বেশি বাউন্ডারি মেরে জয়, মেনে নিতে পারছেন না অনেকেই

>
সুপার ওভারের শেষ বলে রানআউট হওয়ার কান্নায় ভেঙে পড়েন মার্টিন গাপটিল। তাঁকে সান্ত্বনা দিচ্ছেন সতীর্থরা ও ইংল্যান্ড দলের ক্রিস ওকস। ছবি: এএফপি
সুপার ওভারের শেষ বলে রানআউট হওয়ার কান্নায় ভেঙে পড়েন মার্টিন গাপটিল। তাঁকে সান্ত্বনা দিচ্ছেন সতীর্থরা ও ইংল্যান্ড দলের ক্রিস ওকস। ছবি: এএফপি

বিশ্বকাপ ক্রিকেটে এমন ফাইনাল আগে দেখা যায়নি। দুই দলের নির্ধারিত ১০০ ওভারে ম্যাচ টাই হওয়ার পর সুপার ওভারেও টাই! বাউন্ডারিসংখ্যার ওপর ভিত্তি করে নির্ধারিত হয়েছে বিজয়ী দল। তবে এ নিয়মে আপত্তি তুলেছেন ক্রিকেটার থেকে সংবাদকর্মীরা

এমন ফাইনালই তো চাই। শেষ বলটি হওয়ার পর মনে হবে, কোনো দলই তো হারেনি! খেলাটাই আসল বিজয়ী। কাল বিশ্বকাপ ক্রিকেটের ফাইনাল শেষে ঠিক এমনটাই মনে হয়েছে। লো-স্কোরিং ম্যাচ কী পরিমাণ উত্তেজনার তৈরি করতে পারে, তার প্রমাণ গতকালের ফাইনাল। বিশ্বকাপ ক্রিকেট ফাইনালের ইতিহাসে নিঃসন্দেহে সেরা ম্যাচ। অন্য সব খেলাধুলা বিবেচনায় অন্যতম সেরাও। তবে কালকের ফাইনালে যে মানদণ্ডের ওপর ভিত্তি করে শিরোপার নিষ্পত্তি হয়েছে, তা অনেকেই মেনে নিতে পারেননি। শুধু ক্রিকেটপ্রেমীরা নন, ক্রিকেটার ও সংবাদকর্মীদের অনেকেই বাউন্ডারি-রুলসের সঙ্গে একমত নন।

দুই দলের জন্য নির্ধারিত মোট ১০০ ওভার শেষে ম্যাচ টাই। খেলা তাই গড়ায় সুপার ওভারে। সেখানেও শেষ বলটির পর ম্যাচ টাই! কিন্তু টাই হলেও জয়ের আনন্দ নিয়ে ছুটেছেন জস বাটলার। বেয়ারস্টো আর জো রুট মেতেছেন জয়োল্লাসে। লর্ডসের গ্যালারিতে ইংলিশ সমর্থকেরাও নিজেদের ঐতিহ্য গাম্ভীর্য ভুলে ভেসেছেন বিশ্বকাপজয়ের আনন্দে। আসলে সুপার ওভারেও দুই দলের স্কোর সমান হলেও খুব অদ্ভুত একটি নিয়মের মারপ্যাঁচে পড়ে হার নিশ্চিত হয়ে যায় নিউজিল্যান্ডের।

এখানে একটি ব্যাপার সবার মনে বেশ ভালোই বিঁধেছে। শেন ওয়ার্নের মতে, ফল নয়, খেলা বিবেচনায় কালকের ফাইনালে ‘আসল জয়ী’ দল কিন্তু নিউজিল্যান্ড। ওয়ানডের সেরা দল ইংল্যান্ডের বিপক্ষে আড়াই শর কম স্কোর করে ম্যাচ শেষ পর্যন্ত নিয়ে গিয়েছিল কিউইরা। যে ইংল্যান্ড সেমিতে অস্ট্রেলিয়ার ২২৩ রানকে পাত্তাই দেয়নি, সে দলটারই মানসিক শক্তির চূড়ান্ত পরীক্ষা নিয়ে ছেড়েছে নিউজিল্যান্ড। বেন স্টোকসের ব্যাটে লেগে ওই ৬ রান না হলে কে জানে কিউইরা জিততেও পারত! এমনকি সুপার ওভারেও জয়ের সম্ভাবনা জাগিয়ে তুলেছিল কেন উইলিয়ামসনের দল। এমন দল ম্যাচের একদম শেষে গিয়ে যদি বেশি বাউন্ডারি মারার নিয়মের কাছে হারে, তাহলে প্রশ্ন উঠবেই।

