নিউজিল্যান্ডের সঙ্গী হতে অস্ট্রেলিয়ার 'আর্থিং' চিকিৎসা

অস্ট্রেলিয়া কোচ জাস্টিন ল্যাঙ্গার ছবি:রয়টার্স
অস্ট্রেলিয়া কোচ জাস্টিন ল্যাঙ্গার ছবি:রয়টার্স
>আগামীকাল ইংল্যান্ড-অস্ট্রেলিয়া সেমিফাইনাল। ব্যাট-বলের অনুশীলন তো করেছেই, তার আগে খালি পায়ে মাঠে হেঁটেছেন অস্ট্রেলিয়ান খেলোয়াড়েরা। গোল হয়ে বসে হয়েছে দলের সম্পর্কোন্নয়ন সেশনও।

বার্মিংহামের এই মাঠটাতে রেকর্ডটা অস্ট্রেলিয়ার জন্য আনন্দের কিছু নয়। ১৯৯৩ সালের পর থেকে কোনো ওয়ানডে জেতেনি অস্ট্রেলিয়া। যদিও রেকর্ডটাতে একটু ফাঁকি আছে, এ সময়ে ৯টি ওয়ানডের পাঁচটিরই ফল হয়নি, তিনটি অস্ট্রেলিয়া হেরেছে, অন্যটি টাই। বিখ্যাত টাই-ই, ১৯৯৯ বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ডোনাল্ড-ক্লুজনারের হিতাহিত জ্ঞানশূন্য দৌড়ে বিখ্যাত হয়ে যাওয়া যে টাই ফাইনালে নিয়ে গেছে অস্ট্রেলিয়াকে।

তা রেকর্ড তো রেকর্ডই, আর ওয়ানডে এক পাশে রাখলে ২০০১ অ্যাশেজের পর এই মাঠে কোনো সংস্করণেই জেতেনি অস্ট্রেলিয়া। এই মাঠেই কাল ফাইনালে ওঠার লড়াইয়ে ইংল্যান্ডের মুখোমুখি অস্ট্রেলিয়া। মাঠ যদি এক দুশ্চিন্তা হয়, অন্য দুশ্চিন্তা চোট। শন মার্শ-উসমান খাজার বিশ্বকাপ শেষ, মার্কাস স্টয়নিসকে নিয়েও আছে শঙ্কা। গ্রুপ পর্বের শেষ ম্যাচে দক্ষিণ আফ্রিকার কাছে হারও একটা ছন্দপতনের মতো।

সব মিলিয়ে সেমিফাইনালের আগে হঠাৎ একটু হয়তো এলোমেলো অস্ট্রেলিয়া। সেটির সমাধান? অস্ট্রেলিয়া কোচ জাস্টিন ল্যাঙ্গারকে বিশেষ কৃতিত্বই দিতে হয়, অন্য রকম একটা সমাধানই বের করেছেন তিনি। খেলোয়াড়দের নিয়ে গেছেন মাটির কাছে। যেটার নাম দেওয়া হয়েছে ‘আর্থিং’।

কীভাবে? পরশু অনুশীলনের নির্ধারিত সময়ের আধা ঘণ্টা আগেই মাঠে এসেছে অস্ট্রেলিয়া, এসেই শুরু হলো সবার জুতা-মোজা খোলা। খালি পায়ে মাঠে হেঁটেছেন সবাই। শন মার্শের বদলে দলে ঢোকা পিটার হ্যান্ডসকম্ব জানাচ্ছিলেন, এমনটা আগেও অন্য কিছু কিছু মাঠে হয়তো করেছেন ল্যাঙ্গার। তবে এবার তাতে ক্রিকেট বিশ্বকাপ সেমিফাইনালের আঁচও থাকল। পুরো মাঠ ঘোরার পর একটা জায়গায় গোল হয়ে বসে শুরু হলো নিজেদের গল্প বলা। কারও ক্রিকেটকে ভালোবাসার গল্প, কারও প্রেরণার গল্প, এই সেমিফাইনালে ওঠা বা ফাইনালে যাওয়া কার কাছে কী—সেই গল্প। দলের সবার সম্পর্কটা আরেকটু ভালো করা আরকি! গ্রুপ পর্ব শেষ, টুর্নামেন্টের শেষ প্রান্তে এসে খেলোয়াড়দের শরীরের ধকল তো আর এমনি এমনি কেটে যাবে না, মানসিকভাবে তাদের আরেকটু চাঙা করে তোলা।

