বাংলাদেশের দাবা কোচের জালিয়াতি ধরা পড়ল ফ্রান্সে

টয়লেটে বসে দাবার চাল দেখছেন রাউসিস। ছবি: সংগৃহীত
টয়লেটে বসে দাবার চাল দেখছেন রাউসিস। ছবি: সংগৃহীত

বেশ কিছু দিন ধরেই তাকে আতশি কাচের নিচে রেখেছিল বিশ্ব দাবার সর্বোচ্চ সংস্থা ফিদে। অবশেষে ফিদের সন্দেহটাই সত্যি হয়েছে। আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্টে খেলার সময় জালিয়াতি করতে গিয়ে ধরা পড়ে গেছেন বাংলাদেশ জাতীয় দাবা দলের কোচ সুপার গ্র্যান্ডমাস্টার ইগর রাউসিস। চেক প্রজাতন্ত্রের ৫৮ বছর বয়সী এই গ্র্যান্ডমাস্টারের ফিদে রেটিংয়ের গ্রাফটায় গত কয়েক বছর অবিশ্বাস্য রকম উন্নতি হচ্ছিল। বর্তমানে ২৬৮৬ রেটিংধারী রাউসিসের এমন পারফরম্যান্স নিয়ে সরাসরি প্রশ্ন তুলতে পারছিল না ফিদে। এ জন্য একটু কৌশলের আশ্রয় নিয়েছিল। আর সেই ফাঁদে পা দিয়ে এবার ধরা পড়ে গেলেন রাউসিস।

ঘটনাটা গতকালের। ফ্রান্সের স্ট্রাসবুর্গ ওপেনে খেলছিলেন রাউসিস। সাধারণত আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্টে খেলা চলার সময় মুঠোফোন ব্যবহার নিষিদ্ধ। কিন্তু তারপরও লুকিয়ে লুকিয়ে তিনি মুঠোফোন ব্যবহার করছিলেন এবং টয়লেটে গিয়ে দাবার চাল দেখে নিচ্ছিলেন। আর এতেই সন্দেহ হয় টুর্নামেন্টের আরবিটারের। আগে থেকেই টয়লেটে লুকানো ক্যামেরা বসানো ছিল। এরপর সেই ক্যামেরায় ধরা পড়ে রাউসিসের এমন অনৈতিক কাজের।

বাংলাদেশের দাবাড়ুদের অনুশীলন করাচ্ছেন রাউসিস। ঢাকায় গত বছর তোলা ছবি। ছবি: প্রথম আলো।
বাংলাদেশের দাবাড়ুদের অনুশীলন করাচ্ছেন রাউসিস। ঢাকায় গত বছর তোলা ছবি। ছবি: প্রথম আলো।

জালিয়াতি-কাণ্ডে রাউসিসকে হয়তো ভালো রকম শাস্তিই পেতে হতে পারে। অন্তত তিন বছরের জন্য নিষিদ্ধ হতে পারেন তিনি, কেড়ে নেওয়া হতে পারে গ্র্যান্ডমাস্টার খেতাব।

বাংলাদেশের দাবার সঙ্গে রাউসিসের সখ্যটা বেশ পুরোনো। ১৯৯৮ সালে প্রথম খেলতে এসেছিলেন ঘরোয়া প্রতিযোগিতায়। এরপর একাধিকবার এসেছিলেন লিগে অংশ নিতে। জাতীয় দলের কোচের দায়িত্বে ছিলেন ২০০০, ২০০২ ও ২০০৮ সালে। গত বছর জুলাইয়ে সর্বশেষ জাতীয় দলের কোচের দায়িত্ব নেন। তার অধীনেই গত বছর অক্টোবরে জর্জিয়ায় ৪৩তম দাবা অলিম্পিয়াডে অংশ নেয় বাংলাদেশ দল। আগামী সেপ্টেম্বরে রাশিয়ার খান্তি মানসিস্কে হবে দাবা বিশ্বকাপ। এই টুর্নামেন্ট সামনে রেখে বাংলাদেশ দলের অনুশীলন ও প্রস্তুতির জন্যও রাউসিসকে দায়িত্ব দেয় ফেডারেশন।

আগামী ২০ জুলাই ঢাকায় আসার কথা ছিল রাউসিসের। কিন্তু এমন জালিয়াতির ঘটনা শোনার পর তার সঙ্গে চুক্তিও বাতিল করেছে ফেডারেশন। দাবা ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ শাহাবুদ্দিন শামীম জানালেন, ‘রাউসিসের ঘটনাটা আমরাও শুনেছি। ওর এই কাজে আমরাও বেশ বিব্রত। ওর সঙ্গে আমরা আর চুক্তি নবায়ন করব না। এতে দেশের সুনাম প্রশ্নবিদ্ধ হবে।’

ইগর রাউসিস। ছবি: প্রথম আলো
ইগর রাউসিস। ছবি: প্রথম আলো

রাউসিসের এমন জোচ্চুরিতে ক্ষুব্ধ উপমহাদেশের প্রথম গ্র্যান্ডমাস্টার নিয়াজ মোরশেদ, ‘শুরু থেকেই কখনো রাউসিসকে আমার ভালো লোক বলে মনে হয়নি। ওর অধীনে তাই আমি কখনো খেলতে চাইতাম না। কোনো অনুশীলনও করেনি। ও যেটা করেছে সেটা খুবই অন্যায় করেছে।’