১৪৯৬ দিন পর আবাহনীকে হারাল মোহামেডান

তকলিস আহমেদদের ঠেকাতে পারেনি আবাহনীর রক্ষণভাগ। ছবি: প্রথম আলো
তকলিস আহমেদদের ঠেকাতে পারেনি আবাহনীর রক্ষণভাগ। ছবি: প্রথম আলো
>প্রিমিয়ার লিগে বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে আবাহনী লিমিটেডের বিপক্ষে ৪-০ গোলে জয় পেয়েছে মোহামেডান। জোড়া গোল করেছেন তকলিস আহমেদ এবং একটি করে গোল করেছেন সুলেমান ডায়াতে ও জাহিদ হাসান এমেলি।

শুনেছেন, আজ আবাহনীকে হারিয়ে দিয়েছে মোহামেডান! তাও আবার ৪-০ গোলে—শুনেছেন? দেশের ফুটবলের ন্যূনতম খোঁজ খবর রাখলে আবাহনীর বিপক্ষে মোহামেডানের এই জয়ের খবর অবিশ্বাস্যই মনে হবে!

শেষ বাঁশি বাজার পর পূর্ব গ্যালারিতে সমর্থকদের উল্লাসমুখর স্লোগান, ‘মোহামেডান ...মোহামেডান।’ চিৎকার করতে করতে কয়েকজনের গলা বসে যাওয়ার উপক্রম। উপস্থিত কয়েক শ দর্শকের বেশির ভাগই বিস্মিত। নিজের চোখকেও যেন তাঁরা বিশ্বাস করতে পারছিলেন না। আবাহনীর বিপক্ষে বড় জয়! এ সময়ে এ তো রূপকথার গল্পের মতো। তা-ও আবার ৪-০ গোলে!

আবাহনী-মোহামেডান ম্যাচের উত্তাপ হারিয়ে গেছে অনেক আগেই। আবাহনীর বিপক্ষে মোহামেডানের শেষ জয়টি ছিল ২০১৫ সালের ২১ মে। মোহাম্মদ ইব্রাহিমের একমাত্র গোলে জয় নিয়ে মাঠ ছেড়েছিল সাদা-কালোরা। এর পরে প্রিমিয়ার লিগে টানা ৫ ম্যাচে হার। মাঝে চলে গিয়েছে পাক্কা তিনটি বছর। দুইটি প্রিমিয়ার লিগ। স্পষ্ট করে বললে, ১৪৯৬ দিন পর আবাহনীর বিপক্ষে লিগে জয় পেল মোহামেডান।

সাম্প্রতিক সময়ে দুই চিরপ্রতিদ্বন্দ্বীর লড়াইয়ে ন্যূনতম প্রতিদ্বন্দ্বিতার ছিটেফোঁটাও চোখে পড়ে না। মোহামেডান কত গোল হজম করবে, ম্যাচের আগে এই নিয়েই সমর্থকদের হিসেব কষা চলছিল! এর আগে ন্যূনতম ঝড়ের আভাস দেওয়ার সামর্থ্যও দেখাতে পারেনি সাদা-কালোরা। যদিও মাঝেমধ্যে খেলার জগতে ‘যদি-কিন্তু’কেও ধর্তব্যে নিতে হয়। ২০১৬ সালে লেস্টার সিটি ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগ জিতবে, এর পক্ষে বাজির দর ছিল ৫০০০-১। শেষ পর্যন্ত ট্রফিটা কিন্তু জিতেছিল লেস্টারই। আজ আবাহনী-মোহামেডান ম্যাচটাও ছিল তাই। আর দিন শেষে জয়ী দলের নাম মোহামেডান।

