ভুল আম্পায়ারিংয়ের পর 'পুরস্কার' পেলেন ধর্মসেনা

সেমিফাইনালে জেসন রয়কে ভুল আউট দিয়েছিলেন কুমার ধর্মসেনা। ছবি: টুইটার
সেমিফাইনালে জেসন রয়কে ভুল আউট দিয়েছিলেন কুমার ধর্মসেনা। ছবি: টুইটার
>সেমিফাইনালে ইংলিশ ওপেনার জেসন রয়কে ভুল আউট দিয়েছিলেন কুমার ধর্মসেনা। এর আগেও বেশ কিছু আন্তর্জাতিক ম্যাচে দৃষ্টিকটু আউট দিয়ে বিতর্কের সম্মুখীন হতে হয়েছিল এ লঙ্কান আম্পায়ারকে। সেই ধর্মসেনাকেই এবার বিশ্বকাপ ফাইনালের জন্য বেছে নিয়েছে আইসিসি।

কখনোই বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে না হারা অস্ট্রেলিয়াকে হারিয়ে ২৭ বছর পর বিশ্বকাপ ফাইনালে উঠেছে ইংল্যান্ড। তবে ইংল্যান্ডের জয়ের পাশাপাশি আলোচনার খোরাক জুগিয়েছে আরেকটি বিষয়ও। সেমিফাইনালেও ভুল সিদ্ধান্ত দিয়ে প্রশ্নের জন্ম দিয়েছেন কুমার ধর্মসেনা। অবশ্য গোটা বিশ্বকাপেই প্রশ্নবিদ্ধ আম্পায়ারিংয়ের মান। ধর্মসেনার ভুল জন্ম দিয়েছে নতুন আলোচনা-সমালোচনা। কিন্তু ওই ভুলের জন্য কোনো শাস্তি তো দূর, উল্টো যেন পুরস্কারই পেলেন তিনি! ফাইনাল পরিচালনার জন্য দুই আম্পায়ারের একজন হিসেবে ধর্মসেনাকে বেছে নিয়েছে আইসিসি।

রোববারের ফাইনালের জন্য দুই আম্পায়ারের নাম ঘোষণা করেছে আইসিসি। দক্ষিণ আফ্রিকার মারাইস এরাসমাসের সঙ্গে মিলে ইংল্যান্ড-নিউজিল্যান্ড ফাইনাল ম্যাচটি পরিচালনা করবেন শ্রীলঙ্কার আম্পায়ার কুমার ধর্মসেনা। কিন্তু ঠিক আগের ম্যাচেই বড় একটি ভুল করা ধর্মসেনাকে ফাইনালের আম্পায়ার হিসেবে বেছে নেওয়ায় ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন অনেকেই।

ইংল্যান্ডকে চতুর্থ ক্রিকেট বিশ্বকাপ ফাইনালের দিকে অনেকটাই এগিয়ে নেওয়া জেসন রয় এগোচ্ছিলেন এ বিশ্বকাপে নিজের দ্বিতীয় সেঞ্চুরির পথে। ৬৫ বলে ৮৫ করা রয় হয়তো সেঞ্চুরি পেয়েও যেতেন, কিন্তু ধর্মসেনার একটি ভুল সিদ্ধান্তের শিকার হয়ে সেঞ্চুরিবঞ্চিত হয়েই ফিরতে হয়েছে তাঁকে। প্যাট কামিন্সের বাউন্সারটি হুক করার চেষ্টা করেছিলেন রয়, কিন্তু ব্যাটে লাগাতে পারেননি। সে হতাশা থেকেই কিছুক্ষণ মাটির দিকে তাকিয়ে ছিলেন রয়। কিন্তু মাথা তুলে অবাক বিস্ময়ে আবিষ্কার করলেন, অস্ট্রেলীয়দের আবেদনে আঙুল উঠিয়ে দিয়েছেন ধর্মসেনা!

