লর্ডসের ফাইনালে টস জিতলেই সর্বনাশ?

ইংল্যান্ড না নিউজিল্যান্ড, প্রথমবারের মতো ট্রফিটি উঠবে কোন দলের হাতে? ছবি: রয়টার্স
ইংল্যান্ড না নিউজিল্যান্ড, প্রথমবারের মতো ট্রফিটি উঠবে কোন দলের হাতে? ছবি: রয়টার্স
>এই নিয়ে পঞ্চমবারের মতো বিশ্বকাপের ফাইনাল অনুষ্ঠিত হচ্ছে লর্ডসে। আগের চারবারের ইতিহাস বলছে, লর্ডসের ফাইনালে টস জেতা মানেই বিপদ!

টসে জিতে ব্যাটিং নিলে জয় নিশ্চিত, অনেকটা এভাবেই চলেছে এবারের ক্রিকেট বিশ্বকাপ। বেশির ভাগ দলই টসে জিতে ব্যাটিং নিয়ে ম্যাচের ফল নিজেদের পক্ষে নিয়ে এসেছে। আর মঞ্চটা যদি হয় বিশ্বকাপ ফাইনাল, চাপমুক্ত ভাবে খেলার জন্য আগে ব্যাটিং নেওয়াটাই নিরাপদ উপায়। লর্ডসে আজ নিউজিল্যান্ডও হেঁটেছে সে পথেই। কিন্তু ইতিহাস কিন্তু নিউজিল্যান্ড সমর্থকদের কিছুটা ভয়ই দেখাবে। কিন্তু লর্ডসের ফাইনালে টস জেতা মানেই যে নিজের বিপদ নিজে ডেকে আনা!

খোলাসা করেই বলা যাক। আজকেরটি নিয়ে পঞ্চমবারের মতো বিশ্বকাপের ফাইনাল আয়োজন করছে লর্ডস। অন্য কোনো স্টেডিয়াম দুবারের বেশি ফাইনাল আয়োজন করার কৃতিত্ব দেখাতে পারেনি। লর্ডসের আগের চারটি ফাইনালেই দেখা গেছে আশ্চর্য এক ধারাবাহিকতা। চার ফাইনালেই টসজয়ী দল ম্যাচ শেষ করেছে পরাজিত দল হিসেবে!

১৯৭৫ সালে লর্ডসে অনুষ্ঠিত প্রথম বিশ্বকাপ ফাইনালে মুখোমুখি হয়েছিল অস্ট্রেলিয়া ও ওয়েস্ট ইন্ডিজ। টসে জিতে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে ব্যাটিংয়ে নামার আমন্ত্রণ জানায় অস্ট্রেলিয়া। অধিনায়ক ক্লাইভ লয়েডের সেঞ্চুরিতে ৬০ ওভারে ২৯১ তুলেছিল ওয়েস্ট ইন্ডিজ। রান তাড়া করতে গিয়ে ২৭৪ এর বেশি তুলতে পারেনি ইয়ান চ্যাপেলের অস্ট্রেলিয়া। ফল, টসজয়ী অস্ট্রেলিয়া ম্যাচ হারল ১৭ রানে।

চার বছর পর ১৯৭৯ সালে লর্ডসে আরেকটি ফাইনাল, এবার মুখোমুখি ওয়েস্ট ইন্ডিজ ও স্বাগতিক ইংল্যান্ড। আগের ফাইনালের অস্ট্রেলিয়ার মতো এবারও টসে জিতে ফিল্ডিংয়ের সিদ্ধান্ত নিল ইংল্যান্ড। এবার ভিভ রিচার্ডসের সেঞ্চুরিতে ৬০ ওভারে ২৮৬ তুলল ওয়েস্ট ইন্ডিজ। জবাবে মাত্র ১৯৪ রানেই গুটিয়ে গেল ইংলিশরা। টসজয়ী ইংল্যান্ড এবারও পরাজিত দলে, ম্যাচ হারল ৯২ রানের বড় ব্যবধানে।

১৯৮৩ তে টানা তৃতীয়বারের মতো ফাইনাল আয়োজনের দায়িত্ব পেল লর্ডস। আগের দুবারের মতো এবারও এক দল ওয়েস্ট ইন্ডিজ, অপর দল প্রথমবারের মতো ফাইনালে ওঠা ভারত। আগের দুই ফাইনাল থেকে শিক্ষা নেওয়ার দরকার বোধ করেনি ওয়েস্ট ইন্ডিজ, টসে জিতে ভারতকে ব্যাটিংয়ে পাঠায় তারা। দুর্দান্ত বোলিংয়ে ভারতকে মাত্র ১৮৩ রানে অলআউট করে দেওয়ার পর মনে হচ্ছিল, ইতিহাস বদলাতে যাচ্ছে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। তবে দিন শেষে ইতিহাসের ধারাবাহিকতাই বজায় থাকল, ওয়েস্ট ইন্ডিজকে ১৪০ রানে থামিয়ে দিয়ে ভারত প্রথমবারের মতো বিশ্বকাপ জিতল ৪৩ রানে। আগের দুইবারের মতো এবারও শিরোপা খোয়াল টসে জেতা দল।

এরপর আরেকটি ফাইনাল আয়োজনের জন্য লর্ডসকে অপেক্ষা করতে হলো ১৬ বছর। ১৯৯৯ তে লর্ডসে চতুর্থ ফাইনালে মুখোমুখি অস্ট্রেলিয়া ও পাকিস্তান। আগের তিন ফাইনালে টসে জিতে প্রতিবারই বোলিং নিয়ে হারতে হয়েছিল দলগুলোকে। পাকিস্তান তাই ভাগ্য বদলের আশায় এবার টসে জিতে নিল ব্যাটিং। কিন্তু লাভ হলো না কিছুই, দিন শেষে সেই টসে জেতা দলই হারল ফাইনাল! শেন ওয়ার্নের স্পিন ঘূর্ণিতে মাত্র ১৩২ রানে গুটিয়ে গেল ওয়াসিম আকরামের পাকিস্তান। ২০ ওভার হাতে রেখেই ৮ উইকেটে জিতে গেল স্টিভ ওয়াহর অস্ট্রেলিয়া। যার মানে, লর্ডসে টসজয়ী দল ফাইনাল হেরেছে চারবারই!

লর্ডসে পঞ্চম ফাইনালে টসে জিতেছে নিউজিল্যান্ড। তাহলে কি গতবারের মতো এবারও রানার্সআপ হয়েই সন্তুষ্ট থাকতে হবে নিউজিল্যান্ডকে? না কি লর্ডসের ইতিহাসের ধারাবাহিকতায় ছেদ টানতে পারবে কেন উইলিয়ামসনের দল?