টেন্ডুলকার-সৌরভদের ছেঁটেছিলেন যে ধোনি, তাঁরও একই পরিণতি!

মহেন্দ্র সিং ধোনি। ছবি: রয়টার্স
মহেন্দ্র সিং ধোনি। ছবি: রয়টার্স
>

বিশ্বকাপে তরুণদের খেলানোর পরিকল্পনা থেকে টেন্ডুলকার, সৌরভ, শেবাগ, গম্ভীরদের মতো ক্রিকেটারদের ধীরে ধীরে দল থেকে ছেঁটে ফেলেছিলেন তখনকার অধিনায়ক ধোনি। সেই ধোনি ৩৯ বছর বয়সে পা রেখে এখনো নিজের ভবিষ্যৎ নিয়ে কিছু বলছেন না। ধোনির এই দ্বিমুখী অবস্থানকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে ভারতের টাইমস অব ইন্ডিয়া

অবসর কবে নেবেন—মহেন্দ্র সিং ধোনি কি এ প্রশ্নের উত্তাপ টের পাচ্ছেন? ভারতীয় ক্রিকেটে এখন এ প্রশ্নটাই সবচেয়ে আলোচিত। ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরের জন্য কাল স্কোয়াড চূড়ান্ত করবেন ভারতের নির্বাচকেরা। ধোনি এ সফর থেকে নিজেকে সরিয়ে নিয়েছেন। কিন্তু প্রশ্নটা থেকেই যাচ্ছে, ভারতীয় ক্রিকেটকে দু হাত ভরে দিলেও বয়স তো ধোনির পক্ষে নেই। ক্ষিপ্রতা আগের থেকে অনেক কমেছে তা দেখা গেছে বিশ্বকাপেই। তরুণদের জায়গা দিতে ৩৮ বছর বয়সী ধোনি অবসর নেবেন কবে?

ভারতীয় ক্রিকেটে ধোনির বর্তমান পরিস্থিতি কিন্তু আগের দুটি সময়ের কথাই মনে করিয়ে দেয়। ২০০৮ ও ২০১২—ধোনি তখন ভারতের অধিনায়ক। তরুণদের জায়গা করে দিতে এ দুটি সময়ের মধ্যে ধোনি ওয়ানডে থেকে ছেঁটে ফেলেছিলেন সৌরভ গাঙ্গুলি, রাহুল দ্রাবিড়, বীরেন্দর শেবাগ ও গৌতম গম্ভীরের মতো সিনিয়রদের। সময়ের পালাবদলে ধোনি এখন এসব সাবেকদের সে অবস্থানেই দাঁড়িয়ে। গম্ভীর এরই মধ্যে বলেছেন, ধোনির ব্যাপারে আবেগ নয় তাঁর দেখানো পথেই হাঁটা উচিত। অর্থাৎ অধিনায়ক থাকতে ধোনি তরুণদের দলে জায়গা করে দিতে যেভাবে সিনিয়রদের ছেঁটে ফেলেছিলেন, ভারতীয় ক্রিকেট কি এখন ধোনির সঙ্গে একই কাজ করবে—এটাই বড় প্রশ্ন।

ভারতের নির্বাচকেরা এবং ধোনি ছাড়া এসব প্রশ্নের জবাব কেউ দিতে পারবে না। তবে দেশটির ইতিহাসে অন্যতম সেরা এ ক্রিকেটার এখন যে অবস্থানে দাঁড়িয়ে তা যেন সে সময়েরই পুনরাবৃত্তি। ২০০৮ সালে অস্ট্রেলিয়ায় ত্রিদেশীয় সিরিজের আগে সাহসী সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন অধিনায়ক ধোনি। নির্বাচকদের বলেছিলেন, সৌরভ গাঙ্গুলি ও রাহুল দ্রাবিড়কে ওয়ানডে সেট-আপ থেকে সরানো হোক। এর কারণ হিসেবে ফিল্ডিংয়ে দুজনের দুর্বলতার কথা বলেছিলেন ধোনি। ভারত সে টুর্নামেন্ট জেতায় ধোনির সে সিদ্ধান্ত নিয়ে বড় কোনো বিতর্ক হয়নি। আর ভারতের ২০১১ বিশ্বকাপ জয়ের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপিত হয় ওই টুর্নামেন্ট দিয়েই গম্ভীর-সুরেশ রায়নার মতো তরুণদের দিয়ে।

