এমন ফাইনাল আগে দেখেনি বিশ্বকাপ

শিরোপা জিততে হবে—এমন ভাবনায় চাপটা খুব জেঁকে বসে বলে ফাইনালটা নাকি ঠিক জমে না! বেশির ভাগ সময়ই ফাইনাল হয় ম্যাড়ম্যাড়ে, একপেশে। কিন্তু আজ লর্ডসে এসব মিথ্যে করে দিল ইংল্যান্ড-নিউজিল্যান্ড। শিরোপা জিততে যে দুর্দান্ত লড়াইটা করল দুই দল, নিশ্চিত বিশ্বকাপ ক্রিকেট ইতিহাসে এমন ফাইনাল আগে কখনো দেখা যায়নি! আক্রমণ, পাল্টা-আক্রমণ। ক্লাইম্যাক্স-অ্যান্টি ক্লাইম্যাক্স। টাইয়ের ওপর টাই! চড়াই-উতরাই, নানা বাঁক পেরিয়ে তবেই জানা গেল কার হাতে উঠতে যাচ্ছে ২০১৯ বিশ্বকাপের শিরোপা।

পুরো টুর্নামেন্টে যেভাবে ব্যাটিং করেছে, সেটিরই ধারাবাহিকতা রেখে নিউজিল্যান্ড লর্ডসের ফাইনালেও গড়েছে মাঝারি স্কোর গড়তে। ২৪২ রানই পর্বতসমান হয়ে গেল ইংলিশদের সামনে। ৮৬ রানে ৪ উইকেট নেই। সেখান থেকে বেন স্টোকস আর জস বাটলার কী দুর্দান্ত এক জুটি গড়লেন। মোক্ষম সময়ে সে জুটিও ভাঙল নিউজিল্যান্ড। এরপর গ্ল্যাডিয়টরের মতো লড়ে গেলেন স্টোকস। স্টোকসের হার না–মানা ৮৪ রানের ইনিংসটাও বৃথা যায় যদি টুর্নামেন্টে চোখধাঁধানো ফিল্ডিং করা মার্টিন গাপটিল ওই সর্বনাশা ওভার থ্রোটা না করেন! ২ রানের জায়গায় আরও ৪ রান ফ্রি পেয়ে ইংল্যান্ড শিরোপার কাছে অনেকটা চলে যায়। পেছন থেকে আবার টেনে ধরে নিউজিল্যান্ড। নির্ধারিত ৫০ ওভারে ম্যাচ টাই!

স্নায়ুক্ষয়ী সব মুহূর্ত পেরিয়ে ম্যাচ চলে গেল সুপার ওভারে। সুপার ওভারেও কী টান টান উত্তেজনা! ইংল্যান্ড করল ১৫ রান। নিউজিল্যান্ডও করল ঠিক ১৫! সুপার ওভারেও ম্যাচ টাই। তখন দেখা হলো, ম্যাচে বাউন্ডারি বেশি কাদের। ইংল্যান্ড তাতেই চ্যাম্পিয়ন! কিউইদের চেয়ে বাউন্ডারি যে বেশি তাদের! মুগ্ধ করা ক্রিকেটীয় দক্ষতা, স্নায়ুর সঙ্গে লড়াই কিংবা ইংল্যান্ডের ভাগ্য বা নিউজিল্যান্ডের দুর্ভাগ্য যেটাই হোক, এমন শ্বাসরুদ্ধকর ফাইনাল, এমন টান টান উত্তেজনায় ভরা ফাইনাল বিশ্বকাপের ৪৪ বছরের ইতিহাসেই দেখা যায়নি।

১৯৭৫ বিশ্বকাপের ফাইনালে ওয়েস্ট ইন্ডিজ অস্ট্রেলিয়াকে হারিয়েছিল ১৭ রানে। ১৯৭৯ বিশ্বকাপে ইংল্যান্ডকে ৯২ রানে হারিয়ে শিরোপা ধরে রেখেছিল ক্যারিবীয়রা। ১৯৮৩ বিশ্বকাপে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে ৪৩ রানে হারিয়ে ভারত জিতেছিল তাদের প্রথম বিশ্বকাপ। জমেছিল ১৯৮৭ বিশ্বকাপের ফাইনাল—ইংলিশদের ৭ রানে হারিয়ে প্রথমবারের মতো বিশ্বকাপ জিতেছিল অস্ট্রেলিয়া।

