ধারাবাহিক পারফর্ম করা কোহলির কাছে বিরক্তিকর!

ভারতের অধিনায়ক বিরাট কোহলি। ছবি: এএফপি
ভারতের অধিনায়ক বিরাট কোহলি। ছবি: এএফপি
>আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ব্যাট হাতে সম্ভবত বিরাট কোহলিই সবচেয়ে ধারাবাহিক। কিন্তু দিনের পর দিন সবার প্রত্যাশা মিটিয়ে ধারাবাহিক পারফর্ম করে যাওয়ার বিষয়টি কোহলির কাছে যেমন চ্যালেঞ্জিং তেমন বিরক্তিকরও!

বিশ্বকাপে ভালোই খেলেছেন বিরাট কোহলি। সেঞ্চুরি না পেলেও তুলে নিয়েছেন টানা পাঁচ ফিফটি। কিন্তু ভক্ত থেকে শুরু করে সমালোচক—খুব একটা সন্তুষ্ট নন এর পরেও। বোঝাই যাচ্ছে, ভারতীয় অধিনায়কের কাছে প্রত্যাশা কতটা থাকে সবার। এসব প্রত্যাশার ধারাবাহিক প্রতিদান দিতে পারাটাই সবচেয়ে কঠিন কাজ। যেকোনো ক্রীড়াঙ্গনে যেকোনো ক্রীড়াবিদের ক্ষেত্রেই কথাটা সত্য। কোহলি কিন্তু বেশ ভালোই প্রত্যাশা মিটিয়ে যাচ্ছেন। বয়স ত্রিশ ছোঁয়ার আগেই তাঁকে ইতিহাসের অন্যতম সেরা ব্যাটসম্যানদের কাতারে রেখেছেন অনেক বিশ্লেষকই। তা সব ম্যাচেই সবার প্রত্যাশার প্রতিদান দেওয়ার চেষ্টা করতে কেমন লাগে কোহলির?

কাল প্রকাশিত আইসিসির হালনাগাদ টেস্ট র‌্যাঙ্কিংয়ে শীর্ষস্থান ধরে রাখা এ ব্যাটসম্যানকে প্রশ্নটি করেছে ভারতীয় সংবাদমাধ্যম টাইমস অব ইন্ডিয়া। সেই সাক্ষাৎকারে কোহলি কোনো রাখঢাক না রেখেই বলেছেন, ধারাবাহিকতা কিংবা সফলতা ধরে রাখা যেমন চ্যালেঞ্জিং তেমনি বিরক্তিকর, ‘হাল ছাড়লে অভিযান সেখানেই শেষ। প্রতিবার ঘুরে দাঁড়িয়ে কঠোর পরিশ্রমের মাধ্যমে দিনের পর দিন একই কাজের পুনরাবৃত্তি ঘটাতেই হবে, এর বিকল্প কোনো পথ নেই। আসলে এটি বেশ বিরক্তিকর ব্যাপার। ধারাবাহিকতা বিষয়টিই বিরক্তিকর। অনেক কঠিনও।’

ভারতীয় অধিনায়ক এরপর বিষয়টি ব্যাখ্যা করলেন এভাবে, ‘উদাহরণ হিসেবে গলফের কথা বলা যায়। সেখানে দেখবেন সবাই একটি শটই কতবার অনুশীলন করে। সেটি ইউএস চ্যাম্পিয়ন হলেও করে থাকে এবং তারা এটি বারবার করতেই থাকবে। কারণ তারা জানে, চাপের মুহূর্তে এটাই তাদের একমাত্র সমাধান।’

পেশাদারদের কাছে ক্রিকেট জীবনের মতোই প্রিয়। কোহলির ক্ষেত্রেও তার ব্যতিক্রম হওয়ার কথা না। তবে জীবন যে ক্রিকেটের চেয়েও অনেক অনেক বড়, সে কথাও মনে করিয়ে দিলেন কোহলি। খেলার বাইরে কখনো ধর্ম কিংবা আধ্যাত্মিক ব্যাপারগুলো নিয়ে ভেবেছেন কি না, এ প্রশ্নের জবাবে ভারতীয় তারকার ব্যাখ্যা, ‘একটি বিষয় আমি বিশ্বাস করি, যদি কিছু করতে মন চায়, তাহলে পূর্ণ মনোযোগ দিয়েই তা করা উচিত। কিন্তু লোকদেখানোর জন্য বা নিজের ইমেজ তৈরির জন্য কিছু করা হলে সেটি দ্রুতই ধরা পড়ে যাবে। আমি ঠিক এভাবেই ভেবে থাকি। এটাও বুঝতে হবে, ক্রিকেটের চেয়ে জীবন অনেক অনেক বড়। আমি ও আমার স্ত্রী পরিবারে যেভাবে লালিত-পালিত হয়েছি, তা ধরে রাখাই আমার লক্ষ্য। এটাই অগ্রাধিকার পাওয়া উচিত। আপনাকে বুঝতে হবে, এটা একদিন শেষ হয়ে যাবে।’

কোহলির ব্যাখ্যা এখানেই থামেনি, ‘আমি ধার্মিক নই। কোনো ধর্মের প্রতি আলাদা টানও নেই। সব ধর্ম আর সব ধরনের মানুষকে খোলা মনেই সাদরে গ্রহণ করে নিই। আমি বিশ্বাস করি, সবার মাঝেই আধ্যাত্মিকতা রয়েছে। এটা কেউ বুঝতে পারে না কিন্তু আমরা সবাই একই রকম।’ শুধু নিজের খেলা নয় অন্যান্য ক্রীড়াঙ্গন থেকেই প্রেরণা নিয়ে থাকেন কোহলি। সাক্ষাৎকারে জানালেন সে কথা, ‘এটি দারুণ ব্যাপার। লিয়েন্ডারের সঙ্গে টেনিস নিয়ে কথা বলেছি। হ্যারি কেনের সঙ্গে দেখা হলো কিছুদিন আগে...একেক খেলায় একেক নিয়ম থাকলেও যারা ভালো করেছে, তাদের সবার মানসিকতা কিন্তু একই রকম। যেকোনো ক্রীড়াবিদের সঙ্গে চাপ নিয়ে কথা বললে সবাই পরিচ্ছন্ন ও স্বচ্ছতার সঙ্গে কথা বলবে। এটাই সৌন্দর্য। একজন ক্রীড়াবিদের মানসিকতা গোটা জাতিকে একসূত্রে গাঁথতে পারে।’