স্মিথের ব্যাটে অস্ট্রেলিয়া ২২৩

একাই লড়লেন স্টিভ স্মিথ। ছবি: রয়টার্স
একাই লড়লেন স্টিভ স্মিথ। ছবি: রয়টার্স
>এজবাস্টনে বিশ্বকাপের দ্বিতীয় সেমিফাইনালে টসে জিতে ব্যাটিং নিয়ে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে অস্ট্রেলিয়া গুটিয়ে গেছে ২২৩ রানেই।

স্টিভ স্মিথ একাই লড়ে গেলেন। একপ্রান্ত আগলে রেখে ইংলিশ বোলিং-তোপ একাই লড়ে যাচ্ছিলেন। ১৪ রানে ৩ উইকেট পড়ে যাওয়ার পর অস্ট্রেলিয়ার সংগ্রহটা যে দু শ পার হলো, সেটির পেছনে সাবেক অস্ট্রেলীয় অধিনায়কের ভূমিকা সবচেয়ে বেশিই। ১১৯ বলে ৮৫ রানের ইনিংসটা খেলে তিনি রান আউট হলেন। অস্ট্রেলিয়ার ইনিংসটাও গুটিয়ে গেল খুব দ্রুতই। এজবাস্টনে বিশ্বকাপ ক্রিকেটের দ্বিতীয় সেমিফাইনালে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ৪৯ ওভারে ২২৩ রানেই শেষ হয়েছে বর্তমান বিশ্বচ্যাম্পিয়নদের ইনিংস।

কাল ওল্ডট্র্যাফোর্ডে ভারতের ইনিংসের শুরুটাই যেন আজ মঞ্চস্থ হলো বার্মিংহামের এজবাস্টনে। ক্রিস ওকস হয়ে উঠেছিলেন হন্তারক। তাঁর সুইংয়ের সামনে বড় অসহায় মনে হচ্ছিল অস্ট্রেলিয়ার ব্যাটসম্যানদের। সঙ্গে যোগ হয়েছিলেন জফরা আর্চারের গতি। অধিনায়ক অ্যারন ফিঞ্চ প্রথম ফিরলেন এলবিডব্লুর ফাঁদে পড়ে, আর্চারের বলে। এরপর একে একে ওকস তুলে নিলেন ডেভিড ওয়ার্নার আর পিটার হ্যান্ডসকম্বকে। ওকসের অফ স্টাম্পের বাইরের বলটা বুঝতেই পারেননি ওয়ার্নার। ব্যাট ছুঁয়ে সোজা সেটি স্লিপে জনি বেয়ারস্টোর বিশ্বস্ত হাতে। এরপর উসমান খাজার চোটে অস্ট্রেলিয়া দলে সুযোগ পাওয়া হ্যান্ডসকম্ব প্লেড অন হয়ে বোল্ড হলেন ওকসের বলে।
১৪ রানে ৩ উইকেট হারিয়ে তখন রীতিমতো কাঁপছে অস্ট্রেলিয়া। অনেকেই শঙ্কা করছিলেন হয়তো বিপর্যয়কর কোনো সংগ্রহ দেখতে যাচ্ছে বিশ্বকাপের দ্বিতীয় সেমিফাইনাল। ওই মুহূর্তে ইংল্যান্ডের বোলাররা যেভাবে বোলিং করছিলেন, তাতে সেটি খুব অসম্ভব কিছু ছিল না। তবে অস্ট্রেলীয়রা তো লড়াকু, সেই লড়িয়ে মনোভাবটাই নতুন করে সবাইকে দেখালেন স্টিভ স্মিথ আর অ্যালেক্স ক্যারি। ১০৩ রানের দারুণ এক জুটি গড়লেন তাঁরা দুজন মিলে। স্মিথ ছিলেন স্থিতধী। এক-দুইয়ের ওপর জোর দিচ্ছিলেন বেশি। ক্যারিও স্মিথের সঙ্গেই তাল মিলিয়ে চলছিলেন। স্ট্রাইক বদল করছিলেন। কিন্তু বাঁ হাতি এ ব্যাটসম্যানের ব্যাট কিন্তু থেমে ছিল না। দুই-একটা দুর্দান্ত শটও খেললেন।
জুটিটি জমে যাওয়ার পর ইংলিশদের কপালে যখন চিন্তার ভাঁজ, ঠিক তখনই ত্রাতা হয়ে এলেন লেগ স্পিনার আদিল রশিদ। ক্যারিকে ফিরিয়ে তাঁর শুরু। ৫ বলের মধ্যে তিনি ফেরান মার্কাস স্টয়নিসকেও। ২৮ ওভারের দ্বিতীয় বলে আদিলের লেগ স্টাম্পের ওপর পড়া বলটিকে ফ্লিক করে তুলে দিয়েছিলেন ক্যারি। কিন্তু ডিপ মিড উইকেটে অপেক্ষায় ছিলেন বদলি ফিল্ডার জেমস ভিনস। ক্যাচটি ধরে নেন তিনি সহজেই। ১০৩ রানের জুটি ভেঙে যাওয়ার পর মার্কাস স্টয়নিসে ভরসা ছিল অস্ট্রেলিয়ার। কিন্তু তিনি চার বলের বেশি টিকতে পারেননি। রশিদের গুগলিতে পুরোপুরি পরাস্ত হয়ে পড়ে যান এলবিডব্লুর ফাঁদে।