সেটি সুপার ওভারের নিয়মের জন্য। সুপার ওভারে যদি দুই দল সমান রান করে, তখন বাউন্ডারির হিসাব চলে আসে। মূল ম্যাচ ও সুপার ওভার মিলিয়ে যে দল সবচেয়ে বেশি বাউন্ডারি মারবে, তারাই জিতবে সুপার ওভার। আর এ হিসাবে ইংল্যান্ড মেরেছে ২৪ বাউন্ডারি, নিউজিল্যান্ড ১৬টি। অর্থাৎ ইংল্যান্ডই জয়ী। অনেকেই বলছেন, এমন ম্যাচে আসলে কেউ হারেনি। অদ্ভুত বাউন্ডারি নিয়মে শিরোপা নির্দিষ্ট কোনো দলের হাতে তুলে না দিয়ে দুই দলকে যুগ্ম চ্যাম্পিয়ন ঘোষণা করা উচিত ছিল।

অস্ট্রেলিয়ার সাবেক পেসার ব্রেট লি যেমন টুইট করেন, ‘ইংল্যান্ডকে অভিনন্দন। দুর্ভাগ্যের জন্য নিউজিল্যান্ডকে সমবেদনা। এটা বলতেই হবে বিজয়ী বেছে নিতে এটা খুব বাজে একটা পদ্ধতি। এ নিয়ম পাল্টাতেই হবে।’ ক্রিকেট পরিসংখ্যানবিদ ও সংবাদকর্মী রজনীশ গুপ্ত টুইট করেন, ‘সুপার ওভারে টাই হলে বাউন্ডারিসংখ্যার ওপর ভিত্তি করে জয়ী নির্ধারণ কখনো পছন্দ হয়নি। যুগ্ম চ্যাম্পিয়ন করলে এটা বেশি ভালো হতো। এ ম্যাচে শেষ পর্যন্ত কেউ হারেনি।’

খ্যাতনামা ক্রিকেট সংবাদকর্মী ব্রেইডন কভারডেলের টুইট, ‘বিশ্বকাপের নিষ্পত্তি হলো তাহলে অযৌক্তিক নিয়মের ওপর ভিত্তি করে। উইকেটের থেকে তাহলে বাউন্ডারি বেশি গুরুত্বপূর্ণ। এরপর আমাকে আর কখনো বলবেন না, এটা ব্যাটসম্যানদের খেলা নয়।’ অস্ট্রেলিয়ার সাবেক ক্রিকেটার ডিন জোন্স টুইট করেন, ‘ডি/এল মেথড রান ও উইকেট হারানোর ওপর ভিত্তি করে বানানো। কিন্তু এখনো চূড়ান্ত ফল নির্ধারিত হলো বাউন্ডারিসংখ্যার ওপর ভিত্তি করে। আমার মতে, এটি ঠিক হয়নি।’

ভারতের সাবেক ওপেনার গৌতম গম্ভীরও চুপ করে থাকতে পারেননি। তাঁর টুইট, ‘এ ধরনের ম্যাচে বাউন্ডারিসংখ্যার ওপর ভিত্তি করে কীভাবে ফল নির্ধারিত হয়, তা বোধগম্য নয়। অদ্ভুত নিয়ম। টাই হওয়া উচিত ছিল। দুই দলকেই অভিনন্দন জানাচ্ছি।’ ভারতের সাবেক ক্রিকেটার যুবরাজ সিংয়ের টুইট, ‘নিয়মটির (বাউন্ডারিসংখ্যা) সঙ্গে একমত হতে পারছি না। তবে নিয়ম তো নিয়ম...।’