টানা চার হার এড়াতে পারবে বাংলাদেশ?

কলম্বোয় অনুশীলনে সৌম্য-মুশফিকদের চোখ কোথায়? নিশ্চয়ই জয়ে। ছবি: এএফপি
কলম্বোয় অনুশীলনে সৌম্য-মুশফিকদের চোখ কোথায়? নিশ্চয়ই জয়ে। ছবি: এএফপি
>

সিরিজের দ্বিতীয় ওয়ানডেতে আজ শ্রীলঙ্কার মুখোমুখি হচ্ছে বাংলাদেশ। আজ হারলে সিরিজ হার তো হবেই, সব মিলিয়ে টানা চার ম্যাচ হারবে বাংলাদেশ। ওয়ানডেতে সবশেষ কবে টানা চার ম্যাচ হেরেছিল বাংলাদেশ?

অন্তত ওয়ানডেতে দৃশ্যটা একদম পাল্টে গেছে। একটা সময় ছিল যখন পাঁচ, দশ, পনেরো কিংবা বিশ ম্যাচ হারের পর একটা জয়ে মিলত ঈদের আনন্দ। স্কুলে স্কুলে হইহুল্লোড়, রং খেলা, রাস্তায় আনন্দ মিছিল—আরও কত–কী! সে দিনগুলো সযত্নে তুলে রাখা আছে ‘নস্টালজিক’ অ্যালবামে। এখন দিন পাল্টেছে। বাংলাদেশ দল টানা দুই কিংবা তিন ম্যাচ হারলেই গেল গেল রব ওঠে। অমুক কোচের চাকরি খাও, তমুক খেলা পারে না, একে দলে নাও—রব তোলেন সমর্থকেরা।

সমর্থকদের দোষ দেওয়া যায় না। হৃদয়ের দাবি না মিটলে ন্যায্য-অন্যায্য অনেক কথাই বেরিয়ে আসে। এই যেমন ধরুন বিশ্বকাপে অষ্টম হওয়ার পর থেকেই জাতীয় দল নিয়ে এন্তার সমালোচনা করছেন সমর্থকেরা। ওদিকে বাংলাদেশ যে বিশ্বকাপে খারাপ খেলেনি, তা মনে করেন আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের বেশ কজন সাবেক-বর্তমান তারকা। আসল সমস্যা অন্য খানে, ভালো করতে করতে প্রত্যাশার পারদ উঁচুতে তুললে তা নামাতে চায় কে!

অন্তত ওয়ানডেতে বাংলাদেশ দল এ কথা বলাই যায়। এ সংস্করণে বাংলাদেশ চার-পাঁচ বছর ধরেই দাপুটে দল। মাঝেমধ্যে যখন ছন্দপতন ঘটে, কেবল তখনই গেল গেল রব ওঠে। এ ছাড়া যেন সব ঠিকই আছে! মূল কথা হলো, জয়। জিতলে সব ঠিক। হারলে কী ঘটে, তা ম্যাচ শেষ হওয়ার কিছুক্ষণ আগ থেকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে থাকলেই টের পাওয়া যায়। সমর্থকেরা তাঁদের জীবনের মতো ম্যাচেও টানা হারতে চায় না। আর তাই বিশ্বকাপে আফগানিস্তানের বিপক্ষে জেতার পর বাংলাদেশ দল টানা তিন ম্যাচ হারায় দেশে ক্ষোভের ধোঁয়ার উদ্‌গিরণ ঘটছে। খেলোয়াড়দের সমালোচনা করা থেকে পিছপা হননি স্বয়ং বিসিবি সভাপতিও!

রসিকতা করে অনেকে বলতে পারেন, এ দোষ তো ক্রিকেটারেরই। সমর্থকদের মন থেকে দীর্ঘ টানা হারের স্মৃতিগুলো মুছে ফেলার কী দরকার ছিল! সত্যি শেষ চার বছরে বাংলাদেশ দলের টানা তিন কিংবা চার ম্যাচ হারা বেশ বিরল ব্যাপারই। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে আজ হারলে সেটি হবে টানা চার ম্যাচ। বাংলাদেশ সবশেষ কবে টানা চার ম্যাচ হেরেছে, সেটি দলটির পাঁড়ভক্তও হয়তো এক লহমায় বলতে পারবেন না। এই দোষ (!) ক্রিকেটারদেরই। অন্তত ওয়ানডেতে যে দলটির টানা এত ম্যাচ হারের বদঅভ্যাস এখন খুব একটা নেই বললেই চলে।

প্রমাণ দেবে পরিসংখ্যান। এ বছর তো নয়ই, গত বছরও ওয়ানডেতে টানা চার ম্যাচ হারেনি বাংলাদেশ। তার আগের বছর? হ্যাঁ, ২০১৭ সালে চ্যাম্পিয়নস ট্রফিতে নিউজিল্যান্ডকে হারানোর পর সেমিতে ভারতের কাছে হার, এরপর দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে ওয়ানডে সিরিজে হোয়াইটওয়াশ হলো বাংলাদেশ। এই হলো টানা চার ম্যাচ হারের সবশেষ নজির। কলম্বোয় আজ তার পুনরাবৃত্তি না ঘটাই ভালো। খেলা কিংবা জীবন—দুটি মঞ্চেই টানা হার সহ্য করে নেওয়ার সহন শীলতাটুকু যে এখন শুধু বাংলাদেশ নয়, দুনিয়া থেকেই উবে যাওয়ার পথে!

২০১৬ সালে শেষ দিকে এসেও টানা চার হারের মুখ দেখেছে বাংলাদেশ। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে চট্টগ্রামে সিরিজের তৃতীয় ম্যাচে হার দিয়ে সেই বৃত্তের শুরু, এরপর নেলসনে তৃতীয় ম্যাচে নিউজিল্যান্ডের কাছে হার দিয়ে বৃত্তপূরণ। তার আগের বছর টানা চার ম্যাচ হার দূরের কথা, টানা তিন ম্যাচও হারেনি বাংলাদেশ।

অথচ একটা সময় ছিল, যখন হারের পর হারে ডুবে যেতে হতো। হতাশার সমুদ্রে। ‘একদিন বড় দল হয়ে উঠব’—এই আশাটুকু বাঁচিয়ে রাখতে একটা জয় হয়ে আসত সেই সমুদ্রে ভেসে থাকা খড়কুটো হয়ে। এই আমরাই তা আঁকড়ে ধরে ফেলে আসা পথটুকু পাড়ি দিয়েছি। ১৯৯৯ সালের অক্টোবর থেকে ২০০৪ সালের ফেব্রুয়ারি—এ সময়ে টেস্ট ও ওয়ানডে মিলিয়ে বাংলাদেশ জয়বঞ্চিত ছিল ৭৫ ম্যাচ। আর ওয়ানডেতে টানা সর্বোচ্চ ২৩ ম্যাচ হারের বিশ্ব রেকর্ডও এ সময়ের ভেতরে গড়েছে বাংলাদেশ। ৮ অক্টোবর ১৯৯৯ থেকে ৯ অক্টোবর ২০০২, অনাকাঙ্ক্ষিত বিশ্ব রেকর্ড গড়ার সেই বিভীষিকাময় সময়!

সে সময় এখন ফিরে এলে কী ঘটতে পারে, তা একবার কল্পনা করে দেখা যায়। কারণ, বাস্তবে দাহকালের সে দিনগুলো ফিরে আসার সম্ভাবনা নেই বললেই চলে। দিন বদলেছে, আর এই বদলটুকু ক্রিকেটারদেরই অবদান। সাক্ষী সমর্থকেরাই।