ভজকট সূচি, কারেজমা-এসিয়েনদের তাই দেখা যায় না বাংলাদেশে

চেলসির সাবেক মিডফিল্ডার এসিয়েন ও পর্তুগালের উইঙ্গার কারেজমাকে (রোনালদোর সঙ্গে) এবার দেখতে পাওয়ার সম্ভাবনা ছিল বাংলাদেশের ফুটবলে। ফাইল ছবি
চেলসির সাবেক মিডফিল্ডার এসিয়েন ও পর্তুগালের উইঙ্গার কারেজমাকে (রোনালদোর সঙ্গে) এবার দেখতে পাওয়ার সম্ভাবনা ছিল বাংলাদেশের ফুটবলে। ফাইল ছবি
>বাংলাদেশের ঘরোয়া ফুটবলের নির্দিষ্ট কোনো সময়সূচি নেই। যে কারণে ভালো মানের বিদেশি ফুটবলার পাওয়া সম্ভব হয় না। চেলসির সাবেক তারকা মাইকেল এসিয়েনের সঙ্গে আলাপ–আলোচনা প্রায় চূড়ান্ত করলেও তাঁকে আনা সম্ভব হচ্ছে না বসুন্ধরা কিংসের। নবাগত ক্লাবটির সঙ্গে কথাবার্তা এগিয়ে গিয়েছিল পর্তুগালের উইঙ্গার রিকার্দো কারেজমারও। কিন্তু আগামী দলবদলের সূচি পিছিয়ে যাওয়ায় তা আর সম্ভব হচ্ছে না

বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে মাঝমাঠে দুর্দান্ত এক ট্যাকল করে বল দখলে নিলেন চেলসির সাবেক মিডফিল্ডার মাইক মাইকেল। প্রতি–আক্রমণে সেই বল নেওয়ার জন্য ডান প্রান্ত দিয়ে ছুটছেন পর্তুগাল জাতীয় দলের উইঙ্গার রিকার্দো কারেজমা। কী, অবাক হলেন? আপাতত দেখা না গেলেও সুযোগটা আসতে পারত দেশের ফুটবলপ্রেমীদের সামনে। কিন্তু তা আর সম্ভব হচ্ছে না আসন্ন দলবদল ও লিগ পিছিয়ে নেওয়ায়।

ইউরোপের এ দুই তারকা ফুটবলারের সঙ্গে কথাবার্তায় অনেক এগিয়ে গিয়েছিল বসুন্ধরা কিংস। কিন্তু সূচি বদলে যাওয়ায় তাঁদের বাংলাদেশে খেলার সম্ভাবনা আপাতত নেই। দীর্ঘদিন চেলসিতে খেলা ঘানা মিডফিল্ডার এসিয়েনের সঙ্গে মাসিক ৪৫ হাজার ডলারে প্রায় সবকিছু চূড়ান্ত হয়েই গিয়েছিল। বিশ্বকাপে পর্তুগাল জাতীয় দলের জার্সিতে দুর্দান্ত গোল করা উইঙ্গার কারেজমার সঙ্গেও ছিল জোরালো আলোচনা। টাকাপয়সার আলাপ–আলোচনা চূড়ান্ত না হলেও বাংলাদেশে খেলার সম্মতি দিয়েছিল বর্তমানে তুর্কি লিগে খেলা ৩৫ বছর বয়সী এ উইঙ্গার। কিন্তু সূচি বদলে যাওয়ায় আপাতত সব পরিকল্পনা ভেস্তে গিয়েছে নবাগত বসুন্ধরার।

বিশ্ব ফুটবলে সাড়া জাগানো দুই ফুটবলারকে বাংলাদেশে আনার সুযোগ হাতছাড়া হওয়ায় আফসোসে পুড়ছেন ক্লাবটির সভাপতি ইমরুল হাসান। খুব কাছে গিয়েও এ দুই ফুটবলারকে বাংলাদেশে নিয়ে আসতে না পারার হতাশা বসুন্ধরা সভাপতির, ‘সামনে এএফসি কাপ। আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্টে খেলার জন্য দেশি-বিদেশি মিলিয়ে দুর্দান্ত একটা স্কোয়াড তৈরি করতে চাই। মাইকেল এসিয়েনের সঙ্গে মাসিক ৪৫ হাজার ডলারের কথাবার্তা হয়ে গিয়েছিল। পর্তুগালের রিকার্দো কারেজমার কাছ থেকেও বাংলাদেশে খেলার সম্মতি আদায় করে নিয়েছিলাম। কিন্তু দলবদল পিছিয়ে যাওয়ায় আর লিগের সূচি নির্ধারিত না হওয়ায় আপাতত সব বাদ। কারণ, এত দামি খেলোয়াড়দের বসিয়ে বসিয়ে তিন–চার মাস বেতন দিতে পারব না। আর তাঁরা এভাবে খেলবেনও না।’

