বিশ্বকাপ বাছাইয়ে প্রতিপক্ষের 'চেহারা' দেখে খুশি বাংলাদেশ কোচ!

বাংলাদেশ জাতীয় ফুটবল দলের কোচ জেমি ডে (বাঁয়ে)। ফাইল ছবি
বাংলাদেশ জাতীয় ফুটবল দলের কোচ জেমি ডে (বাঁয়ে)। ফাইল ছবি
কাল বিশ্বকাপ ও এশিয়ান কাপের যৌথ বাছাইয়ের ড্রতে বাংলাদেশের গ্রুপে পড়েছে ভারত, আফগানিস্তান, কাতার ও ওমান। গ্রুপিং দেখে সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছেন বাংলাদেশ জাতীয় ফুটবল দলের কোচ জেমি ডে


বিশ্বকাপ ও এশিয়ান কাপের যৌথ বাছাইয়ের ড্র অনুষ্ঠিত হওয়ার এক দিন আগে বাংলাদেশ কোচ জেমি ডে প্রথম আলোকে শুনিয়েছিলেন তাঁর প্রত্যাশার কথা। বলেছিলেন, গ্রুপে ভারতকে চাই। জেমির আশা পূরণ হয়েছে। কাল লটারির মাধ্যমে অনুষ্ঠিত হওয়া বাছাইয়ে বাংলাদেশের সঙ্গে একই গ্রুপে পড়েছে ভারত। গ্রুপ ‘ই’–তে অন্য তিন দল আফগানিস্তান, কাতার ও ওমান। গতবারের তুলনায় এবার তুলনামূলক সহজ গ্রুপেই পড়েছে বাংলাদেশ এবং তাতে সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছেন বাংলাদেশের কোচ।

গতবার অস্ট্রেলিয়া আর জর্ডানের মতো দল ছিল বাংলাদেশের গ্রুপে। বাকি দুই দল তাজিকিস্তান ও কিরগিজস্তানও সহজ ছিল না। ২০১৮ বিশ্বকাপ বাছাইয়ে ৮ ম্যাচে মাত্র ২ গোল করে ৩২ গোল খেয়ে বাংলাদেশের প্রাপ্তি ছিল একটি মাত্র ড্র, যেটি ঢাকায় কিরগিজস্তানের সঙ্গে। এবার ২০২২ কাতার বিশ্বকাপের বাছাইয়ে বাংলাদেশ কেমন করবে, তা সময়ই বলবে। তবে কাল মালয়েশিয়ায় ড্রয়ের পর বলতেই হচ্ছে, এবার বাংলাদশের তুলনামূলক বেশি ভালো করার সুযোগ রয়েছে।

অবশ্য সহজ মানে এই নয় যে বাংলাদেশের জেতার সম্ভাবনা অনেক বেশি। আসলে বিষয় হলো বাংলাদেশের সঙ্গে প্রতিপক্ষ দলগুলোর শক্তির পার্থক্য কম। এ ছাড়া প্রতিপক্ষরা অত ভীতি–জাগানিয়া নয়, যেমনটা গতবার ছিল অস্ট্রেলিয়া বা জর্ডান। এবার চার দলের দুটি দক্ষিণ এশিয়ান অঞ্চলের ভারত ও আফগানিস্তান। ভারতের সঙ্গে একটা ঐতিহাসিক লড়াই একসময় থাকলেও সেই দিন আর নেই। কারণ, প্রতিবেশীদের ফুটবলীয় অবকাঠামো অনেক উন্নত হয়েছে। শেষ এশিয়ান কাপেও আলো ছড়িয়েছে তারা।

ঘরের মাঠে বাংলাদেশ জেতার চেষ্টা করে দেখাতে পারে। ড্র করলেও খারাপ হবে না। আর ভারতের মাঠে ড্র করতে পারলে সেটি হবে জয়ের সমান। আফগানিস্তানের সঙ্গেও একই কথা প্রযোজ্য। ২০১৫ কেরালা সাফে আফগানরা ৪ গোলে উড়িয়ে দেয় বাংলাদেশকে। দেশটির অনেক খেলোয়াড়ই ইউরোপে খেলেন। তবে শেষ কথা হলো, এই দুটি ম্যাচে ভালো করার সুযোগ থাকছে বাংলাদশের সামনে। ‘গ্রুপে যাদের সঙ্গেই খেলি, আমাদের জন্য কঠিনই হবে। তবে ভারত ও আফগানিস্তানকে পাওয়ায় ভালো হয়েছে। তারা এগিয়ে থাকলেও অঘটনের লক্ষ্য থাকবে আমাদের,’ বলেন জেমি।