চার বছর পর আবারও সেই অস্ট্রেলিয়ার মাটিতেই আরেকটি কঠিন সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন ধোনি। ২০১২ সিবি সিরিজে শচীন টেন্ডুলকার, শেবাগ ও গম্ভীরের মতো সিনিয়র ক্রিকেটারদের ‘রোটেশন পলিসি’র মধ্যে অন্তর্ভুক্ত করেন তৎকালীন ভারতের এ অধিনায়ক। দলে তরুণদের জায়গা পোক্ত করতেই সিনিয়র ক্রিকেটারদের ঘুরিয়ে-ফিরিয়ে খেলানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন ধোনি। শেষ লিগ ম্যাচ পর্যন্ত এ তিন ক্রিকেটারের মধ্যে খেলিয়ে গেছেন যেকোনো দুজনকে। কারণ হিসেবে মাঠে তাঁদের ‘মন্থর নড়াচড়া’র কথা বলেছিলেন ধোনি।

ভারত সে টুর্নামেন্টের ফাইনালে উঠতে না পারায় সেবার সমালোচিত হয়েছিলেন। সিনিয়রদের ঘুরিয়ে ফিরিয়ে খেলানোর সিদ্ধান্তটি ধোনির জন্য বুমেরাং হয়েছিল। মুখ খুলেছিলেন শেবাগ। সাবেক এ ওপেনার এ নিয়ে সে বছরই বলেছিলেন, ‘সে (ধোনি) আমাদের বলেছে আগামী বিশ্বকাপে তরুণদের সুযোগ করে দিতে চায়। সে অধিনায়ক, যা খুশি বলতেই পারে।’ গম্ভীর তখন চুপ থাকলে মুখ খোলেন গত বছর। তখন বলেছিলেন, ‘অস্ট্রেলিয়ায় ২০১২ ত্রিদেশীয় সিরিজে ধোনি ঘোষণা করেছিল সে আমাদের তিনজনকে (শেবাগ, গম্ভীর ও টেন্ডুলকার) একসঙ্গে খেলাতে পারবে না। কারণ তার লক্ষ্য ২০১৫ বিশ্বকাপ। সেটা ছিল অনেক বড় আঘাত। আমি শুনি নাই ২০১২ সালেই আর কাউকে বলা হয়েছে যে ২০১৫ বিশ্বকাপের অংশ হতে পারবে না।’

টেন্ডুলকার-শেবাগদের সে পরিস্থিতি আর ধোনির বর্তমান পরিস্থিতি কি প্রায় একইরকম নয়?

বিশ্বকাপের সেমিফাইনাল থেকে ছিটকে পড়েছে ভারত। মন্থর ব্যাটিংয়ের জন্য সমালোচিত হয়েছেন ধোনি। স্বাভাবিকভাবেই তাঁর বয়সের ভার ও পারফরম্যান্স নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরে ধোনিকে রাখলে হয়তো প্রশ্নটা আরও উসকানি পেত। ধোনি সে সুযোগ দেননি। ভারতীয় সেনাবাহিনীর প্যারাসুট রেজিমেন্টে আগামী দু মাস কাটাবেন সম্মানসূচক লেফটেন্যান্ট কর্নেল পদবি পাওয়া এ উইকেটরক্ষক ব্যাটসম্যান। তবে যেটুকু জানা গেছে, টি-টোয়েন্টি ও ওয়ানডে মিলিয়ে দুটি বিশ্বকাপজয়ী এ অধিনায়ক সহসাই অবসর নিচ্ছেন না। তাঁর কাছের বন্ধু ও ব্যবসায়িক অংশীদার অরুণ পাণ্ডের উদ্ধৃতি প্রকাশ করেছে ভারতীয় সংবাদমাধ্যম, ‘তাঁর দ্রুতই অবসর নেওয়ার কোনো পরিকল্পনা নেই। তাঁর মতো কিংবদন্তি খেলোয়াড়ের ভবিষ্যৎ নিয়ে এমন বারবার প্রশ্ন ওঠা দুর্ভাগ্যজনক।’

টেন্ডুলকার-শেবাগদের নিয়েও তখন প্রশ্ন ওঠাকে অনেকে বলেছিলেন দুর্ভাগ্যজনক। একই ব্যাপার ধোনির ক্ষেত্রেও খাটে। একটা বিশ্বকাপ শেষ হলো, সামনে এখন ২০২৩ বিশ্বকাপের প্রস্তুতি নেওয়ার পালা। যেটি অনুষ্ঠিত হবে ভারতেরই মাটিতে। গম্ভীর তাই বলেই রেখেছেন, ধোনিকে নিয়ে ‘আবেগী হওয়ার থেকে বাস্তববাদী হওয়া প্রয়োজন। তরুণদেরও তৈরি করতে হবে। ঋষভ পন্ত, সঞ্জু স্যামসন, ইষাণ কিষান কিংবা যেকোনো উইকেটরক্ষক—যাকে সম্ভাবনাময় মনে হবে তাকে উইকেটরক্ষক বানানো উচিত।’