বিশ্বকাপ জিততে এখন 'ভারত' হতে হবে নিউজিল্যান্ডকে

নিউজিল্যান্ডের রানটা নাগালের বাইরে যেতে দেননি ইংল্যান্ডের বোলাররা। ছবি: রয়টার্স
নিউজিল্যান্ডের রানটা নাগালের বাইরে যেতে দেননি ইংল্যান্ডের বোলাররা। ছবি: রয়টার্স
>লর্ডসের ফাইনালে টস জিতে ব্যাটিংয়ে নেমে ৮ উইকেটে ২৪১ রান তুলেছে নিউজিল্যান্ড। ইংল্যান্ডের হয়ে ৩টি করে উইকেট নিয়েছেন লিয়াম প্লাঙ্কেট ও ক্রিস ওকস। নিউজিল্যান্ডের হয়ে সর্বোচ্চ রান হেনরি নিকোলসের ৫৫।

১৯৮৩ বিশ্বকাপে ১৮৩ রান করেও শক্তিশালী ওয়েস্ট ইন্ডিজকে হারিয়ে প্রথমবারের মতো বিশ্বকাপ জিতেছিল ভারত। লর্ডসে আজ শিরোপা জিততে হলে কপিল দেবের ভারতকেই এখন অনুপ্রেরণা মেনে ১৯৮৩ সালেই ফিরতে হবে নিউজিল্যান্ডকে। ফাইনালে আগে ব্যাটিং করে ২৫০ এর কম লক্ষ্য দিয়ে জেতার নজির যে ওই একটিই! ৮ উইকেটে ২৪১ রানেই থেমে যাওয়া নিউজিল্যান্ডকে জিততে হলে তাই ওই ঘটনার পুনরাবৃত্তিই ঘটাতে হবে আজ।

নিউজিল্যান্ডের রানটা কিন্তু আরও বড় হতেই পারত। মারাইস এরাসমাসের ওই এক সিদ্ধান্তেই কি নিউজিল্যান্ডের রানটা ২৪১ এ আটকে গেল? সেমিফাইনালের কথা মাথায় রাখলে তেমনটি মনে হওয়া কিন্তু মোটেও অস্বাভাবিক নয়।

ভারতের বিপক্ষে সেমিফাইনালে দেখে-শুনে খেলে ৯০ বলে ৭৪ রানের ইনিংস খেলেছিলেন রস টেলর। শেষ পর্যন্ত ১৮ রানের জয়ে টেলরের ধীর-স্থির, কিন্তু কার্যকরী ইনিংসটিই হয়ে উঠেছিল মহা গুরুত্বপূর্ণ। আজ ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ফাইনালেও আস্তে ধীরে শুরু করেছিলেন টেলর। কিন্তু ৩৪ তম ওভারে এরাসমাসের ওই ভুল সিদ্ধান্তের বেশ বড় খেসারতই দিতে হলো নিউজিল্যান্ডকে। টেলর শেষ পর্যন্ত থাকতে পারলে নিউজিল্যান্ডের রানটা আরেকটু বড় তো হতেই পারত!

মার্ক উডের বলটা খেলতে কিছুটা সামনে এগিয়ে এসেছিলেন টেলর। ব্যাটে-বলে হয়নি, বল সরাসরি লাগে প্যাডে। জোরালো আবেদন করেন ইংলিশরা, আবেদনের চাপে পড়েই কি না, হুট করে আঙুল তুলে দিলেন দক্ষিণ আফ্রিকান আম্পায়ার এরাসমাস। রিপ্লেতে দেখা গেছে, বল স্টাম্পের বেশ অনেকটা ওপর দিয়েই যাচ্ছিল। মার্টিন গাপটিল আগেই রিভিউ নষ্ট করে ফেলেছিলেন, টেলরের তাই নতমস্তকে ফিরে যাওয়া ছাড়া বিকল্প ছিল না কোনো।

