ম্যাচ ঘুরিয়ে দেওয়া সেই ৬ রান নিয়ে প্রশ্ন

সেই মুহূর্ত। স্টোকসের ব্যাটে লেগে বল পেরিয়ে গেছে বাউন্ডারিসীমানা। দুহাত উঁচু করে স্টোকস ক্ষমা প্রার্থনার ভঙ্গি করছেন। কিউই উইকেটরক্ষক টম লাথামের মাথায় হাত। ছবি: রয়টার্স
সেই মুহূর্ত। স্টোকসের ব্যাটে লেগে বল পেরিয়ে গেছে বাউন্ডারিসীমানা। দুহাত উঁচু করে স্টোকস ক্ষমা প্রার্থনার ভঙ্গি করছেন। কিউই উইকেটরক্ষক টম লাথামের মাথায় হাত। ছবি: রয়টার্স
>

ইংল্যান্ডের ইনিংসে জয়ের জন্য শেষ ৩ বলে দরকার ছিল ৯ রান। এমন পরিস্থিতিতে মার্টিন গাপটিলের থ্রো বেন স্টোকসের ব্যাটে লেগে বাউন্ডারিসীমানা টপকে যায়। আর ব্যাটসম্যানরা দৌড়ে ২ রান নেওয়ায় আম্পায়ার মোট ৬ রান যোগ করতে বলেন স্কোরবোর্ডে। এটা নিয়েই শুরু হয়েছে বিতর্ক

দম আটকানো ফাইনাল? বিশ্বকাপ ক্রিকেটের ইতিহাসে সেরা ফাইনাল? যা খুশি বলতে পারেন, খেলা শেষে কিন্তু আসল জয়ী ক্রিকেট। এমন রোমাঞ্চকর ম্যাচ নিঃসন্দেহে ক্রিকেটের বাজার আরও সমৃদ্ধ করবে। তাও আবার বিশ্বকাপ ফাইনালের মতো মঞ্চে এমন ম্যাচ, যেখানে রান ব্যবধান কিংবা উইকেটে শিরোপার নিষ্পত্তি হয়নি। নির্ধারিত ১০০ ওভার শেষেও দুই দল সমানে সমান। এমনকি সুপার ওভার শেষেও না! আহা, কী এক মহাকাব্যিক ফাইনাল!

সুপার ওভারেও ম্যাচ টাই হওয়ায় শিরোপার নিষ্পত্তি হয়েছে বাউন্ডারিসংখ্যার ওপর ভিত্তি করে, যেখানে এগিয়ে থেকে শিরোপা জিতেছে ইংল্যান্ড। আর হৃদয় জিতেছে নিউজিল্যান্ড। তবে ভরপুর উত্তেজনার এ ম্যাচেও জন্ম নিয়েছে বিতর্ক আর সেটি ইংল্যান্ডের ইনিংসে শেষ ওভারে, ১ রান নিয়ে।

শেষ ৩ বলে ৯ রান দরকার ছিল ইংল্যান্ডের। ট্রেন্ট বোল্টের করা চতুর্থ বলটি ডিপ মিডউইকেটে পাঠিয়ে ২ রান নিতে চেয়েছিলেন বেন স্টোকস। মার্টিন গাপটিল বেশ ভালো থ্রো করেছিলেন। স্টাম্পে সরাসরি লাগলে হয়তো রানআউট হতে পারত। সে শঙ্কাতেই পড়িমরি করে ডাইভ দিয়েছিলেন স্টোকস। বল তাঁর ব্যাটে লেগে থার্ড ম্যান দিয়ে পার হয় সীমানা! পুরো ঘটনা এবং স্টোকসের ক্ষমা প্রার্থনাসুলভ চাহনি দেখে তখনই বোঝা গেছে, এ বাউন্ডারি হওয়ায় তাঁর ইচ্ছাকৃত কোনো হাত ছিল না। নিতান্ত অনিচ্ছাকৃতভাবেই ঘটে গেছে।

