ব্যাটিং নিয়ে চিন্তা নেই, বলেছিলেন কোচ

আজ আত্মাহুতির মিছিলে নেমেছেন বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানরা। ছবি: রয়টার্স
আজ আত্মাহুতির মিছিলে নেমেছেন বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানরা। ছবি: রয়টার্স
>সিরিজের আগে ভারপ্রাপ্ত কোচ খালেদ মাহমুদ বলেছিলেন, ব্যাটিং নিয়ে চিন্তিত নন। বিশ্বকাপের খেলা দেখে তাঁর মনে হয়েছে বোলিং নিয়েই চিন্তা বেশি। সিরিজের প্রথম ম্যাচের পর আজও তাঁকে ভুল প্রমাণ করছেন দলের ব্যাটসম্যানরা

সাব্বির রহমানের ঝাঁপিয়ে পড়া দেখেও বোঝা যাচ্ছিল, এ চেষ্টা ব্যর্থ হচ্ছে। ধনঞ্জয়া ডি সিলভার বলটা ঠেলে দিয়েই কী বুঝে দৌড় শুরু করেছিলেন, মুশফিকের না শুনে ফেরার আগেই স্টাম্প ভেঙে গেল। বাংলাদেশের স্কোর তখন ৫ উইকেটে ৮৮। আরেকটি ব্যাটিং বিপর্যয় চোখ রাঙাতে শুরু করল বাংলাদেশকে।

প্রথম ওয়ানডেতে ৩৯ রানেই ৪ উইকেট হারিয়ে ফেলেছিল বাংলাদেশ। আজ সিরিজের দ্বিতীয় ওয়ানডেতে চতুর্থ উইকেট হারানোর আগে অন্তত আরও ২৯ রান যোগ করেছে দল। প্রথম দিনের উইকেট ব্যাটিং সহায়ক ছিল। আর আজকের উইকেট মন্থর, তাতে রান নেওয়া কঠিন—এসব চিন্তা করলে বলতেই হবে, বাংলাদেশ ভালোই করেছে! শুধু গত ম্যাচে সাব্বির-মুশফিক ১১১ রানের জুটি গড়েছিলেন, আজ সেটা মাত্র ২০ যোগ করাতেই ঝামেলা হয়ে গেছে।

শুধু স্কোরকার্ড দেখলে সেটাই মনে হতে পারে। কিন্তু বাস্তবতা ভিন্ন। সেদিন বাংলাদেশের টপ অর্ডারকে লাসিথ মালিঙ্গা নামক এক অতিমানবের মুখোমুখি হতে হয়েছিল। তামিম ইকবাল ও সৌম্য সরকার যে বলে আউট হয়েছেন, তা আসলেই ঠেকানো প্রায় অসম্ভব। আজ বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানদের কোনো আউটের ক্ষেত্রে সেটা বলার উপায় আছে?

অথচ সিরিজ শুরু হওয়ার আগে কোচ বলেছিলেন, ব্যাটিং নিয়ে খুব একটা চিন্তিত নন। বিশ্বকাপে ভালো ফর্মে ছিল দল। বরং বোলিং তাঁদের ভাবাচ্ছিল। এ কারণেই তড়িঘড়ি করে শফিউলকে ডেকে আনা হয়েছিল। বিশ্বকাপে ও প্রস্তুতি ম্যাচে বাংলাদেশের ব্যাটিং দেখে আত্মবিশ্বাসী হয়ে উঠেছিলেন কোচ। মোহাম্মদ মিঠুনকে সাকিব আল হাসানের জায়গায় তুলে এনে লম্বা ব্যাটিং লাইন আপ সৃষ্টি করে বিকল্প উপায়ও তৈরি করে রাখা।

বিশ্বকাপে ভালো ব্যাটিং—এ বাক্য যে কতটা বিভ্রান্তিকর, প্রথম দুই ম্যাচেই টের পাওয়া যাচ্ছে। বিশ্বকাপে বাংলাদেশের ব্যাটিংয়ের শেষ কথা ছিলেন সাকিব। তাঁর সঙ্গে মুশফিকুর রহিমও ভালো ছন্দে ছিলেন। এক ম্যাচে ভালো করেছিলেন লিটন দাসও। কিন্তু লিটন ও সাকিব এ সিরিজে নেই। ফলে ব্যাটিংয়ের কঙ্কালও বেরিয়ে এসেছে। বিশ্বকাপের ফর্ম ধরে রেখে দুই ম্যাচেই ভরসার জায়গা ওই মুশফিকই। দুর্ভাগ্যজনকভাবে রান আউট হওয়ার আগ পর্যন্ত গত ম্যাচের হাফ সেঞ্চুরিয়ান সাব্বিরও ভালোই ছন্দে ছিলেন। কিন্তু বাকিরা?

উইকেট খুব একটা ব্যাটিং সহায়ক নয়। ২৩০/৪০ রানও লড়াকু স্কোর। বল থেমে আসছে এটাও সত্যি। কিন্তু বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানদের আউট হওয়ার ধরন কোনো কোচকেই স্বস্তি দেবে না। ফর্ম হারানো সৌম্য ফুল টসে এলবিডব্লু হয়েছেন। টানা ছয় ইনিংসে বোল্ড হওয়ার পথে তামিম অনেক বাইরের বলকে টেনে আনলেন স্টাম্পে। মোহাম্মদ মিঠুন যেন সাকিবের শূন্যতা পূরণের চেয়ে নিষেধাজ্ঞা থেকে ফেরা আকিলা ধনঞ্জয়াকে সেরা অভ্যর্থনা জানানোর উপায় খুঁজে নিতে চাইলেন। আর মাহমুদউল্লাহ একজন অফ স্পিনারের ভেতরে ঢোকা বলে কাট করতে গিয়ে হলেন বোল্ড।

সাব্বিরের আউটের ঘটনা তো শুরুতেই বলা হলো। আর মোসাদ্দেক আউট হলেন বিশেষ করে তাঁর জন্য পাতা ফাঁদে পা দিয়ে। শর্ট বলে দুর্বলতা থাকায় প্রথম ম্যাচের আগে তাঁকে আলাদা করে অনুশীলন কোচ মাহমুদ ও ব্যাটিং কোচ। কিন্তু একটি ধীর গতির বাউন্সারেই ক্যাচ দিয়ে ফিরে গেছেন মোসাদ্দেক, দলকে ১১৭ রানে রেখে। ম্যাচে লড়াকু স্কোর এখনো গড়া সম্ভব। কিন্তু ব্যাটসম্যানদের এভাবে আত্মাহুতির ইচ্ছা দেখে সে আশা করা কঠিন।

গত ম্যাচেই তামিম মাহমুদউল্লাহর আউট নিয়ে বলেছিলেন কাউকে একা দায় দিতে চান না। আজ দ্বিতীয় ম্যাচে সে উপায়ও থাকছে না। সবাই মিলে যখন ভুল করে, তখন কাউকে একা দায়ী করা আসলেই কঠিন।