গাপটিল জানতেন, বলটা স্ট্যাম্পে লাগবেই!

মার্টিন গাপটিলের (ছবিতে নেই) এই এক থ্রোতেই নিউজিল্যান্ড উঠে গেছে টানা দ্বিতীয় বিশ্বকাপ ফাইনালে। ছবি: রয়টার্স
মার্টিন গাপটিলের (ছবিতে নেই) এই এক থ্রোতেই নিউজিল্যান্ড উঠে গেছে টানা দ্বিতীয় বিশ্বকাপ ফাইনালে। ছবি: রয়টার্স

গ্রুপ পর্বে অস্ট্রেলিয়া ম্যাচে লেগ স্লিপে দুর্দান্ত রিফ্লেক্সে স্টিভেন স্মিথের ক্যাচ ধরেছিলেন মার্টিন গাপটিল। বিশ্বকাপের সেরা ক্যাচগুলোর সংক্ষিপ্ততম তালিকাতে সে ক্যাচ থাকবে নিশ্চিত। কিন্তু বিশ্বকাপে গাপটিলের ফিল্ডিং দক্ষতার সেরা মুহূর্ত হয়ে থাকবে সেমিফাইনালের ওই রানআউট। গাপটিলের ওই থ্রোতেই যে টানা দ্বিতীয়বারের মতো বিশ্বকাপের ফাইনালে নিউজিল্যান্ড!

শুরুতে একতরফা মনে হওয়া ম্যাচে তখন নখ কামড়ানো উত্তেজনা। তিন আসরের মধ্যে দ্বিতীয় ফাইনাল নিশ্চিত করতে ভারতের তখন দরকার ১২ বলে ৩১ রান। একটু কঠিন লক্ষ্য বটে, কিন্তু উইকেটে যখন মহেন্দ্র সিং ধোনি, তখন কোনো লক্ষ্যই অসম্ভব নয়। লকি ফার্গুসনের করা ৪৯তম ওভারের প্রথম বলেই ছয় মেরে লক্ষ্যটাকে আরও নাগালে নিয়ে এলেন ধোনি। ইনিংসের শুরুতে দাপট দেখানো নিউজিল্যান্ড নয়, মোমেন্টাম তখন ভারতের দিকেই। কিন্তু ভারতের স্বপ্নভঙ্গ করার জন্য একজন গাপটিল যে ছিলেন!

ফার্গুসনের ওই ওভারেরই তৃতীয় বল। লেগ সাইডে বল ঠেলে দিয়ে দুই রানের জন্য দৌড়েছিলেন ধোনি। এই বয়সেও রানিং বিটুইন দ্য উইকেটে বিশ্বের অন্যতম সেরা ধোনি স্ট্রাইকে ফেরার জন্য দুই রান নেওয়ার চেষ্টা করবেন, ওই পরিস্থিতিতে তখন সেটাই স্বাভাবিক। কিন্তু হিসেবে একটু ভুল করে ফেলেছিলেন সাবেক ভারতীয় অধিনায়ক। গাপটিলের হাতে বল রেখে দুই নেওয়ার চেষ্টা করা যে অনেকটা নিজের পায়ে কুড়াল মারার মতোই অবস্থা! কেন তাঁকে বিশ্বের অন্যতম সেরা ফিল্ডার মানা হয়, সেটি আরও একবার দেখিয়ে দিলেন গাপটিল। দুরূহ কোণ থেকে দুর্দান্ত এক থ্রোতে সরাসরি ভেঙে দিলেন স্ট্যাম্প। যে জায়গা থেকে থ্রো করেছিলেন, বল লাগতেও পারত, নাও পারত। কিন্তু গাপটিল নিজে বলছেন, তিনি জানতেন বলটা স্ট্যাম্পে লাগবেই!

ওয়ান নিউজকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে গাপটিল বলেছেন, তাঁর থ্রো যে স্ট্যাম্পে লাগবে, এ ব্যাপারে নিশ্চিত ছিলেন, ‘বলটা যখন ব্যাটে লেগে ওপরে উঠল, আমি ভেবেছিলাম ক্যাচ হিসেবেই আসবে আমার কাছে। তাই আমি প্রথমে জায়গা থেকে খুব একটা নড়িনি। কিন্তু পরে যখন দেখলাম ক্যাচ হবে না, যত তাড়াতাড়ি সম্ভব দৌড়ে গিয়ে পরিষ্কারভাবে বলটা তোলার চেষ্টা করেছিলাম। থ্রো করার পর বলটা যখন অর্ধেক দূরত্ব পার হলো, তখনই আমি বুঝে গিয়েছিলাম, বলটা স্ট্যাম্পে লাগবেই।’

স্ট্যাম্পে লাগলেও আউট যে হবে, সেটির তো কোনো নিশ্চয়তা নেই! বিশেষ করে ব্যাটসম্যান যখন ধোনি, তখন যেকোনো কিছুই হতে পারত। গাপটিল নিজেও মানছেন, ভাগ্য পাশে ছিল বলেই ওটা আউট হয়েছে, ‘ডাইরেক্ট হিট সব সময়ই ক্লোজ হয়। আমরা তাই জানতাম, স্ট্যাম্পে লাগাতে পারলে আউটের ভালো সম্ভাবনা আছে। সৌভাগ্যই বলতে হবে, কয়েক ইঞ্চির জন্য সিদ্ধান্তটা আমাদের পক্ষে এসেছে।’

প্রায় প্রতি ম্যাচেই ফিল্ডিংয়ে নিজের মান দেখাচ্ছেন গাপটিল। কিন্তু গাপটিলের যে আরেকটি পরিচয়, সেই বিধ্বংসী ব্যাটসম্যানকেই যে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না বিশ্বকাপে! প্রথম ম্যাচে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে অপরাজিত ৭৩ রান করেছিলেন শুধু, এরপর আর একটি ম্যাচেও হাসেনি তাঁর ব্যাট। পরের ৮ ইনিংসে রান করেছেন মাত্র ১১.৭৫ গড়ে! ব্যাট হাতে ফর্ম না থাকায় সমালোচনাও হচ্ছে বেশ। গাপটিল বলছেন, এ সমালোচনা কষ্ট দিচ্ছে তাঁকেও। তবে ৩২ বছর বয়সী এ ব্যাটসম্যান আত্মবিশ্বাসী, ফাইনালে নিজের সেরা ফর্মে ফিরবেন, ‘মানুষ কী বলছে, কী লিখছে সেটির দিকে মনোযোগ না দেওয়ার চেষ্টা করছি, কিন্তু এটা আসলেই কঠিন। কিন্তু গত কয়েক দিনে নেটে ব্যাট করে আমি ভালো অনুভব করেছি। নেটে এত পরিশ্রম করেও ক্রিজে গিয়ে রান না পাওয়াটা দুঃখজনক। আমি কঠোর পরিশ্রম করছি, আশা করছি ফাইনালে আমি রান পাব।’