টেলরের মতো অভিজ্ঞ ব্যাটসম্যানকে ভুল সিদ্ধান্তের কারণে হারানোর ধাক্কা শেষ পর্যন্ত কাটিয়ে উঠতে পারেনি নিউজিল্যান্ড। শেষ দিকে ঝড় তুলতে পারেননি জিমি নিশাম-কলিন ডি গ্র্যান্ডহোমরা। পুরো টুর্নামেন্টে ফর্মের বাইরে থাকা টম ল্যাথাম সাধ্যমত চেষ্টা করেছিলেন, কিন্তু আড়াই শ পার করাতে পারেননি দলকে।

বড় সংগ্রহের জন্য কেন উইলিয়ামসনের দিকে তাকিয়ে ছিল নিউজিল্যান্ড, তবে কিউই ইনিংসে আজ সবচেয়ে বেশি অবদান হেনরি নিকোলসের। কলিন মানরোর বাজে ফর্মের কারণে সুযোগ পাওয়া নিকোলসও নিজের নামের প্রতি সুবিচার করতে পারছিলেন না। অবশেষে ফাইনালে এসেই পেয়েছেন টুর্নামেন্টে নিজের প্রথম ফিফটি। তবে ইনিংসটা বড় করার দরকার ছিল নিকোলসের, সেটিই পারেননি তিনি। ৫৫ রান করে প্লাঙ্কেটের বলে প্লেড অন হয়ে ফিরেছেন।

কেন মঈন আলীকে বসিয়ে প্লাঙ্কেটকে খেলাচ্ছে ইংল্যান্ড, তার প্রমাণ আরও একবার দিয়েছেন ডানহাতি এ পেসার। ২০১৫ বিশ্বকাপের পর থেকে মিডল ওভারে (১১-৪০ ওভার) সবচেয়ে বেশি উইকেট পাওয়া প্লাঙ্কেটই আজ নীরব ঘাতক হিসেবে কিউইদের তিন বড় ব্যাটসম্যানকে ফিরিয়েছেন । নিকোলসের পাশাপাশি কিউইদের ব্যাটিংয়ের সবচেয়ে বড় স্তম্ভ উইলিয়ামসনের ঘাতকও তিনি। ১০ ওভারের স্পেলে মাত্র ৪২ রান খরচায় তিনটি উইকেট তুলে নিয়েছেন এ পেসার। উইলিয়ামসনকেও অবশ্য শুরুতে আউট দেননি আম্পায়ার কুমার ধর্মসেনা, রিভিউ নিয়েই তাঁকে ফেরাতে হয়েছে ইংল্যান্ডকে।

উইকেটের গুরুত্ব বিবেচনায় ইংলিশদের সবচেয়ে সফল বোলার প্লাঙ্কেট, তবে আজ সব বোলারই দুর্দান্ত বল করেছেন। গত কয়েক ম্যাচেই দুর্দান্ত ক্রিস ওকস আজও পেয়েছেন ৩ উইকেট, গতি আর বাউন্স দিয়ে ব্যাটসম্যানদের ভুগিয়েছেন জফরা আর্চারও। মার্ক উডও ১৫০ কিলোমিটারের বেশি গতিতে বল করেছেন নিয়মিত।

লক্ষ্যটা খুব বেশি বড় না হলেও ফাইনালে রান তাড়া করার চাপ ও নিউজিল্যান্ডের বোলিং মিলিয়ে ভালোই ভুগতে পারে ইংল্যান্ড। তবে ইংলিশদের অনুপ্রেরণা জোগাতে পারে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে সেমিফাইনালই। মিচেল স্টার্ক-প্যাট কামিন্সদের গতি সামলেই ৮ উইকেটের বিধ্বংসী জয় তুলে নিয়েছিল তারা।

লর্ডসে হওয়া আগের চার ফাইনালের প্রতিটিতেই হারতে হয়েছে টসজয়ী দলকে। নিউজিল্যান্ড কি পারবে ইতিহাস বদলাতে? না কি বেশির ভাগ ক্রিকেটবোদ্ধার ভবিষ্যদ্বাণী সত্যি প্রমাণ করে প্রথমবারের মতো ক্রিকেট বিশ্বকাপ শিরোপা জিততে যাচ্ছে ইংল্যান্ড?