আফগানিস্তান যেতে আপত্তি বাফুফের

বাংলাদেশ জাতীয় ফুটবল দলের অধিনায়ক জামাল ভূঁইয়া ও কোচ জেমি ডে। ছবি: প্রথম আলো
বাংলাদেশ জাতীয় ফুটবল দলের অধিনায়ক জামাল ভূঁইয়া ও কোচ জেমি ডে। ছবি: প্রথম আলো
>

২০২২ বিশ্বকাপ বাছাইপর্বে আফগানিস্তানের বিপক্ষে বাংলাদেশের অ্যাওয়ে ম্যাচটি কোথায় হবে? আফগানিস্তানে হলে খেলতে যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশটিতে যাবে না বাংলাদেশ।

২০২২ কাতার বিশ্বকাপের ড্র দেখে খুশি বাংলাদেশের ফুটবল অঙ্গন। কাতার, ওমান, ভারত, আফগানিস্তান প্রতিপক্ষ হিসেবে ভীতি-জাগানিয়া নয় বলছেন সবাই। তবে এর মধ্যেই একটা চিন্তা এসে মাথায় ঢুকেছে বাফুফের শীর্ষ কর্মকর্তাদের। সেটি হলো আফগানিস্তানের সঙ্গে ১০ সেপ্টেম্বর অ্যাওয়ে ম্যাচটা কাবুল বা দেশটির অন্য শহরে হলে তখন কী হবে! আফগানিস্তান তো গৃহযুদ্ধবিধ্বস্ত একটা দেশ। আর এই দেশটিতে আন্তর্জাতিক ফুটবল খেলতে অনীহা সবারই। তবে ব্যতিক্রম হিসেবে গত বছর ১৮ আগস্ট আফগানিস্তানের সঙ্গে কাবুলে প্রীতি ম্যাচ খেলে ফিলিস্তিন। ফিলিস্তিনও অবশ্য যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ। তারা যেতেই পারে কাবুল।

আফগান জাতীয় ক্রিকেট দলের হোম ভেন্যু ভারত। দেরাদুনে তারা ম্যাচ খেলেছে। ফুটবলে বেশ কয়েক বছর ধরে ফিফা-এএফসির ম্যাচও খেলতে পারেনি নিজেদের দেশে। গত রাশিয়া বিশ্বকাপ ও এশিয়ান কাপের বাছাইটা তারা হোম ভেন্যু হিসেবে খেলেছে ইরান ও তাজিকিস্তানে। বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনও চাইছে আফগানিস্তানের বাইরে কোথাও গিয়ে ম্যাচটা খেলতে। ফিফা ৩১ জুলাইয়ের মধ্যে সব দেশকে তাদের হোম ভেন্যু জানাতে বলেছে। আফগানিস্তান তাদের হোম ভেন্যু কোথায় দেখায়, সেটাই এখন দেখার বিষয়। যদি নিজেদের দেশেই হোম ভেন্যু করতে চায়, তাহলে বাফুফে ভিন্ন চিন্তা করবে। বাফুফের সাধারণ সম্পাদক আবু নাঈম কাল বলেছেন, ‘আফগানিস্তান কাবুল বা দেশটির অন্য শহরে ভেন্যু করতে চাইলে আমরা সেখানকার নিরাপত্তাহীনতার বিষয়টা তুলব ফিফার কাছে। আমরা নিরাপত্তার প্রশ্নে সেখানে খেলতে যেতে চাইব না। তারপর ফিফা যে সিদ্ধান্ত নেবে, সেটাই চূড়ান্ত।’

ফিফার সিদ্ধান্তই আসলে শেষ কথা। যেমন রাশিয়া বিশ্বকাপের বাছাইপর্বের ম্যাচ খেলতে ঢাকায় আসতে চায়নি অস্ট্রেলিয়া। তারা নিরাপত্তাঝুঁকির কথা বলে ফিফার কাছে। তবে এতে কাজ হয়নি। ফিফার অনড় অবস্থানের কারণে শেষ পর্যন্ত ঢাকায় এসে ম্যাচ খেলতে বাধ্য হয় অস্ট্রেলিয়া। কাজেই আফগানিস্তান প্রশ্নে ফিফা যা বলবে, সেটিই বাফুফের শিরোধার্য। তবে আফগান ফুটবল ফেডারেশন যদি নিরপেক্ষ কোনো দেশে ভেন্যু করে তাহলে আপত্তির প্রয়োজন হবে না।

ওদিকে বিশ্বকাপ বাছাইয়ের প্রস্তুতির জন্য বাংলাদেশের হাতে সময় নেই। কিন্তু ১০ সেপ্টেম্বর আফগানিস্তান ম্যাচ সামনে রেখে কবে নাগাদ জাতীয় দলের প্রস্তুতি শুরু হবে, তা ঠিক হয়নি। জাতীয় দল কমিটির প্রধান কাজী নাবিল আহমেদ এখন ইংল্যান্ডে। তিনি ফিরলে এ মাসের শেষ দিকে জাতীয় দল কমিটির সভা হবে। তখনই প্রস্তুতির ছক চূড়ান্ত হওয়ার কথা। ৩০ জুলাই প্রিমিয়ার লিগ শেষ হওয়ার পরপরই আগস্টের দ্বিতীয় সপ্তাহের প্রথম দিকে কোরবানির ঈদ। ঈদের জন্য ১০-১২ দিন ছুটি শেষে সম্ভবত আগস্টের তৃতীয় সপ্তাহে প্রস্তুতিতে নেমে পড়বে বাংলাদেশ। তত দিনে জাতীয় দলের কোচ জেমি ডে ঢাকায় ফিরবেন ইংল্যান্ডে ছুটি কাটিয়ে।

বাফুফের সাধারণ সম্পাদক বলছেন, ‘আমরা সর্বোচ্চ প্রস্তুতিই নেব। জাতীয় দলের ক্যাম্প দেশে না বিদেশে হবে, সেটা জাতীয় কমিটির সভায় সিদ্ধান্ত হবে। তা ছাড়া আফগান ম্যাচের আগে কোনো দেশের সঙ্গে প্রস্তুতি ম্যাচ খেলার ব্যাপারেও আমরা ভাবছি।’ বাফুফেকে বিষয়টা গুরুত্ব দিয়েই ভাবতে হচ্ছে। কারণ এবারের বাছাইপর্বে ভালো করার সুযোগ আছে বাংলাদেশের। জাতীয় দলের অধিনায়ক জামাল ভূঁইয়া যেমন বলছেন, আফগানিস্তান ও ভারতের জয়ের সুযোগ আছে। তাঁর কথা, ‘এই দুটি দেশের সঙ্গে জয়ের ব্যাপারে আমরা ভাবতে পারি। মাঠে কী হবে, জানি না। তবে আমাদের জয়ের লক্ষ্য থাকা উচিত।’

সাদা চোখে এই আকাঙ্ক্ষাটা বাড়াবাড়ি নয়। তবে আফগানিস্তান আর ভারত বলেই বাংলাদেশ জয়ের আশা করতে পারে, ব্যাপারটা এমন নয়। এই দুটি দেশও বেশ শক্তিশালী। তবে সবকিছুর আগে এখন দেখার বিষয় কাতার বিশ্বকাপের বাছাইপর্বের কোন শহর থেকে শুরু করবে লাল-সবুজের দল—কাবুল, তেহরান, দুশানবে না অন্য কোনো শহর?