৩৪ বছর পর কলকাতায় বাংলাদেশ-ভারত ফুটবল?

ছবিটা অবশ্য ঢাকায় তোলা। ১৯৮৫ সালে বিশ্বকাপ বাছাইপর্বে বাংলাদেশ-ভারত ম্যাচ। বাংলাদেশের অধিনায়ক আশিস ভদ্র শুভেচ্ছা বিনিময় করছেন ভারতের সুদীপ চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে। অ্যাওয়ে ম্যাচটি অনুষ্ঠিত হয়েছিল কলকাতায়। ছবি: সংগৃহীত
ছবিটা অবশ্য ঢাকায় তোলা। ১৯৮৫ সালে বিশ্বকাপ বাছাইপর্বে বাংলাদেশ-ভারত ম্যাচ। বাংলাদেশের অধিনায়ক আশিস ভদ্র শুভেচ্ছা বিনিময় করছেন ভারতের সুদীপ চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে। অ্যাওয়ে ম্যাচটি অনুষ্ঠিত হয়েছিল কলকাতায়। ছবি: সংগৃহীত
বিশ্বকাপ ও এশিয়ান কাপ বাছাইয়ে বাংলাদেশ ও ভারত পড়েছে একই গ্রুপে। হোম ও অ্যাওয়ে ভিত্তিতে অনুষ্ঠেয় বাছাইপর্বে প্রত্যেক প্রতিপক্ষের সঙ্গে দুটি করে ম্যাচ—একটি ঘরের মাঠে অন্যটি প্রতিপক্ষের মাঠে। সে হিসেবে ভারতের সঙ্গে ‘অ্যাওয়ে’ ম্যাচটি কোথায় হবে, সেটি নিয়ে সবারই কৌতূহল আছে। ১৫ অক্টোবর এ ম্যাচটি কলকাতায় আয়োজনের সম্ভাবনা আছে বলে জানা গেছে।


একটা সময় ছিল ফুটবলে বাংলাদেশ-ভারত ছিল সমানে-সমান। কিন্তু দিন বদলে গেছে। ভারত ফুটবলে এগিয়ে গেছে অনেকটা পথ। ফিফা র‌্যাঙ্কিংয়ে নিজেদের নিয়ে গেছে প্রথম এক শটি দেশের মধ্যে। বাংলাদেশ পিছিয়েছে প্রতিনিয়ত। এক সময়ের চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী দুই দেশের মধ্যে ইদানীং মানের পার্থক্য বেড়ে গেলেও এই লড়াই এখনো রোমাঞ্চিত করে দুই দেশের ফুটবলপ্রেমীদের। সে কারণে এবার বিশ্বকাপ ও এশিয়ান কাপ বাছাইয়ে এক গ্রুপে পড়ায় ফুটবলপ্রেমীরা অপেক্ষায় আছেন বাংলাদেশ-ভারত ম্যাচ নিয়ে। দুই দলের দুটি ম্যাচ। অনুষ্ঠিত হবে দুই দেশে। একটি ম্যাচ ঢাকায় হবে—এ নিয়ে সন্দেহ নেই। ভারতের মাটিতে ম্যাচটি কোন শহরে হবে, সেটি জানার আগ্রহ কিন্তু অনেকেরই।

ভারতের মাটিতে অনুষ্ঠেয় ম্যাচটি কলকাতায় হওয়ার সম্ভাবনা যথেষ্ট। জানিয়েছেন সর্ব ভারতীয় ফুটবল ফেডারেশনের (এআইএফএফ) সাধারণ সম্পাদক কুশল দাস, ‘ম্যাচটি কলকাতায় হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। আমরা কলকাতাকেই সম্ভাব্য ভেন্যু হিসেবে ভেবে রেখেছি। বিকল্প হিসেবে গুয়াহাটি কথাও ভাবা হচ্ছে।’

