কিশোরী ফুটবলারদের কান্নার দায় কার?

মেয়েদের সেই কান্নার দৃশ্য। সংগৃহীত ছবি
মেয়েদের সেই কান্নার দৃশ্য। সংগৃহীত ছবি
শুক্রবার জেএফএ কাপের ফাইনাল খেলতে না পারায় অঝোরে কেঁদেছিল ঠাকুরগাঁও জেলার মেয়েরা। ফাইনালে খেলার যোগ্যতা অর্জন করলেও জালিয়াতির অভিযোগে ফাইনালে খেলতে দেওয়া হয়নি তাদের।

শুক্রবার কমলাপুর বীরশ্রেষ্ঠ মোস্তফা কামাল স্টেডিয়ামে যে ‘মরাকান্নার’ দৃশ্য দেখা গিয়েছে, তা আগে কখনো হয়েছে বলে মনে হয় না! জেএফএ কাপ টুর্নামেন্টের ফাইনালে মাঠে নামার অপেক্ষায় দুই ফাইনালিস্ট রংপুর ও ময়মনসিংহ। কিন্তু অন্য দল ঠাকুরগাঁওয়ের খেলোয়াড়েরা মাঠে এসে কান্না জুড়ে দিয়েছে। কাঁদতে কাঁদতে কখনো কোচ, কখনো কর্মকর্তাদের পায়ে লুটিয়ে পড়ছে। সে দৃশ্য কয়েক দিন ধরেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ঘুরে বেড়াচ্ছে, যা দেখে সবারই প্রশ্ন, খেলার মাঠে কিশোরী মেয়েদের এমন কান্না কেন?

ময়মনসিংহকে টাইব্রেকারে হারিয়ে টুর্নামেন্টের ফাইনালে জায়গা করে নিয়েছিল ঠাকুরগাঁও। ফাইনালে খেলার স্বপ্ন নিয়ে বৃহস্পতিবার রাতে ঘুমাতেও গিয়েছিলেন মেয়েরা। কিন্তু খেলার দিন সকালে জানা যায় ফাইনালে খেলা হচ্ছে না তাদের। কারণ সেমিফাইনালে জিতলেও শেষ পর্যন্ত তাদের বিপক্ষে ‘জালিয়াতি’র অভিযোগ পাওয়া গেছে। ফাইনালের আগে মাঠে এসে কান্নাকাটি জুড়ে দেয় মেয়েরা। খেলার মাঠে এই কিশোরীদের কান্নার জন্য দায়ী কারা? পাওয়া যাচ্ছে পরস্পরবিরোধী অভিযোগ।

বাফুফের ভাষ্য মতে, তাদের চার ফুটবলার চন্দনা রায়, রঞ্জনা রায়, ইশরাত জাহান ও মমতাজ বেগম এর আগেও দুবার জেএফএ কাপ খেলেছে। নিয়ম অনুযায়ী কোনো ফুটবলার দুবারের বেশি টুর্নামেন্ট খেলতে পারে না। এ কারণে আইন অমান্যের জন্য দায়ী ঠাকুরগাঁও। সেমিফাইনালে হেরে যাওয়ার পর ময়মনসিংহ জেলার ফুটবল কর্মকর্তারা সেদিন রাতেই লিখিত অভিযোগ জানায় বাফুফেকে। এরপরই সকালে ঠাকুরগাঁওকে বাদ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় ফেডারেশন।

কিন্তু প্রশ্নটা থেকেই যায়, একটি দল নিয়ম অমান্য করে কীভাবে সেমিফাইনাল পর্যন্ত চলে এল। সেই আঞ্চলিক পর্ব ডিঙিয়ে চূড়ান্ত পর্বেও এতগুলো ম্যাচ খেলে উঠে আসা। ঢাকা এসেও কোয়ার্টার ফাইনাল ও সেমিফাইনাল খেলা। এই সময়ে বাফুফের বয়স যাচাই-বাছাইয়ে দায়িত্বে যাঁরা ছিলেন, তাঁরা কী করেছেন? ঠাকুরগাঁও জেলার দলের ম্যানেজারও বাফুফের বয়স ও কাগজপত্র যাচাই-বাছাই কর্মকর্তার বিপক্ষে পাল্টা অভিযোগ তুলেছেন।

শনিবারই ঠাকুরগাঁও ফিরে গেছে ওই মেয়েরা। সবাই রানীশৈংকলও উপজেলার মেয়ে। এলাকাবাসী এসে খোঁজ খবর নিচ্ছেন। দুদিন ধরে চলছে মানববন্ধন। নিজ জেলায় ফিরে গিয়ে তিন দিন পরও বিষয়টি মেনে নিতে পারছেন না দলটির ম্যানেজার তাইজুল ইসলাম। উল্টো বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের মহিলা কমিটির কর্মকর্তা নজরুল ইসলামের দিকে তাইজুলের অভিযোগ, ‘আমি ভালো করেই নিয়মটা জানি একজন খেলোয়াড় তিনবার খেলতে পারবে না। বাফুফে চার মেয়ের বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলেছে। এদের মধ্যে দুই বোন চন্দনা ও রঞ্জনার বিপক্ষে অভিযোগটা ভুল। আর মমতাজ ও ঈশরাতকে জেনেশুনেই খেলার অনুমতি দিয়েছে বাফুফে প্রতিনিধি নজরুল ইসলাম। সে আমাদের এখানে খেলোয়াড় যাচাইবাছাই করতে এসে বলেছে, এই মেয়েদের খেলতে কোনো সমস্যা নেই। তাহলে আমাদের কাঁধে কেন আইনভঙ্গের দায় চাপানো হচ্ছে! আমাদের তো আত্মপক্ষ সমর্থন করারই সুযোগ দেওয়া হয়নি।’

ঠাকুরগাঁও দলের খেলোয়াড়দের যাচাই-বাছাইয়ের দায়িত্ব ছিল বাফুফের মহিলা কমিটির কর্মকর্তা নজরুল ইসলামের। তিনি এর জন্য গিয়েছিলেন রংপুরেও। তাঁর বিপক্ষে ওঠা অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছেন তিনি, ‘কে কতবার খেলেছে এগুলো আমাদের জানার কথা নয়। আমরা বারবার বলেছি কেউ দুবারের বেশি খেলতে পারবে না।’

একে অন্যের কাঁধে দায় চাপিয়ে যাচ্ছেন ঠাকুরগাঁও ও বাফুফে মহিলা ফুটবলের কর্তারা। কিন্তু যে কিশোরী ফুটবলাররা এত আইনি মারপ্যাঁচ বোঝে না, তাদের কান্নাটা কিন্তু দেশের ফুটবলে মোটেও ভালো উদাহরণ তৈরি করল না!