সে যা–ই হোক, মাঠের সহকর্মী আম্পায়ারের সঙ্গে আলোচনা করে স্কোরবোর্ডে ৬ রান (দৌড়ে ২ রান ও ওভারথ্রোতে ৪ রান) যোগ করার সিগন্যাল দেন আরেক আম্পায়ার কুমার ধর্মসেনা। এতে ম্যাচে ফিরে আসার পথ পেয়ে যায় ইংল্যান্ড। ঘুরে যায় ম্যাচের মোড়। ৩ বলে ৯ রান থেকে সমীকরণ নেমে আসে ২ বলে ৩ রানে। এরপর বাকিটা ইতিহাস।

কিন্তু আম্পায়ারের দেওয়া ৬ রান নিয়ে চলছে বিতর্ক। সংবাদমাধ্যম থেকে বিশ্লেষকদের প্রশ্ন, ওটা ৬ রান না, ৫ রান হবে? আর এ প্রশ্ন তোলার সুযোগ করে দিয়েছে ক্রিকেটেরই ‘ফিল্ডারদের ওভারথ্রো কিংবা ইচ্ছাকৃত কাজ’ নিয়ে আইনের ১৯.৮ অনুচ্ছেদ। সেখানে বলা হয়েছে, ‘ফিল্ডারের ওভারথ্রো কিংবা ইচ্ছাকৃতভাবে করা কোনো কিছু থেকে বাউন্ডারি হলে...বাউন্ডারি যোগ হবে এবং ব্যাটসম্যানরা একসঙ্গে যত রান নিয়েছেন সেটাও, যদি থ্রোয়ের সময় তাঁরা ইতিমধ্যেই একে অপরকে পার হয়ে যান।’

আইনের শেষের কথাটি নিয়েই প্যাঁচ লেগেছে। ওই ঘটনার ভিডিও রিপ্লে দেখে পরিষ্কার বোঝা গেছে, গাপটিল থ্রো করার সময় ইংল্যান্ডের দুই ব্যাটসম্যান বেন স্টোকস ও আদিল রশিদ দ্বিতীয় রান নেওয়ার জন্য একে অপরকে ক্রস (পার হওয়া) করেননি। অর্থাৎ গাপটিল যখন থ্রোয়ের জন্য বল তুলছিলেন, স্টোকস ননস্ট্রাইক প্রান্তে আর আদিল রশিদ স্ট্রাইকারের প্রান্তে ছিলেন। অর্থাৎ দৌড়ে ২ রান নয়, ১ রান হবে আর সঙ্গে বাউন্ডারি—মোট ৫ রান। আইনটির অস্পষ্টতার কারণেই এ প্রশ্ন উঠেছে। কারণ, ফিল্ডারদের থ্রো নিয়ে যেমন পরিষ্কার করে কিছু বলা হয়নি, তেমনি গোটা প্রক্রিয়ায় ব্যাটসম্যানদের ভূমিকা নিয়েও স্পষ্ট করে কিছু বলা হয়নি। গাপটিলের থ্রো কিন্তু উইকেটরক্ষক বরাবরই ছিল। ব্যাটসম্যানের ব্যাটে লাগার কারণে তা ওভারথ্রো হয়েছে।

নিউজিল্যান্ড অধিনায়ক কেন উইলিয়ামসন ম্যাচ শেষে এ ঘটনা নিয়ে বলেছেন, ‘এটা লজ্জার যে বল স্টোকসের ব্যাটে লেগেছে। তবে আমি আশা করি, এ ধরনের মুহূর্তে যেন এমন কিছু আর না ঘটে।’ সে যা–ই হোক, গাপটিলের ওভারথ্রোয়ে ইংল্যান্ড ৫ রান পেলে ম্যাচের ফল হয়তো অন্য রকমও হতে পারত।