বিসিবি সভাপতি বলছেন, বিশ্বকাপে বাংলাদেশ সফল!

বিশ্বকাপে বাংলাদেশের পারফরম্যান্স মূল্যায়ন করেছেন বিসিবি সভাপতি। ছবি: প্রথম আলো
বিশ্বকাপে বাংলাদেশের পারফরম্যান্স মূল্যায়ন করেছেন বিসিবি সভাপতি। ছবি: প্রথম আলো
>২০১৯ বিশ্বকাপে বাংলাদেশের অর্জন কী? বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান জানালেন, এই টুর্নামেন্টে বাংলাদেশ সফল। কীভাবে সফল, সেটির অনেক যুক্তি তুলে ধরেছেন তিনি।

বাংলাদেশ বিশ্বকাপে গিয়েছিল শেষ চারে খেলার স্বপ্ন নিয়ে। সেখান থেকে তারা ফিরেছে আট নম্বর হয়ে। এই বিশ্বকাপে বাংলাদেশ তিনটি জয় পেয়েছে। মজার ব্যাপার হচ্ছে এই তিন জয়ের চক্রে বাংলাদেশ আটকা পড়েছে ২০০৭ বিশ্বকাপ থেকে। টানা চারটি বিশ্বকাপে বাংলাদেশ টুর্নামেন্ট শেষ করল তিনটি জয় নিয়ে। ১১ বছরে বাংলাদেশ তাহলে কতটা এগোল?

সভাপতি নাজমুল হাসান অবশ্য মোটেও একমত নন যে এ বিশ্বকাপে বাংলাদেশ ব্যর্থ হয়ে ফিরেছে। আজ ধানমন্ডিতে নিজ কার্যালয়ে যে ঘটা করে সংবাদ সম্মেলন আয়োজন করলেন বিসিবি সভাপতি, সেখানে বারবার বললেন, ‘বিশ্বকাপে বাংলাদেশ সফল’! এটা না বললে নাকি ‘ছেলেদের (ক্রিকেটারদের) প্রতি অন্যায় হয়!’ নাজমুলকে নাকি বহির্বিশ্বের অনেকে বলেছে, র‍্যাঙ্কিং-পয়েন্ট তালিকা বাংলাদেশের পারফরম্যান্স ভুল বোঝাচ্ছে! যে সব কারণে ২০১৯ বিশ্বকাপে বাংলাদেশ সফল, সে সব যুক্তি নাজমুলের মুখেই শুনুন—

১. ‘শ্রীলঙ্কার (ব্রিস্টলে) সঙ্গে আমরা হারতেও পারতাম। বলছি না যে আমরা খেললে জিতে যেতাম। যদি বৃষ্টি না হতো দেশের সকলেই বিশ্বাস করে যে আমরা জিততাম। আমিও বিশ্বাস করি যে আমরা জিততাম। জিতলে আমরা ছয়ে থাকতাম।’

২. ‘দ্বিতীয় ম্যাচটাও আমাদের জেতা ম্যাচ (ওভালে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে)।’

৩. ‘ভাগ্য অনেক বড় একটা ব্যাপার। আরেকটা জিনিস মনে রাখবেন নয় ম্যাচের মধ্যে আটটায় টস হেরে গেলাম। এখানে ভাগ্যের একটা ব্যাপার আছে, ২০০৭ বিশ্বকাপে ঘণ্টায় ১৫০ (কিলোমিটার) গতিতে বল করত কজন বোলার? এখন যে ১৫০ (কিলোমিটার) গতি বলের বিপক্ষে আমাদের ব্যাটসম্যানরা ৩০০ রান করেছে সেটাই অনেক বড় ব্যাপার। কীসের সঙ্গে কী মেলাচ্ছেন, চিত্র সম্পূর্ণ ভিন্ন এখন। সাকিবের ব্যক্তিগত পারফরম্যান্স দেখেন, আমি তো মনে করি সে (এই বিশ্বকাপের) সেরা খেলোয়াড়। যদিও পেয়েছে আরেকজন। এর আগে কখনো এমন হয়েছে? বাংলাদেশের কার নাম শুনেছেন যে সেরা খেলোয়াড়?’