গ্রুপের বাকি দুই দল কাতার ও ওমানও আপাতদৃষ্টিতে ভয়ংকর কোনো নাম নয়। গত আগস্টেই ইন্দোনেশিয়ায় এশিয়ান গেমস ফুটবলে কাতার অনূর্ধ্ব-২৩ দলকে জামাল ভূঁইয়ার একমাত্র গোলে হারিয়ে বাংলাদেশ অনূর্ধ্ব-২৩ দল প্রথমবার এশিয়াডের দ্বিতীয় রাউন্ডে ওঠে। সেটি ছিল বিরাট কৃতিত্ব। সেদিক থেকে ভাবলে মনস্তাত্ত্বিকভাবে খেলার আগেই হেরে যাবে না বাংলাদেশ। যদিও অনূর্ধ্ব-২৩ আর জাতীয় দল এক নয়। এ ছাড়া কাতার সম্প্রতি এশিয়ান কাপে চ্যাম্পিয়ন হয়েছে জাপানকে হারিয়ে। কদিন আগে কোপা আমেরিকায় একটি ড্র করেছে, দুটি হেরেছে। আর্জেন্টিনার মতো দলের কাছে হেরেছে মাত্র ২ গোলে।

এ ছাড়া কাতার ২০২২ বিশ্বকাপের স্বাগতিক। স্বাগতিক দল হিসেবেই তাদের বিশ্বকাপ নিশ্চিত হলেও এশিয়ান কাপের জন্য খেলতে হচ্ছে বাছাইপর্ব। যেহেতু একই বাছাইপর্বের মধ্যে দিয়েই চূড়ান্ত হবে বিশ্বকাপ ও এশিয়ান কাপের দল। বিশ্বকাপের স্বাগতিক দলকে গ্রুপে পেয়ে উচ্ছ্বসিত বাংলাদেশ কোচ, ‘গ্রুপিং দেখে আমি খুব খুশি। ২০২২ বিশ্বকাপের স্বাগতিক দেশ আমাদের গ্রুপে পড়েছে। দারুণ একটা অভিজ্ঞতা হবে আমাদের।’

সব মিলিয়ে বলা যায়, বাছাইয়ে এবার ভালো করা উচিত বাংলাদেশের। গতবার বিশ্বকাপ বাছাইয়ে অস্ট্রেলিয়া, জর্ডান, কিরগিজস্তান ও তাজিকিস্তানের বিপক্ষে ৮ ম্যাচে ৩২ গোল হজম করেছিল বাংলাদেশ। এর মধ্যে শেষ ম্যাচে জর্ডানের বিপক্ষে আম্মানে দল হেরেছিল ৮-০ গোলের শোচনীয় ব্যবধানে। অস্ট্রেলিয়ার পার্থে গিয়ে অস্ট্রেলিয়ার কাছেই হারতে হয়েছিল ৫-০ গোলে। ঢাকায় এক গোল কম হজম করে ৪-০ ব্যবধানের হার।

তাজিকিস্তানের বিপক্ষে ঢাকায় ১-১ গোলে ড্র করাটাই ছিল বাছাইপর্বের একমাত্র ‘সাফল্য’। আবার তাজিকিস্তানে গিয়ে তাদের বিপক্ষে বাংলাদেশ হেরেছিল ৫-০ গোলে। কিরগিজস্তানের বিপক্ষেও দুই লেগে যথাক্রমে ৩-১ ও ২-০ গোলে হারতে হয়েছে। জর্ডানের বিপক্ষে দেশের মাটিতে হারের ব্যবধান ছিল ৪-০। তবে আশার কথা, জেমির অধীনে জাতীয় ফুটবল দলের কঙ্কালসার চেহারাটা এখন বদলে গিয়েছে। শেষ তিন আন্তর্জাতিক ম্যাচের দুটিতেই জয় পেয়েছে বাংলাদেশ। হজম করেনি কোনো গোল।