ঘরোয়া ফুটবলের সর্বোচ্চ পর্যায়ে নাম লিখিয়েই একের পর এক চমক দেখিয়ে যাচ্ছে বসুন্ধরা। রাশিয়া বিশ্বকাপে খেলা কোস্টারিকার দানিয়েল কলিন্দ্রেসকে দলে ভিড়িয়ে প্রথম চমক দেয় তারা। মাঠের খেলাতেও দাপট চলছে দলটির। ফেডারেশন কাপে রানার্সআপ হলেও স্বাধীনতা কাপে চ্যাম্পিয়ন। আর প্রিমিয়ার লিগের শিরোপায় তো এক পা দিয়েই রেখেছে বসুন্ধরা। টানা ১৪ ম্যাচে জয়ের রেকর্ড গড়া বসুন্ধরা আগামী তিন ম্যাচের একটিতে জিতলেই চ্যাম্পিয়ন। এখানেই না থেমে আগামী মৌসুম ও এএফসি কাপে এখনই তাদের চোখ। কিন্তু আন্তর্জাতিক সূচির সঙ্গে বাংলাদেশের সূচির আকাশ-পাতাল পার্থক্য থাকায় ভালো মানের বিদেশি ফুটবলার নেওয়া সম্ভব হচ্ছে না দলটির।

খেলা পেছানোর কায়দাকানুনে জুড়ি নেই বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের। ঝড়-রোদ-বৃষ্টি বা ক্লাবের যেকোনো অজুহাতে বিভিন্ন সময়ে যেকোনো কারণেই খেলা পিছিয়ে দেওয়ার নজির আছে দেশের ফুটবলের সর্বোচ্চ সংস্থাটির। একবার শীতে তো আরেকবার বর্ষায় শুরু হয় ঘরোয়া ফুটবল। নেই কোনো নির্দিষ্ট ক্যালেন্ডার বা সময়সীমা। পেছনে না তাকিয়ে এবারের লিগটার কথাই ধরুন। সারা বিশ্বের ফুটবল যখন আগের মৌসুমের লিগ শেষ করে নতুন মৌসুমের প্রস্তুতি নিচ্ছে, বাংলাদেশের লিগ তখন চলছে।

শেষ দুই মৌসুমের মধ্যবর্তী লিগে সময়ের পার্থক্যের বিবেচনায় বাংলাদেশের নাম হয়তো রেকর্ড বুকেও উঠতে পারে। গত লিগ শেষ হয়েছিল ২০১৮ সালে জানুয়ারির ১৩ তারিখে। এক বছরের অধিক সময় পেরিয়ে এসে ১৮ জানুয়ারি ২০১৯ সালে শুরু হয় নতুন লিগ। ভাবা যায়! আন্তর্জাতিক ফুটবলের সঙ্গে তাল মেলাতে না পারার খেসারত তো অনেকভাবেই দিচ্ছে বাংলাদেশের ফুটবল। সময় মতো লিগ না হওয়ায় এবারের মৌসুমে এএফসি কাপের একটি স্লটই হারিয়েছে বাংলাদেশ। তবুও যদি নতুন মৌসুমে সময় মতো লিগটা শুরু করা যেত।

গত ২১ জুন বাফুফের নির্বাহী কমিটি ১৬ আগস্ট থেকে ১৫ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত প্রিমিয়ার লিগে নতুন দলবদলের সিদ্ধান্ত নেয়। ২০ অক্টোবর থেকে ফেডারেশন কাপ এবং ডিসেম্বরে লিগ আয়োজনের ঘোষণাও দেয় বাফুফের নির্বাহী কমিটি। সেদিন নতুন বর্ষপঞ্জিও অনুমোদন করা হয়। কিন্তু নির্বাহী কমিটির সেই সিদ্ধান্ত ক্লাব সমিতির বিরোধিতায় ১৩ জুলাই বিস্ময়করভাবে পাল্টে দিয়েছে পেশাদার লিগ কমিটি! দল বদল শেষে বল কবে থেকে মাঠে গড়াবে, সে অনেক দূরের প্রশ্ন। তাই নিজেদের পরিকল্পনা থেকে সরে আসতে বাধ্য হয়েছে বসুন্ধরা।

আন্তর্জাতিক সূচির সঙ্গে বাংলাদেশের ঘরোয়া ফুটবলের সূচি মিল না থাকলে ভবিষ্যতেও ভালো খেলোয়াড় আনা সম্ভব নয় বলে মনে করেন বসুন্ধরা সভাপতি, ‘আন্তর্জাতিক সূচির সঙ্গে মিল না থাকায় আমরা ভালো খেলোয়াড় নিতে পারছি না। কারণ, আমাদের মৌসুম শুরু হয় পরে। ফলে, সবাই বিদেশি খেলোয়াড় নেওয়ার পর যা বাকি থাকে সেখান থেকে খেলোয়াড় নিতে হয়। এভাবে ভালো খেলোয়াড় পাওয়া সম্ভব না।’ চেলসি ও রিয়াল মাদ্রিদের জার্সিতে খেলা মাইকেল এসিয়েন এবং বার্সেলোনার সাবেক তারকা ফুটবলার কারেজমাকে না পাওয়া তো তারই প্রমাণ।