক্ষে ম্যাচ শেষেই ইংল্যান্ডে ছুটি কাটাতে গিয়েছেন তাঁরা। ইতিমধ্যে পেরিয়ে গিয়েছে ৩ সপ্তাহেরও বেশি সময়। আর বিশ্বস্ত সূত্রমতে, তাঁর ফেরার কথা চলতি মাসের শেষের দিকে।

পুরোদমে চলছে প্রিমিয়ার লিগ। কিন্তু মাঠে উপস্থিত থেকে পুরোনো খেলোয়াড়দের পরখ করা ও নতুন খেলোয়াড় দেখার জন্য নেই কেউ। লিগের দ্বিতীয় পর্বের কথা বাদ দিন, প্রথম পর্বের অনেক ম্যাচসহ স্বাধীনতা কাপ টুর্নামেন্টের একটি ম্যাচও মাঠে বসে দেখা হয়নি জেমির কোচিং স্টাফদের। স্বাভাবিকভাবে এতে বারবার মুখস্থ খেলোয়াড়দেরই চলে আসার সম্ভাবনা থাকে জাতীয় দলে।

প্রসঙ্গক্রমে বাংলাদেশের সাবেক কোচ লোডভিক ডি ক্রুইফের কথাও চলে আসে। তাঁর অধীনে বাংলাদেশ ভালো খেলতে শুরু করলেও খেলা ছাড়া ডাচ্‌ এই কোচ বেশির ভাগ সময়ই থাকতেন ছুটিতে। একটানা চার মাস ছুটি কাটানোর রেকর্ডও ছিল তাঁর। তাই ঘুরে ফিরে তাঁর দলে দেখা যেত পুরোনো মুখদেরই। খেলা দেখে দল নির্বাচন না করা প্রসঙ্গে একবার তো মুখ ফসকে বলেই ফেলেছিলেন, ‘ফেসবুকে খেলোয়াড়দের সঙ্গে যোগাযোগ রেখে দল নির্বাচন করি।’

বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক আবু নাঈম সোহাগের ভাষ্য অনুযায়ী, জেমির দল নির্বাচনের প্রক্রিয়াটা ক্রুইফের কাছাকাছি মানের। জেমি নিয়মিত খেলা দেখেন বলে জানালেন সোহাগ, ‘জেমি ছুটিতে থাকলেও সে নিয়মিত মাইকুজুতে খেলা দেখে। আমাদের টেকনিক্যাল ডিপার্টমেন্টের সঙ্গে যোগাযোগ রাখে। সে এভাবেই ভালো করছে। তাই ছুটি নিয়ে আমরা তেমন ভাবি না। যদিও বিষয়টা দেখ ভালো করে থাকলেন টেকনিক্যাল ডিপার্টমেন্ট।’

একটি ওয়েবসাইটে খেলা দেখে খেলোয়াড় বাছাই! যাঁরা মাইকুজুতে খেলা দেখেন, তাঁদের সবাই জানেন, মাত্র একটি অ্যাঙ্গেল থেকে ভিডিও করা হয় প্রতিটি ম্যাচের। মাঠের প্রতিটি কোণে খেলোয়াড়দের শরীরী ভাষা বোঝার উপায় নেই এই ওয়েবসাইটের ভিডিওতে। আর ভিডিওর যে কোয়ালিটি, জার্সি বদল করে থাকলে বোঝার উপায় নেই খালেকুজ্জামান সবুজ কে আর তৌহিদুল আলম সবুজ কোনজন! অনেক সময় মাঠে বল দেখাই হয়ে উঠে দুষ্কর। এ ছাড়া টিভি বা ওয়েবসাইটে খেলা দেখে দল নির্বাচন করার রীতি আছে ক্রিকেট কোচদের। জাতীয় দলের খেলার বাইরে তাঁরা সাধারণত ছুটিতেই থাকেন। স্কোর বোর্ডের খুঁটিনাটি ও নির্বাচকদের সঙ্গে কথা বলেই নির্বাচন করে থাকেন দল।

ক্রিকেট ও ফুটবলের মাঝে যে আকাশ-পাতাল পার্থক্য, তা খেলার ন্যূনতম খোঁজখবর রাখলেও জেনে থাকার কথা। না হলে কী আর জাতীয় দলের খেলোয়াড় বাছাইয়ের জন্য কোচরা ছুটে বেড়ান বিভিন্ন দেশের স্টেডিয়ামে, সহকারীদের পাঠিয়ে দেন বিশ্বের নানা প্রান্তে? জেমি ডে কি ‘ক্রিকেট কোচ’ হয়ে উঠছেন?