আউটের সিদ্ধান্ত দেখে নিজের ক্ষোভ লুকাতে পারেননি রয়। ক্রিজে দাঁড়িয়েই ধর্মসেনার সঙ্গে তর্ক করেছেন কিছুক্ষণ। স্টাম্প মাইক্রোফোনে শোনা গেছে, বেশ কিছু অশ্রাব্য ভাষাও ব্যবহার করেছেন রয়। শাস্তি হিসেবে ম্যাচ ফির ৩০ শতাংশ কাটা গেছে রয়ের, দুটি ডিমেরিট পয়েন্টও যুক্ত হয়েছে ইংলিশ ওপেনারের নামের পাশে। ফাইনালের জন্য নিষিদ্ধ হননি বটে, তবে দুই বছরের মধ্যে আরেকটি ডিমেরিট পয়েন্ট পেলে এক টেস্ট বা দুই ওয়ানডের জন্য নিষিদ্ধ হবেন তিনি।

অথচ রয়ের হতাশ হওয়ার যথেষ্ট কারণ ছিল। রিপ্লেতে দেখা গেছে, ব্যাটে তো দূরের কথা, বল রয়ের গ্লাভসেও লাগেনি! আউটের ব্যাপারে ধর্মসেনার সঙ্গে কথা বলতে গেলে ধর্মসেনা তাঁকে বলেন, সন্দেহ থাকলে যেন তিনি রিভিউ নেন। কিন্তু ইংল্যান্ডের রিভিউ ততক্ষণে শেষ। শেষ পর্যন্ত তাই নাখোশ মনেই প্রাপ্য সেঞ্চুরি থেকে ১৫ রান দূরে থামতে হয়েছে রয়কে।

ওই ভুল সিদ্ধান্তের পর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম টুইটারে ধর্মসেনার বেশ সমালোচনা করেছেন দর্শকেরা। সুরাজ নামের এক ব্যবহারকারী লিখেছেন, ‘অতি নিম্নমানের আম্পায়ারিং। বিশ্বের সবচেয়ে বিশ্বাসযোগ্য আম্পায়ারের কাছ থেকে হতাশাজনক আম্পায়ারিং দেখলাম।’ গৌরব শর্মা নামের আরেকজন লিখেছেন, ‘কুমার ধর্মসেনা খুবই বাজে সিদ্ধান্ত দিলেন। কেমন হবে যদি ম্যাচের গুরুত্বপূর্ণ সময়ে, শেষ ওভারে কিংবা শেষ বলে এমন সিদ্ধান্ত দেওয়া হয়? আইসিসির উচিত আম্পায়ারিং প্রশ্নে কঠিন সিদ্ধান্ত নেওয়া।’ আবার কেউ কেউ তাঁর আগে দেওয়া ভুল সিদ্ধান্তগুলো টেনে এনে প্রমাণ করতে চেয়েছেন, ভুল সিদ্ধান্ত দেওয়ার নজির এবারই প্রথম নয় ধর্মসেনার!

২০১২ ও ২০১৮- ক্যারিয়ারে দুবার আইসিসির বর্ষসেরা আম্পায়ার নির্বাচিত হয়েছেন ধর্মসেনা। এ নিয়ে টানা দ্বিতীয়বার বিশ্বকাপের ফাইনাল পরিচালনা করতে যাচ্ছেন ৪৮ বছর বয়সী এ লঙ্কান আম্পায়ার। ২০১৬ সালের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের ফাইনালেও আম্পায়ারের দায়িত্বে ছিলেন ধর্মসেনা। তবে ওই একই বছরে বিতর্কের সম্মুখীন হতে হয়েছিল তাঁকে। ২০১৬ সালে বাংলাদেশ ও ইংল্যান্ডের মধ্যকার চট্টগ্রাম টেস্টে তাঁর আটটি সিদ্ধান্ত রিভিউ নিয়ে পাল্টেছিলেন দুই দলের খেলোয়াড়েরা। ইংলিশ ব্যাটসম্যান মঈন আলীকে ছয় বলের মধ্যে তিনবার আউট দিয়েছিলেন ধর্মসেনা, প্রতিবারই রিভিউ নিয়ে ধর্মসেনাকে ভুল প্রমাণ করেছিলেন মঈন!