তাঁরা দুজন 'পেয়ার'-এর ইতিহাস গড়লেন

অনিচ্ছাকৃত এ রেকর্ডে জড়িয়ে থাকবে জনি বেয়ারস্টোর নাম। ছবি: এএফপি
অনিচ্ছাকৃত এ রেকর্ডে জড়িয়ে থাকবে জনি বেয়ারস্টোর নাম। ছবি: এএফপি
>লর্ডস টেস্টে ইংল্যান্ড ও আয়ারল্যান্ডের উইকেটরক্ষক মিলে এমন এক রেকর্ড গড়েছেন, যা টেস্ট ক্রিকেটে ১৪২ বছরের ইতিহাসে আগে কখনো দেখা যায়নি

লর্ডস টেস্টে কাল ইতিহাস গড়েছে দুই দলই। যেমন, আয়ারল্যান্ডের দ্বিতীয় ইনিংস টিকেছে মাত্র ৯৪ বল। টেস্ট ক্রিকেটে বলের হিসেবে এটি যুগ্মভাবে দ্বিতীয় সংক্ষিপ্ততম ইনিংস। আবার ইংল্যান্ড তাদের প্রথম ইনিংসে ৮৫ রান করেও জিতেছে এ টেস্ট। প্রথম ইনিংসে এর চেয়েও কম রান করে জয়ের নজির আছে মাত্র চারটি। এবং ১০০ বছরেরও বেশি সময় আগে। চার দিনের এই টেস্ট যেহেতু আড়াই দিনে গড়ানোর আগেই শেষ হয়েছে তাই পরিসংখ্যান ঘাঁটলে ছোট-খাটো আরও অনেক ইতিহাসই হয়তো বেরিয়ে আসবে। তবে কাল এমন একটি রেকর্ড হয়েছে, টেস্ট ক্রিকেটের ১৪২ বছরের ইতিহাসে যা এর আগে কখনোই দেখা যায়নি।

রেকর্ডটি বলার আগে খানিকটা মজা করাই যায়। আচ্ছা, প্রেমে পড়তে চায় না এমন বেরসিক কজন আছে পৃথিবীতে? কিন্তু সেটি যদি হয় ‘পেয়ার’ আর তা পেতে চাওয়া মানুষটি যদি হন ব্যাটসম্যান তাহলে কিন্তু বিপত্তি। ‘পেয়ার’ শুনলে যে কোনো ব্যাটসম্যানই চুপসে যান। না, এ সে ‘পেয়ার’ নয়, এ হলো টেস্টে দুই ইনিংসেই শূন্য পাওয়ার আরেক নাম, ক্রিকেটীয় পরিভাষায়—‘পেয়ার’। শূন্যের জোড়া আরকি। দুটি শূন্য পাশাপাশি থাকায় অনেকে বলেন ‘চশমা’। এবার আসল কথায় আসা যাক। লর্ডস টেস্টে অনিচ্ছাকৃত এই ‘চশমা’ পাওয়ার শুরুটা করেছিলেন জনি বেয়ারস্টো। আর কাল শেষ করেছেন গ্যারি উইলসন।

জটিল লাগছে? খুলেই বলা যাক। ইংল্যান্ডের দুই ইনিংসেই নির্ভেজাল ‘ডাক’ মেরেছেন মানে শূন্য রানে আউট হয়েছেন উইকেটরক্ষক বেয়ারস্টো। আয়ারল্যান্ডের উইকেটরক্ষক উইলসনও এক রত্তি কম যাননি। তিনিও শূন্য রানে আউট হয়েছেন আয়ারল্যান্ডের দুই ইনিংসেই। টেস্ট ক্রিকেটের ইতিহাসে ফল হওয়া কোনো ম্যাচে দুই দলেরই স্বীকৃত উইকেটরক্ষকের ‘পেয়ার’ পাওয়ার এটাই প্রথম নজির।

আইরিশ উইকেটরক্ষক গ্যারি উইলসনের নামও থাকবে এ রেকর্ডে। ছবি: টুইটার
আইরিশ উইকেটরক্ষক গ্যারি উইলসনের নামও থাকবে এ রেকর্ডে। ছবি: টুইটার

টেস্ট ক্রিকেটে এর আগে কোনো ম্যাচে দুই দলের উইকেটরক্ষক মিলিয়ে মোট তিনটি ‘ডাক’ মারার নজির ছিল ৯বার। সবশেষ এমন দেখা গেছে ২০১১ সালে গল টেস্টে। অস্ট্রেলিয়ার প্রথম ইনিংসে ২৪ রান করলে দ্বিতীয় ইনিংসে শূন্য রানে আউট হয়েছিলেন উইকেটরক্ষক ব্রাড হাডিন। আর শ্রীলঙ্কার দুই ইনিংসেই শূন্য রানে আউট হন উইকেটরক্ষক প্রসন্ন জয়াবর্ধনে। দুই দলের স্বীকৃত উইকেটরক্ষক মিলে মোট তিনটি ‘ডাক’ মারার প্রথম নজির দেখা যায় ১৯৫৫ সালে অকল্যান্ড টেস্টে। নিউজিল্যান্ডের হয়ে দুই ইনিংসেই শূন্য রানে আউট হয়েছিলেন উইকেটরক্ষক ইয়ান কোলকোউন। আর সেই ম্যাচে ইনিংস ব্যবধানে জয়ী ইংল্যান্ডের হয়ে মাত্র এক ইনিংসে ব্যাট করার সুযোগ পেয়েছিলেন উইকেটরক্ষক গডফ্রে ইভানস। বলা বাহুল্য কোনো রান করতে পারেননি।

১৯৫৫ থেকে ২০১১—এই ৫৬ বছরে দুই দলের উইকেটরক্ষকের এক ম্যাচে মোট তিনবার ‘ডাক’ মারার নজির দেখা গেছে নয়বার। আট বছর পর বেয়ারস্টো-উইলসন মিলে লর্ডস টেস্টে এমন নজিরই গড়লেন যা ছাপিয়ে গেল সবকিছু। টেস্ট ইতিহাসে সব মিলিয়ে উইকেটরক্ষকদের ‘পেয়ার’ পাওয়ার সংখ্যা কিন্তু মোটেও কম নয়। এ পর্যন্ত মোট ৫১জন উইকেটরক্ষক ‘পেয়ার’ পেয়েছেন। শূন্যের এমন ভালোবাসা নিশ্চয়ই তাঁরা চাননি!