ডি ভিলিয়ার্স জোর করে দলে ঢুকতে চাননি

এবি ডি ভিলিয়ার্স। ছবি: এএফপি
এবি ডি ভিলিয়ার্স। ছবি: এএফপি
>

দক্ষিণ আফ্রিকার দুঃস্বপ্নের বিশ্বকাপ শেষ হওয়ার পর মুখ খুলেছেন এবি ডি ভিলিয়ার্স। সাবেক প্রোটিয়া অধিনায়ক বলছেন, আইপিএল চলার সময়ে ডু প্লেসির সঙ্গে কথা ঠিকই হয়েছে তাঁর, তবে জোর করে দলে ঢোকার ইচ্ছা তাঁর কখনোই ছিল না

কত সমালোচনাই না শুনতে হয়েছিল তাঁকে! এবি ডি ভিলিয়ার্স স্বার্থপর, শুধু দক্ষিণ আফ্রিকার কিংবদন্তিদের একজন হওয়ার কারণেই এমন দাবি জানাচ্ছেন এবি ডি ভিলিয়ার্স...আরও কত কী! সবই এক গুঞ্জনকে ঘিরে।

গুঞ্জনটা কী? এই বিশ্বকাপের গ্রুপ পর্বের শুরুর দিকে প্রথম তিন ম্যাচেই হেরে দক্ষিণ আফ্রিকা যখন ধুঁকছে, তখন শোনা যায়, ২০১৮ সালে অবসরে চলে যাওয়া ডি ভিলিয়ার্স নাকি বিশ্বকাপের দল ঘোষণার আগের দিন অধিনায়ক ফাফ ডু প্লেসির কাছে দলে ফেরার ইচ্ছার কথা জানিয়েছিলেন। স্বাভাবিকভাবেই তাঁর অবসরের পর অন্যভাবে দল গুছিয়ে নেওয়া দক্ষিণ আফ্রিকা তখন সে অনুরোধ রাখেনি, কিন্তু ডি ভিলিয়ার্স তো এই এক গুঞ্জনেই হয়েছেন সমালোচিত। তা দক্ষিণ আফ্রিকার দুঃস্বপ্নের মতো বিশ্বকাপটা গ্রুপ পর্বেই শেষ হওয়ার পর এবার মুখ খুলেছেন ‘এবি’, সাবেক প্রোটিয়া অধিনায়ক বলছেন, এভাবে ফিরতে চাননি তিনি। আইপিএল চলার সময়ে ডু প্লেসির সঙ্গে কথা ঠিকই হয়েছে তাঁর, তবে জোর করে দলে ঢোকার ইচ্ছা তাঁর কখনোই ছিল না।

ক্রিকইনফো জানাচ্ছে, এক বিবৃতিতে পুরো ঘটনারই ব্যাখ্যা দিয়েছেন ডি ভিলিয়ার্স। যেখানে তিনি লিখেছেন, ‘আমার অবসর ঘোষণার দিনে ব্যক্তিগতভাবে (দক্ষিণ আফ্রিকান ক্রিকেটসংশ্লিষ্ট) একজন জিজ্ঞেস করেছিলেন যে বিশ্বকাপে আমার খেলার দরজা খোলা আছে কি না। আমাকে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল, আমি নিজে থেকে কিছু বলিনি। উত্তরে তখন হ্যাঁ বলেছিলাম। কিন্তু এখন পিছু ফিরে মনে হচ্ছে, না বলাই উচিত ছিল।’ দক্ষিণ আফ্রিকান ক্রিকেটসংশ্লিষ্ট লোকটি কে ছিলেন তা বলেননি, তবে সেটিই বিশ্বকাপের আগে ডু প্লেসির সঙ্গে কথা বলতে উদ্বুদ্ধ করেছিল বলে জানিয়েছেন।

