দেশের প্রয়োজনের মুহূর্তে আমির টেস্ট ছাড়লেন!

টেস্ট থেকে অবসরের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন পাকিস্তানি পেসার মোহাম্মদ আমির। ছবি : এএফপি
টেস্ট থেকে অবসরের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন পাকিস্তানি পেসার মোহাম্মদ আমির। ছবি : এএফপি
>টেস্ট ক্রিকেট থেকে অবসর নিয়েছেন পাকিস্তানের পেসার মোহাম্মদ আমির। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এ সিদ্ধান্তের কথা জানিয়ে দিয়েছেন ২৭ বছর বয়সী এ তারকা। আমিরের সিদ্ধান্তে বিস্ময় প্রকাশ করেছেন ওয়াসিম আকরাম, শোয়েব আখতার, রমিজ রাজার মতো পাকিস্তানের সাবেকরা

বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপে অক্টোবরে শ্রীলঙ্কার মুখোমুখি হওয়ার পর অস্ট্রেলিয়ার সঙ্গে সিরিজ খেলবে পাকিস্তান। এমন গুরুত্বপূর্ণ সময়ে মোহাম্মদ আমিরের টেস্ট ছেড়ে দেওয়া আঘাত প্রত্যাশা করেনি পাকিস্তান ক্রিকেট। আর স্বাভাবিকভাবেই ২৭ বছর বয়সী এ পেসারের টেস্ট ছেড়ে দেওয়ার সিদ্ধান্তে বিস্ময় প্রকাশ করেছেন ওয়াসিম আকরাম, শোয়েব আখতার, রমিজ রাজার মতো পাকিস্তানের সাবেক তারকারা।

সাতাশ-আটাশ বছর বয়স একজন পেসারের সেরা ফর্মের সময়। এ বয়সে আমির কেন টেস্ট থেকে অবসর নিলেন বুঝতে পারছেন না ওয়াসিম আকরাম, ‘আমার কাছে আমিরের অবসর নেওয়ার সিদ্ধান্তটি বেশ আশ্চর্যের। কেননা ২৭-২৮ বছর বয়সেই একজন পেসারের সামর্থ্য সবচেয়ে বেশি থাকে। আর টেস্ট ক্রিকেটই একমাত্র সংস্করণ যেখানে একজন পেসারের সামর্থ্যের সর্বোচ্চ পরীক্ষা হয়।’ নভেম্বরে অস্ট্রেলিয়ার সঙ্গে দুই টেস্ট ও ২০২০ সালের জুলাইয়ে ইংল্যান্ডের সঙ্গে তিন টেস্টের সিরিজ খেলবে পাকিস্তান। এমন সময়ে আমিরকে না পাওয়া অনেক বড় এক ধাক্কা। ফলে স্বাভাবিকভাবেই চিন্তিত ওয়াসিম আকরাম, ‘সামনে অস্ট্রেলিয়ার সঙ্গে দুটি ও ইংল্যান্ডের সঙ্গে তিন টেস্ট খেলতে হবে। আমিরকে দরকার ছিল।’

বিশ্ব ক্রিকেটে উল্কার মতো আবির্ভাব ঘটা এ পেসারের টেস্ট ছেড়ে দেওয়ার সিদ্ধান্তে অসন্তুষ্ট রমিজ রাজাও। টুইটারে ওয়াসিম আকরামের সঙ্গেই সুর মিলিয়েছেন বর্তমানে এ ধারাভাষ্যকার, ‘সাতাশ বছর বয়সে আমিরের টেস্ট থেকে অবসর নেওয়ার সিদ্ধান্তে আমি বেশ হতাশ হয়েছি। যে টেস্ট ক্রিকেট কিংবদন্তি বানায়, সে সংস্করণের প্রতি অবহেলা করা উচিত হয়নি ওর। ওর সিদ্ধান্ত পাকিস্তান ক্রিকেটের চাহিদার সঙ্গে সংগতিপূর্ণ নয়। এখনই বরং ওকে টেস্টে বেশি দরকার ছিল। ওর ওপর এত দিন যে আস্থা রাখা হয়েছে, তার প্রতিদান দেওয়ার সময় ছিল এখনই।’

