নাই হয়ে গেল নতুন মেসি উপহার দেওয়া দল

দিবালার এমন সব স্মৃতি হতাশা বাড়িয়ে দিচ্ছে পালেরমোর সমর্থকদের। ফাইল ছবি
দিবালার এমন সব স্মৃতি হতাশা বাড়িয়ে দিচ্ছে পালেরমোর সমর্থকদের। ফাইল ছবি

২০১৫ সালে হঠাৎ ‘নতুন মেসি’র দেখা মিলল ফুটবলে। এক সময় প্রায় প্রতি বছর ‘নতুন ম্যারাডোনা’ খুঁজে পাওয়া যেত আর্জেন্টিনার ফুটবলে। তাদের অনেকেই দুর্দান্ত ক্যারিয়ার কাটিয়েছেন। তবে লিওনেল মেসির আবির্ভাবের পর নতুন ম্যারাডোনা নয় নতুন মেসির অপেক্ষাতেই ছিল দেশটি। তাদের সে অপেক্ষার শেষ হয়েছিল ২০১৫ সালে।

মজার ব্যাপার পাওলো দিবালা নতুন মেসি ট্যাগ নিজের দেশে পাননি। দেশ ছেড়ে ইউরোপে এসে দুই বছর কাটিয়ে তবেই জুটেছিল সে ট্যাগ। এমনিতেই দুর্দান্ত ফুটবল খেলার কারণে লা জোয়া বা রত্ন নামে ডাকা হচ্ছিল। মাঠের ডান প্রান্ত দিয়ে দুর্দান্ত ড্রিবলিং করে ভেতরে ঢোকা, টেকনিক, দুর্দান্ত বাঁ পা ও গোলের ক্ষুধা মিলিয়ে মেসির সঙ্গে মিল খুঁজে নিতেও কারও সমস্যা হয়নি। ইউরোপিয়ান ফুটবলকে এই মেসি উপহার দেওয়ার কৃতিত্বটা ইতালিয়ান এক ক্লাবের, পালেরমো। সেই পালেরমোকে নতুন মৌসুমে আর পেশাদার ফুটবলে দেখা যাবে না।  দিবালাকে বিক্রি করার দুই মৌসুম পর তারা সিরি ‘বি’তে নেমে গিয়েছিল।

সিরি ‘বি’র কাছে দেনা পরিশোধ না করায় ও খেলোয়াড়দের বেতন বকেয়া রাখায় পালেরমোকে পেশাদার ফুটবলের সর্বশেষ স্তরেও রাখা হচ্ছে না। নতুন করে সিরি ‘ডি’তে (অপেশাদার লিগের সর্বোচ্চ স্তর) খেলা শুরু করতে হবে। সেটাও ভিন্ন এক ‘ফিনিক্স ক্লাব’ সৃষ্টি করে। সাধারণত যে সব ক্লাব পারফরম্যান্স নয়, আর্থিক কারণে ব্যর্থ হয়; তারা নতুন করে আরেকটি ক্লাবের জন্ম দিয়ে ফিরে আসে। এদের ফিনিক্স ক্লাব বলে। ফিওরেন্টিনা, পার্মা, নাপোলির মতো সব ক্লাবকেই এ প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে যেতে হয়েছে।

দিবালাকে খুঁজে বের করে ইতালিতে নিয়ে আসার কৃতিত্ব মরিসিও জাম্পারিনির। পালেরমোর সভাপতি হয়ে চল্লিশের বেশি কোচকে ছাঁটাই করা এই ব্যক্তি ১৯ বছরের দিবালাকে কিনে অবশ্য বলেছিলেন ‘নতুন সার্জিও আগুয়েরো’কে কিনেছেন তারা। কিন্তু তিন বছরের মাথায় সেই দিবালাকে যখন জুভেন্টাসের কাছে বিক্রি করে দিয়েছেন তখন বলেছিলেন, ‘পালেরমোর কাছে দিবালা আছে যে হলো ভবিষ্যতের মেসি। আমার চোখে ওর দাম এখন ৪০ মিলিয়ন ইউরো (নেইমারের দলবদলে পাল্টে যাওয়া সময়ের আগের কথা এটি)। দিবালাকে বিক্রি করে আমরা যা পাব সেটা আবার বিনিয়োগ করা হবে এবং আরও অনেক দুর্দান্ত খেলোয়াড় এ ক্লাবে আসবে।’

এ পরিকল্পনা কখনো বাস্তবায়ন হয়নি। দিবালাকে বিক্রি করে পাওয়া এককালীন পাওয়া ৩২ মিলিয়ন ইউরো সঠিকভাবে ব্যবহার করা হয়নি। জাম্পারিনি নিজের স্বভাব বদলাতে পারেননি। দিবালার সঙ্গে সম্পর্ক শেষ হওয়ার দুই মৌসুম পর তারা সিরি ‘বি’তে নেমে গিয়েছিল। আর চার মৌসুম আগে যারা নতুন মেসিকে নিয়ে গর্ব করছিল, তারা সিরি ‘বি’ (ইতালিয়ান ফুটবলের দ্বিতীয় স্তর) থেকে অবনমিত হয়ে গেছে এবার।। না, ফুটবলীয় কোনো কারণে নয়। লিগে তারা তৃতীয়ই হয়েছিল। কিন্তু আর্থিক দুর্নীতি, অনিয়ম ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নিয়ে কোনো দিক নির্দেশনা না থাকায় এ শাস্তি জুটেছে।

ইতালিয়ান ফুটবল ফেডারেশন তাদের প্রথমে তৃতীয় স্তর সিরি ‘সি’তে পাঠিয়ে দিয়েছিল। কিন্তু সাবেক ম্যানেজার ও খেলোয়াড়দের বেতন ভাতা নিয়ে অভিযোগের ভিত্তিতে নতুন করে শাস্তি মিলেছে তাদের। আর্থিক নিশ্চয়তার দলিল সঠিক সময়েও জমা দেয়নি তারা। নির্ধারিত সময়ের ছয় দিন পরে দলিল জমা দিলেও সেটা গ্রহণ যোগ্য হয়নি। বৃহস্পতিবার ইতালিয়ান ফুটবলের তত্ত্বাবধায়ক কমিটি জানিয়েছে, ‘২০১৯-২০ সিরি ‘আ’তে অংশ নেওয়ার অনুমতিপত্র গ্রহণের জন্য প্রয়োজনীয় আর্থিক প্রমাণ দেখাতে পারেনি তারা।’