১৯৯২ বিশ্বকাপে পাকিস্তান-ইংল্যান্ডও একেবারে ম্যাড়ম্যাড়ে হয়নি, ইমরান খানরা জিতেছিলেন ২২ রানে। ১৯৯৬ বিশ্বকাপে অস্ট্রেলিয়াকে ৭ উইকেটের বড় ব্যবধানে প্রথমবারের মতো বিশ্বকাপ জিতেছিল অর্জুনা রানাতুঙ্গার শ্রীলঙ্কা। ১৯৯৯, ২০০৩, ২০০৭—অস্ট্রেলিয়া যে হ্যাটট্রিক শিরোপা জিতল, প্রতিটিতেই প্রতিপক্ষকে গুঁড়িয়ে। ২০১১ বিশ্বকাপের ফাইনালে উঠেছিল দুই উপমহাদেশের দল ভারত-শ্রীলঙ্কা। মহেন্দ্র সিং ধোনির দল লঙ্কানদের ৬ উইকেটে হারিয়ে ২৮ বছর পর আবার শিরোপা জেতে। গত বিশ্বকাপের ফাইনালটাও জমেনি, এই নিউজিল্যান্ডকেই ৭ উইকেটে হারিয়ে পঞ্চমবারের মতো চ্যাম্পিয়ন হয় অস্ট্রেলিয়া।

এবারই প্রথম সুপার ওভারের নিয়ম চালু হয়েছে বিশ্বকাপের ফাইনালে। নিয়মটা এবারই কাজে লেগে গেল। আর সেখানেও কী নাটক!

৪৪ বছরের বিশ্বকাপ ইতিহাসে প্রথমবারের মতো ফাইনালের নিষ্পত্তি হলো এমন অদ্ভুত উপায়ে। পুরো ম্যাচ এমনই জমজমাট, কখনো বলার উপায় ছিল না, এই দল চ্যাম্পিয়ন হবে! তবে হ্যাঁ, তরঙ্গের মতো সমান সম্ভাবনা নিয়ে ম্যাচটা শুধু দুলেছে। ওয়ানডে ক্রিকেটের আবেদন বাঁচিয়ে রাখতে নখ কামড়ানো এমন উত্তেজনায় ভরা একটা ফাইনাল সত্যি খুব দরকার ছিল।

একনজরে ফাইনাল

সাল

জয়ী

ফল

রানার্স আপ

ভেন্যু

১৯৭৫

উইন্ডিজ

১৭ রান

অস্ট্রেলিয়া

লর্ডস

১৯৭৯

উইন্ডিজ

৯২ রান

ইংল্যান্ড

লর্ডস

১৯৮৩

ভারত

৪৩ রান

উইন্ডিজ

লর্ডস

১৯৮৭

অস্ট্রেলিয়া

৭ রান

ইংল্যান্ড

ইডেন

১৯৯২

পাকিস্তান

২২ রান

ইংল্যান্ড

এমসিজি

১৯৯৬

শ্রীলঙ্কা

৭ উইকেট

অস্ট্রেলিয়া

লাহোর

১৯৯৯

অস্ট্রেলিয়া

৮ উইকেট

পাকিস্তান

লর্ডস

২০০৩

অস্ট্রেলিয়া

১২৫ রান

ভারত

ওয়ান্ডারার্স

২০০৭

অস্ট্রেলিয়া

৫৩ রান

শ্রীলঙ্কা

কেনসিংটন ওভাল

২০১১

ভারত

৬ উইকেট

শ্রীলঙ্কা

ওয়াংখেড়ে

২০১৫

অস্ট্রেলিয়া

৭ উইকেট

নিউজিল্যান্ড

এমসিজি

২০১৯

ইংল্যান্ড

সুপার ওভার

নিউজিল্যান্ড

লর্ডস