স্বস্তিকর এক জুটির পর হঠাৎই ২ উইকেট হারিয়ে অস্ট্রেলিয়া আবারও পথ হারায়। এবার আক্ষরিক অর্থেই পথ হারায় অস্ট্রেলিয়া। গ্লেন ম্যাক্সওয়েলও বেশিক্ষণ টিকতে পারেননি। টেকেননি প্যাট কামিন্সও। ২৩ বলে ২২ রান করে ম্যাক্সওয়েল ফিরেছেন জফরা আর্চারের বলে অধিনায়ক এউইন মরগানের ক্যাচ হয়ে। এরপর আদিলের বলে প্যাট কামিন্স স্লিপে ক্যাচ দিয়েছেন জো রুটকে। তারপরেও বড় ভরসা হয়ে ছিলেন স্মিথ। মিচেল স্টার্কের সঙ্গে ৫১ রানের এক জুটিও গড়লেন। স্টার্ক বোলিংয়ের সঙ্গে ব্যাটিংটাও যে মোটামুটি করেন, সেটা দেখালেন তিনি। ২৯ রান করেছেন। তিনি অবশ্য ফেরেন ওকসের বলে। তবে অস্ট্রেলিয়ার সংগ্রহটা আড়াই শ ছুঁতে পারেনি স্মিথ রান আউট হয়ে ফেরায়। বেহেরেনডর্ফকে বোল্ড করেছেন মার্ক উড।

এর আগে শুরুটা ভারতের চেয়ে অন্তত ভালো করতে পেরেছে অস্ট্রেলিয়া। কাল প্রথম সেমিফাইনালে নিউজিল্যান্ডের ২৩৯ রান তাড়া করতে নেমে ১৯ বলের মধ্যে ৫ রান তুলতেই ৩ উইকেট হারিয়েছিল ভারত। আজ এজবাস্টনে দ্বিতীয় সেমিফাইনালে অস্ট্রেলিয়া যেন ভারতের পথেই হেঁটেছে! কিছু বুঝে ওঠার আগেই একে একে ফিরে গেলেন অধিনায়ক অ্যারন ফিঞ্চ, ডেভিড ওয়ার্নার আর পিটার হ্যান্ডসকম্ব।

এজবাস্টনের মাথার ওপর পরিষ্কার আকাশ দেখেই হয়তো টস জিতে আগে ব্যাটিংয়ের সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন অস্ট্রেলিয়া অধিনায়ক ফিঞ্চ। দ্বিতীয় ওভারে প্রথম বলেই ফিঞ্চকে এলবিডব্লিউর ফাঁদে ফেলেন জফরা আর্চার। নির্ভেজাল ‘ডাক’ মেরে ফিরেছেন অস্ট্রেলীয় অধিনায়ক। বিশ্বকাপে এ নিয়ে ১৮ উইকেট নিলেন আর্চার। বিশ্বকাপের এক টুর্নামেন্টে ইংল্যান্ডের হয়ে ইয়ান বোথামের গড়া সর্বোচ্চ উইকেট নেওয়ার (১৬) রেকর্ড আগেই ভেঙেছেন আর্চার।

আর্চার ও ক্রিস ওকস শুরু থেকেই বাউন্স পাচ্ছেন উইকেটে। লেংথ ধরে রেখে গতিময় বল করায় অস্ট্রেলিয়ার টপ অর্ডার বেশিক্ষণ দাঁড়াতে পারেনি। পরের ওভারেই নিখুঁত লেংথ থেকে বল তুলে ডেভিড ওয়ার্নারকে শিকার করেন ওকস। উঠে আসা বল সামলাতে না পেরে দ্বিতীয় স্লিপে ক্যাচ দেন এ ওয়ার্নার (৯)। স্টিভেন স্মিথের সঙ্গে পিটার হ্যান্ডসকম্বের জুটিও টেকেনি। সপ্তম ওভারে ওকসের ফুল পিচ বল ড্রাইভ করতে গিয়ে স্টাম্পে টেনে নিয়ে প্লেড অন হন হ্যান্ডসকম্ব (৪)। ইংল্যান্ডের পক্ষে ৩টি করে উইকেট নিয়েছেন আদিল ও ওকস। আর্চার নিয়েছেন ২টি। উড একটি।

ফাইনালে যেতে ২২৪ করতে হবে ইংল্যান্ডকে। মরগান-বাহিনী কি পারবে ১৯৯২ সালের পর প্রথমবারের মতো ফাইনালে নাম লেখাতে?