ল্যাঙ্গার বলেই হয়তো এমনটা সম্ভব। বছরের একটা মাসে দাড়ি বড় রাখা, খালি পায়ে হাঁটার অভ্যাসের কারণে গত বছরই যিনি নিজেকে ‘হিপ্পিদের মতো’ বলেছিলেন। তা পরশুর এই কর্মকাণ্ডে অস্ট্রেলিয়ানদের লাভ কী হয়েছে? হ্যান্ডসকম্বের মুখেই তা শোনা গেল, ‘মুহূর্তটা আসলে মাঠের মাটির একটা আঁচ পাওয়ার জন্যই করা। কোচ এমনটা আগেও অন্য মাঠে করেছেন। দারুণই লাগে।’ পরে আরেকটু বর্ণনা করলেন, ‘পুরো মাঠ চক্কর দেওয়ায় মাঠের সব দিক দেখা হয়ে যায়। কোথায় ফিল্ডিং করবেন, সেটা বোঝা যায়। বৃহস্পতিবার লড়াই শুরুর আগে সবকিছুর একটা অনুভূতি মনে গেঁথে নেওয়া আরকি! পায়ে ঘাসের ছোঁয়া লাগে, মাটির ছোঁয়ায় কিছু ইতিবাচক অনুভূতি জাগে, নেতিবাচক কিছু অনুভূতি মাটি টেনে নেয়।’

এরপর একান্তই নিজেদের কথোপকথনের মুহূর্তের অনুভূতিও জানালেন হ্যান্ডসকম্ব, ‘খুব খোলামেলা আলোচনা হয়েছে। সবাই নিজেদের মন খুলে বলেছে। এই সেমিফাইনাল-ফাইনাল তাদের কাছে কী, বেড়ে ওঠার সময়ে বিশ্বকাপ দেখার অনুভূতি—সব। মিচ মার্শের গল্পটা আমার বেশ ভালো লেগেছে। ১৯৯৯ বিশ্বকাপে ওর বাবা (জিওফ মার্শ) কোচ ছিলেন, লর্ডসে ট্রফি নিয়ে ছবি তুলেছিলেন। মিচও ওই ব্যালকনিতে ও রকম করে ছবি তুলতে চায়।’

সবার গল্পের মাঝে হ্যান্ডসকম্বের নিজের গল্পটাও আর বাদ থাকে কেন! সেটিও কম সুন্দর নয়, ‘আমি ওদের বলছিলাম, বাড়ির পেছনের উঠোনে বন্ধুদের সঙ্গে এ রকম কত বিশ্বকাপের সেমিফাইনাল-ফাইনাল খেলেছি! সেখানে আমরা একেকজন ওই সময়ের খেলোয়াড়ের নাম নিতাম। তাঁরা যা করতেন, তা-ই করতে চাইতাম। সেখান থেকে এই পর্যায়ে আসাটা, ক্লিশে শোনাতে পারে, তবে সেটা স্বপ্ন সত্যি হওয়ার মতোই!’

খোলামেলা আলোচনা অবশ্য সেখানেই শেষ হয়নি। ব্যাটিং অর্ডারের শেষ দিকে যাঁর ব্যাটে বড় কিছুর আশায় ছিল অস্ট্রেলিয়া, বিশ্বকাপজুড়ে সেই গ্লেন ম্যাক্সওয়েলের ব্যাট হতাশ করেছে। শর্ট বলে তাঁর দুর্বলতা চোখে পড়ছে বেশ। অনুশীলনে সতীর্থ মিচেল স্টার্কের শর্ট বলে পড়ে গিয়েছিলেন, দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে কাগিসো রাবাদার শর্ট বলে পাল্টা আক্রমণ করতে গিয়ে উল্টো আউট হয়েছেন। কোচ ল্যাঙ্গার তাঁর সঙ্গে পরশু আলাদা করে অনেকক্ষণ কথা বলেছেন।

আলাদা এই প্রস্তুতির একটাই কারণ—সেমিফাইনাল বলে কথা! সেখানে যে ভুল করা মানে ট্রফির কাছে এসেও বাড়ি ফিরে যাওয়া। ভারত এরই মধ্যে বাড়ি ফিরছে। ফাইনালে চলে গেছে নিউজিল্যান্ড। গত বিশ্বকাপ ফাইনালের পুনরাবৃত্তি ঘটাতে চাইলে এবার জিততে হবে অস্ট্রেলিয়াকেও।