অথচ এ ম্যাচের আগে উড়ছিল আকাশি-নীলরা। প্রথমবারের মতো এএফসি কাপের দ্বিতীয় রাউন্ডে খেলার যোগ্যতা অর্জন। লিগেও তাদের সামনে দাঁড়াতে পারছিল না কোনো দল। টানা আট জয়ের সুখস্মৃতি নিয়ে আজ মাঠে নামা। যেখানে আজকের ম্যাচের আগে এবারের লিগে মোহামেডানের মোট জয়ই চারটি। সাদা-কালোদের ওপর অবনমন শঙ্কাও ঝুলছিল। অথচ খাদের কিনারায় দাঁড়িয়ে থাকা মোহামেডানের কাছে উড়ে গেল শেষ দুইবারের লিগ চ্যাম্পিয়নরা। তকলিস আহমেদ-সুলেমান ডায়াবাতেদের সামনে আবাহনীর রক্ষণভাগকে মনে হচ্ছিল বালির বাঁধের মতো।

গোলের মালা গাঁথা শুরু করেন তকলিস ও শেষ করেন জাহিদ হাসান এমেলি। ১৬ মিনিটেই গোলের খাতা খোলা। বক্সের মধ্যে বাম প্রান্ত থেকে সুলেমান ডায়াবাতের কাটব্যাকে দেখেশুনে প্লেসিংয়ে গোলের খাতা খোলেন তকলিস। অবশ্য এ গোলে আবাহনী গোলরক্ষক শহিদুল আলমের দায় কম নয়। তাঁর অহেতুক পোস্ট ছেড়ে বের হয়ে আসার খেসারত দিতে হয়েছে আবাহনীকে।

বিরতিতে যাওয়ার আগেই তকলিসের কল্যাণে ২-০। জাহিদ হাসান এমেলির পাস নিয়ন্ত্রণে নিয়ে পেনাল্টি আর্কের ওপর থেকে শট নিলে আবাহনীর সেন্টারব্যাক টুটুল হোসেন বাদশার পায়ে লেগে জালে। প্রথমার্ধে ২-০ গোলে পিছিয়ে পড়লেও অনেকেই ধরেই নিয়েছিল দ্বিতীয়ার্ধে ঠিকই ম্যাচে ফিরবে আবাহনী। কিন্তু কিসের কী!

দ্বিতীয়ার্ধে সাদা-কালোরা আরও আক্রমণাত্মক। ৫০ মিনিটে মালির স্ট্রাইকার সুলেমানের সলো রান ও দুর্দান্ত প্লেসিংয়ের রসায়নে ৩-০। দিনটাই ছিল আজ মোহামেডানের। গোল করতে ভুলে যাওয়া এমেলিও করলেন গোল। ৬৬ মিনিটে তাঁর হেডে এক হালি গোলের মালা পূর্ণ।

মোহামেডানের এই জয়ে বড় কৃতিত্ব দিতে হবে অস্ট্রেলিয়ান কোচ সিন লেনকে। পুরো অঙ্ক কষে দল সাজিয়ে জয় নিয়ে মাঠ ছেড়েছেন তিনি। আবাহনীর ক্ষুরধার আক্রমণ ত্রয়ীর সামনে ৫ ডিফেন্ডার দাঁড় করিয়ে দিয়েছিলেন। বিদেশি ও স্থানীয়দের সমন্বয়ে তিন সেন্টারব্যাকের ওপরে দুই হোল্ডিং মিডফিল্ডার জাপানি উরু নাকাতা ও শেখ গালিব নেওয়াজ। মিডল করিডরে এই পায়ের জঙ্গল ভেদ করে সানডে চিজোবা, নাবীব নেওয়াজরা তেমন গোলের সুযোগই সৃষ্টি করতে পারেননি। যদিও তাদের সামনে একবার বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছিল ক্রসবার।

উল্টো প্রতি-আক্রমণে ফণা ধরা সাপের মতো ভয়ংকর তকলিস-সুলেমানের মুভ। আর সুযোগ কাজে লাগিয়ে জয় নিয়ে তাঁদের মাঠ ছাড়া।