ভারতের বিপক্ষে ভারতের মাটিতে এর আগে খুব বেশি খেলতে নামেনি বাংলাদেশ। কলকাতায় যদি অ্যাওয়ে ম্যাচটি হয়, তবে ৩৪ বছর পর কলকাতার মাটিতে ভারতের বিপক্ষে খেলতে নামবে বাংলাদেশ জাতীয় ফুটবল দল। ১৯৮৫ সালে বিশ্বকাপ বাছাইপর্বে (১৯৮৬ মেক্সিকো বিশ্বকাপ বাছাই) কলকাতায় ভারতের বিপক্ষে সবশেষ ম্যাচে ২-১ গোলে হেরেছিল বাংলাদেশ। বাংলাদেশের পক্ষে একমাত্র গোলটি করেছিলেন আশরাফউদ্দিন চুন্নু। বিকাশ পাঁজি ও ক্যামিলো গঞ্জালভেস দুই গোল করে জিতিয়েছিলেন ভারতকে। ঢাকার হোম ম্যাচেও বাংলাদেশ হেরেছিল ২-১ গোলে। সে ম্যাচে বাংলাদেশের গোলদাতা ছিলেন আশিস ভদ্র। ভারতের পক্ষে দুটি গোল ছিল বিকাশ পাঁজি ও শিশির ঘোষের। কলকাতার অ্যাওয়ে ম্যাচটিতে বাংলাদেশের পক্ষে খেলেছিলেন- মহসিন (গোলরক্ষক), অলোক, আজমত, আশিস, চুন্নু, ইলিয়াস, ইমতিয়াজ জনি, কায়সার হামিদ, স্বপন দাস, বাদল রায়।

কলকাতায় বাংলাদেশ জাতীয় ফুটবল দল সবশেষ খেলেছিল ১৯৮৭ সালে কলকাতা সাফ গেমসে। সেবার অবশ্য ভিন্ন গ্রুপে পড়ায় ভারতের বিপক্ষে বাংলাদেশের কোনো খেলা হয়নি। জাতীয় দল না খেললেও আবাহনী, মোহামেডান, মুক্তিযোদ্ধা কিংবা শেখ জামালের মতো ক্লাব অনেকবারই কলকাতায় মাঠে নেমেছে ভারতীয় ক্লাবগুলোর বিপক্ষে।

এ মুহূর্তে ভারতের র‌্যাঙ্কিং যেখানে ১০১, বাংলাদেশের ১৮৪। স্পষ্টতই ভারত এখন বাংলাদেশের জন্য অনেক শক্তিশালী প্রতিপক্ষ। কিন্তু মুখোমুখি লড়াইয়ে হাড্ডাহাড্ডি ব্যাপারটা থাকেই। ভারতের জয়ের পাল্লা ভারী হলেও বাংলাদেশও জিতেছে বেশ কয়েকটি ম্যাচ। দুই দলের সর্বশেষ লড়াইটি অনুষ্ঠিত হয় ২০১৪ সালে। গোয়ায় অনুষ্ঠিত সে ম্যাচটি ২-২ গোলে ড্র হয়েছিল। ভারতের বিপক্ষে বাংলাদেশ সবশেষ জিতেছিল ১৬ বছর আগে—২০০৩ সালের সাফ চ্যাম্পিয়নশিপের সেমিফাইনালে।

ফলে ঘরের মাঠে বাংলাদেশ জেতার চেষ্টা করে দেখাতে পারে। ড্র করলেও খারাপ হবে না। আর ভারতের মাঠে ড্র করতে পারলে সেটি হবে জয়ের সমান। আর ভারতের সঙ্গে ভালো করার সুযোগ আছে বলেও মনে করেন বাংলাদেশ জাতীয় ফুটবল দলের কোচ জেমি ডে, ‘গ্রুপে যাদের সঙ্গেই খেলি, আমাদের জন্য কঠিনই হবে। তবে ভারত পাওয়ায় ভালো হয়েছে। তারা এগিয়ে থাকলেও অঘটনের লক্ষ্য থাকবে আমাদের।’