‘রাওয়ালপিন্ডি এক্সপ্রেস’খ্যাত শোয়েব আখতার অবশ্য ওয়াসিম-রমিজের মতো রাখঢাক রাখেননি। ক্ষোভটা সরাসরি উগরে দিয়েছেন সাবেক এ পেসার। নিজের ইউটিউব চ্যানেলে শোয়েব বলেছেন, টেস্ট ছেড়ে যেসব খেলোয়াড় ওয়ানডে আর টি-টোয়েন্টি খেলতে চায়, নিজে নির্বাচক হলে তাদের সীমিত ওভারের ক্রিকেটেও দলে নিতেন না। এ নিয়ে শোয়েব বলেন, ‘আমি নির্বাচক হলে যেসব ক্রিকেটাররা টেস্ট ছেড়ে দেয় তাদের সীমিত ওভারের ক্রিকেটেও নিতাম না। টাকা কামাতে চাইলে কামাও, সেটিরও নির্দিষ্ট সময় আছে। কিন্তু নিজের দেশ যখন তোমাকে চায়, তখন তুমি দেশকে অবজ্ঞা করতে পার না।’

আমিরের দেখানো পথ ধরে ওয়াহাব রিয়াজ, হাসান আলী, জুনায়েদ খানের মতো পেসাররাও টেস্টকে অবজ্ঞা করে বেশি বেশি সীমিত ওভারের ক্রিকেট খেলার দিকে ঝুঁকতে পারেন বলে দুশ্চিন্তা করছেন শোয়েব, ‘এখনকার ছেলেরা শুধু টি-টোয়েন্টি খেলতে চায়। ওয়ানডে খেলাও তাদের কাছে অনেক বড় ব্যাপার। মোহাম্মদ আমির, জুনায়েদ খান, হাসান আলী, ওয়াহাব রিয়াজ—এরা সবাই শুধু সীমিত ওভারের ক্রিকেট খেলতে চায়।’

স্পট ফিক্সিংয়ে জড়িয়ে পাঁচ বছরের জন্য নিষিদ্ধ ছিলেন আমির। সাজা ভোগের পর পাকিস্তান ক্রিকেট আমিরের ওপর আস্থা রেখে তাঁকে দলে ডেকেছিল। এ ব্যাপারটাই পোড়াচ্ছে শোয়েবকে, ‘আমিরের ওপর বিশ্বাস রেখে তাঁকে আবার দলে ডাকা হয়েছিল, সে বিশ্বাসের প্রতিদান দেওয়ার সময় ছিল এখন। পাকিস্তানের টেস্ট দল এখন বাজে অবস্থায়। এ সময় আমিরকে দরকার ছিল। মনে আছে, হাঁটুতে চোট থাকা সত্ত্বেও ইংল্যান্ড আর নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজে খেলেছিলাম।’

শোয়েব শুধু সমালোচনাই করেননি প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের হস্তক্ষেপও চেয়েছেন, ‘আমি পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ড ও প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানকে অনুরোধ করছি, তাঁরা যেন বিষয়টি একটু দেখেন। মাত্র সাতাশ বছর বয়সে আমিরের অবসর নেওয়ায় বোঝা গেল খেলোয়াড়দের মানসিকতা এখন কেমন।'

আমির অবসরের বিবৃতিতে অবশ্য বলেছেন, ‘এটা সহজ সিদ্ধান্ত ছিল না। বেশ কিছুদিন থেকেই ভেবেছি। সামনেই আইসিসি বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ শুরু হচ্ছে। পাকিস্তানও এখন বেশ কিছু দুর্দান্ত তরুণ ফাস্ট বোলার পেয়ে গেছে। তাই এখনই টেস্ট ক্রিকেট নিয়ে নিজের ভবিষ্যৎ ঠিক করে ফেলার সঠিক সময় ছিল, যেন নির্বাচকেরা যথাযথভাবে পরিকল্পনা করতে পারেন।’