গুঞ্জনটা কীভাবে এল, তা নিয়ে ডি ভিলিয়ার্সের ব্যাখ্যা, ‘ফাফ আর আমি তো স্কুলের সময় থেকে বন্ধু। বিশ্বকাপের দল ঘোষণার দুই দিন আগে এমনিতেই কথা বলার জন্য ওর সঙ্গে যোগাযোগ করেছিলাম। ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগে আমি খুব ভালো ফর্মে ছিলাম। কথায় কথায় এক বছর আগে (অবসর ঘোষণার সময়) আমাকে প্রশ্নটা করার পর যে উত্তর দিয়েছিলাম, সে প্রসঙ্গ তুলে বলেছিলাম, আমাকে দরকার হলে আমি খেলতে রাজি। তবে সেটা দরকার হলে!’ নিজের অবস্থান পরিষ্কার করতে বললেন, ‘আমি কোনো ধরনের কোনো দাবি রাখিনি। টুর্নামেন্টের ঠিক আগে দলে ঢোকার জন্য জোরাজুরি করার তো কোনো মানেই হয় না। দলে ঢুকব, সে আশাও করিনি।’

এত দিন কেন ব্যাখ্যাটা দেননি, সেটিও বলেছেন ডি ভিলিয়ার্স। ওই যে, দল তখন ক্রিকেট বিশ্বকাপ নিয়ে ব্যস্ত ছিল। সে সময়ে সংবাদমাধ্যম, সাবেক ক্রিকেটাররা তাঁর অনেক সমালোচনা করলেও কিছু বলেননি। কারণ, নিজের ব্যাখ্যা দিয়ে দলের মনোযোগ খেলা থেকে সরাতে চাননি এবি। এখন সেটির ব্যাখ্যায় এসে নিজের অবসর নিয়ে সমালোচনার জবাবও দিয়েছেন, ‘২০১৮ সালের মে মাসে আমি আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে অবসর নিয়েছিলাম। কারণ, আমি কাজের চাপ কমাতে চেয়েছি, স্ত্রী-সন্তানদের সময় দিতে চেয়েছি। অনেকেই তখন বলেছেন আমি টাকার জন্য এসব করছি। সত্যিটা হচ্ছে, বিশ্বজুড়ে খেলতে অনেক লোভনীয় প্রস্তাবও আমি ফিরিয়ে দিয়েছি। আগে যেখানে বাড়ির বাইরে আট মাস থাকতাম, এখন সেটা তিন মাসে নামিয়ে এনেছি।’

বিশ্বকাপের দলে তাঁর ফেরার গুঞ্জনও হঠাৎ কেন বেরিয়েছে, সেটিরও একটা সম্ভাব্য ব্যাখ্যা বের করেছেন ডি ভিলিয়ার্স, ‘ভারতের কাছে প্রোটিয়াদের হারের সন্ধ্যায়—যেটি ছিল তিন ম্যাচে তাদের তৃতীয় হার—হঠাৎ আমাদের (ডু প্লেসি ও তাঁর) ব্যক্তিগত আলাপ সংবাদমাধ্যমে ফাঁস হয়ে গেছে। আমাকে সমালোচিত করার জন্য সেই কথাগুলোকেও ঘুরিয়ে বলা হয়েছে। সেটা আমি ফাঁস করিনি, আমার কাছের কেউও করেনি, ফাফও করেনি। (হারের পর) সমালোচনা এড়াতে কেউ এটা করে থাকতে পারে, কে জানে!’

পুরো ব্যাপারটাকে ‘অপ্রীতিকর ও অপ্রয়োজনীয়’ নাটক জানিয়ে পরে বললেন, ‘সেটার জন্য আমাকে অন্যায়ভাবে উদ্ধত, স্বার্থপর, বিচারবুদ্ধিহীন বলা হয়েছে। কিন্তু আমার বিবেক পরিষ্কার। নিজের প্রতি সৎ থেকেই অবসর নিয়েছিলাম, তবে বিশ্বকাপের প্রশ্নে নিজের দরজা খোলা রেখেছিলাম। কিন্তু দল এরপর নিজের মতো করে এগিয়ে গেছে। আমার কারও ওপর তা নিয়ে কোনো রাগ নেই।’