ক্রিকেটের জন্মদাতাদের হাতে অবশেষে ক্রিকেটের মুকুট

চ্যাম্পিয়নের মুকুট হাতে ইংল্যান্ড।
চ্যাম্পিয়নের মুকুট হাতে ইংল্যান্ড।

যাদের ক্রিকেট ঐতিহ্য এত প্রাচীন, এত সমৃদ্ধ, যাদের ক্রিকেট কাঠামো এত শক্তিশালী, সেই ইংল্যান্ড কেন বিশ্বকাপ শিরোপা জেতে না? শুধু শক্তিশালী ক্রিকেট অবকাঠামোই নয়, শুধু সমৃদ্ধ ক্রিকেট–ঐতিহ্যই নয়, খেলাটার আবিষ্কারকও তো ইংলিশরাই। যে খেলাটা তারা জন্ম দিল, পুরো বিশ্বে ছড়িয়ে দিল, সেটির শিরোপা তাদের পেতে কেন এত অপেক্ষা?

অস্ট্রেলিয়ার ক্রিকেট অবকাঠামো কিংবা ঐতিহ্য ইংলিশদের মতোই। অস্ট্রেলিয়ানরা পাঁচটি ক্রিকেট বিশ্বকাপ শিরোপা জিতে নিজেদের নামের সুবিচার অনেকবারই করেছে। ইংল্যান্ড যেন কোথায় বারবার থমকে যাচ্ছিল। ১৯৭৯, ১৯৮৭, ১৯৯২—তিন বিশ্বকাপের ফাইনালে ইংলিশদের স্বপ্ন কেড়ে নিয়েছিল ওয়েস্ট ইন্ডিজ, অস্ট্রেলিয়া আর পাকিস্তান। এতবার ফাইনাল খেলে বিশ্বকাপ না-জেতার দুঃখ আর কোনো দলেরই ছিল না।

গত বিশ্বকাপে বাংলাদেশের কাছে হেরে বিদায় নেওয়ার পর নতুন করে সব ঢেলে সাজিয়েছিল ইংল্যান্ড। ২০১৯, ঘরের মাঠে বিশ্বকাপ। সুযোগটা আর হাতছাড়া করা যাবে না—এ লক্ষ্যেই বিরাট এক ‘প্রকল্প’ই চার বছর আগ থেকেই হাতে নিয়েছিল ইংল্যান্ড ক্রিকেট বোর্ড। ২০১৫ বিশ্বকাপের ব্যর্থতা থেকে গা ঝাড়া দিয়ে উঠেছিল ইংলিশরা।

পর্যাপ্ত সুযোগ দিয়ে বেন স্টোকস, জস বাটলার, এউইন মরগান, জেসন রয়, জো রুট, জনি বেয়ারস্টোর দুর্দান্ত সব ব্যাটসম্যানের সমন্বয়ে গড়ে তোলা হয়েছে ভীষণ শক্তিশালী এক ব্যাটিং অর্ডরার। সঙ্গে দুর্দান্ত বোলিং আক্রমণ। আর নিখুঁত ফিল্ডিং তো আছেই। চার বছর ঘরের মাঠে ইংল্যান্ড হাই স্কোরিং উইকেটে খেলে তৈরি করেছে মুক্ত হাতে স্ট্রোক খেলার অভ্যাস। বোলাররা নিজেদের তৈরি করেছেন, কীভাবে হাই স্কোর ডিফেন্ড করা যায়। স্নায়ুর সঙ্গে লড়ে কীভাবে ম্যাচ নিজেদের মুঠোয় নিতে হয়—গত চার বছরের সব চেষ্টা অবশেষে সফল হয়েছে ইংল্যান্ডের।

ইংল্যান্ডের প্রতিটি মাঠেই কতশত মুগ্ধ করা গল্প ছড়িয়ে। কত কিংবদন্তির জন্ম যে দেশে, উদ্ভাবনী চিন্তায় যে দেশ ক্রিকেটকে প্রতিনিয়ত উপহার দিয়েছে নতুন নতুন চমক—তাদের একটা বিশ্বকাপ আসলেই পাওনা হয়ে গিয়েছিল। আজ লর্ডসে ইংল্যান্ডের হাতে শিরোপা তুলে দিয়ে ক্রিকেট যেন সেই দায় মোচনই করল। আর সেই শিরোপাও এল এক আইরিশের হাত ধরে! যে আইরিশদের সঙ্গে তাদের এত রেষারেষি, অবশেষে সেই আয়ারল্যান্ডে জন্ম নেওয়া মরগানের হাতে উঠল ইংল্যান্ডের প্রথম বিশ্বকাপ ট্রফি।

একটা ফাঁক অবশ্য আছে। এর আগে ইংল্যান্ড টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ অবশ্য জিতেছিল, পল কলিংউডের নেতৃত্বে। কিন্তু খোদ আইসিসি সেটিকে বিশ্বকাপ বলে না। বলে ওয়ার্ল্ড টি-টোয়েন্টি। সেই ছোট শিরোপা দিয়ে বড় গর্ব কি করা যায়! অবশেষে গর্ব করার উপলক্ষ তারা পেল। ক্রিকেটের মহারাজার মুকুট পেল ক্রিকেটের মহারাজারা।