৪. ‘দক্ষিণ আফ্রিকার সঙ্গে আমরা ভালো করেছি, নিউজিল্যান্ডের সঙ্গে কপাল খারাপ। মুশফিকের মতো উইকেটরক্ষকের হাতে লেগে বেল পড়ে যায়? না হলে ওই ম্যাচ আমরা জিততাম না? সবাই মনে করে জিতত। মুশফিকের রান আউটটাও দুর্ভাগ্য। ও রানআউটটা না হলে আরও কিছু রান হতো। ওটা হলে আমরা ভালো অবস্থানে থাকি।’

৫. ‘ওয়েস্ট ইন্ডিজের সঙ্গে দুর্দান্ত জয়। অসাধারণ খেলেছে, বিদেশের মাটিতে জেতা সহজ কথা নয়। আমরা জিতেছি, খুব ভালো করেছি।’

৬. ‘আফগানিস্তানের সঙ্গেও জিতেছি। আশাই ছিল যে জিতব, আফগানিস্তান খারাপ দল নয়। বিশ্বকাপ যারা খেলে সবাই ভালো।’

৭. ‘(ট্রেন্ট ব্রিজে) অস্ট্রেলিয়ার সঙ্গে ৩৩৩ রান (৮ উইকেটে) করেছি, এত রান তাড়া করতে গেলে তো ১০০-১৫০ রানে অল আউট হয়ে যাওয়ার কথা। এই যে ৩৩৩ করেছি অনেক বড় অর্জন।’

৮ . ‘(বার্মিংহামে) ভারতের সঙ্গে আসেন না, কোনটা খারাপ খেলেছি? ভারতের সঙ্গে চিন্তা করেন, ওই ক্যাচ যদি মিস না হতো, যদি ধরে ফেলত তামিম—সব বদলে যেত! আমাদের একটা ক্যাচে সব শেষ হয়ে যাচ্ছে অথচ দল ভালো খেলছে। ভারতের সঙ্গে ২৮৫ করেছি, বুমরা-ভুবনেশ্বরদের তো ভয় পায়নি, ভালো খেলে আসছে ওরা। খারাপ কই দেখলেন, খারাপ খেলেনি আমাদের দল। যারা খেলা বোঝে তাদের জিজ্ঞেস করেন। শুধু পাকিস্তানের সঙ্গে পারফরম্যান্স পছন্দ হয়নি। এটার অনেক কারণ ছিল। দলের নির্বাচন ঠিক ছিল না। মানসিকভাবে উজ্জীবিত ছিল না। সেমিফাইনালে যেতে পারবে না তাই ওদের কাছে হয়তো মনে হয়েছে অর্থহীন ম্যাচ! সব ম্যাচ জিততে পারেনি আমরা। কিন্তু ভালো খেলেছে।’

বিসিবি সভাপতির এত সব ‘যদি-কিন্তু’ শুনে নিউজিল্যান্ড দাবি করতে পারে, ‘তাহলে তো আমরাই চ্যাম্পিয়ন! লর্ডসের ফাইনালে গাপটিলের ওই ওভার থ্রোয়ে যদি ছয় রান না হতো, আম্পায়াররা যদি আরেকটু বুঝে-শুনে সিদ্ধান্ত দিতেন! ক্যাচ ধরতে গিয়ে বোল্টের পা যদি সীমানা দড়িতে না পরত...!’
বাংলাদেশ দলের বিদায়ী কোচ স্টিভ রোডস এখন দাবি করতেই পারেন, ‘আমি পৃথিবীর সবচেয়ে দুর্ভাগা কোচ, দল বিশ্বকাপে সফল হওয়ার পরও আমাকে বিদায় জানিয়ে দিয়েছে বোর্ড!’