কেন পথ খুঁজে পাচ্ছেন না তামিম

তামিমের বর্তমান ফর্ম এই ছবির মতোই। ছবি: এএফপি
তামিমের বর্তমান ফর্ম এই ছবির মতোই। ছবি: এএফপি
>তামিম ইকবাল টানা ছয় ম্যাচে বোল্ড হয়েছেন। ওয়ানডেতে সেঞ্চুরি পান না এক বছর হয়ে গেল। বিশ্বকাপটা ভালো যায়নি। ভালো যাচ্ছে না শ্রীলঙ্কা সফরও।

ট্রেন্ট ব্রিজে তামিম ইকবালকে বোল্ড করে মিচেল স্টার্কের উদযাপনটা বেশ মনে পড়ে। চতুর্থ স্টাম্পে করা অস্ট্রেলিয়ান ফাস্ট বোলারের ঘণ্টায় ১৪৬ কিলোমিটার গতির বলটা তামিম ‘প্লেড অন’ হয়েছেন। বোল্ড করে তামিমের দিকে মুখ টিপে এমনভাবে হাসছিলেন স্টার্ক, যেন বলতে চাইছিলেন, ‘এভাবে কেউ আউট হয়!’

ব্যাটে লেগে বল স্টাম্পে চলে এলে কখনো ভাগ্যের দোষ দেওয়া যায়। কিন্তু ঘটনার পুনরাবৃত্তি হলে কী বলা যায়? তামিম আজও প্লেড অন হলেন। বাঁহাতি ওপেনারের টেকনিকে সমস্যা? যদি আজও তিনি ভাগ্যকে দোষ দেন, তাহলে টানা ছয় ম্যাচে বোল্ড হওয়াকে কী বলবেন? তামিমের ১২ বছরের ক্যারিয়ারেই তো এমন ঘটনা ঘটেনি! বিশ্বকাপে ট্রেন্ট ব্রিজে স্টার্কের বলে বোল্ড হওয়া দিয়ে শুরু। পরে আফগানিস্তান, ভারত, পাকিস্তান—টানা চার ম্যাচে বোল্ড হয়েছেন তামিম। টানা দুই ম্যাচে বোল্ড হলেন শ্রীলঙ্কা সফরেও।

প্রেমাদাসায় গত ম্যাচে লাসিথ মালিঙ্গার দুর্দান্ত ইয়র্কার না সামলাতে না পেরে ভারসাম্য হারিয়ে হুড়মুড়িয়ে উইকেটে পড়ে গেলেন। বোল্ডও হলেন। আজ মালিঙ্গা নেই। কিন্তু তাঁর মতো করেই দুর্দান্ত ইয়র্কার মারলেন নুয়ান প্রদীপ। সেটি সামলাতে না পেরে তামিম আবারও উইকেটে পড়ে গেলেন। ইয়র্কার খেলতে গিয়ে শরীরের ভারসাম্য ঠিক না থাকলেও এ যাত্রা স্টাম্প রক্ষা পেয়েছে। এলবিডব্লুও হননি। মনে হচ্ছিল, আজ অন্তত নিজেকে ফিরে পাওয়ার চ্যালেঞ্জটা নেবেন। তামিম সেটিও পারেননি। ইসুরু উদানার বলে বোল্ড হয়ে ফিরেছেন। এই সফরে তামিম শুধু ব্যাটসম্যানই নন, খেলছেন অধিনায়ক হয়ে। অধিনায়ক যখন সামনে থেকে নেতৃত্ব দিতে পারেন না, সেটির প্রভাব দল পড়বেই। এবং তা পড়ছেও।

এফটিপি অনুযায়ী শ্রীলঙ্কা সফরের পর এ বছর আর ওয়ানডে ক্রিকেট খেলবে না বাংলাদেশ। এখনো পর্যন্ত বাংলাদেশ খেলেছে ১৭ ওয়ানডে। এ বছর বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানদের মধ্যে সবার ওপরে সাকিব আল হাসান, ১১ ম্যাচে ৯৩.২৫ গড়ে ২ সেঞ্চুরি, ৭ ফিফটিতে করেছেন ৭৪৬ রান। ১৭ ওয়ানডেতে ৪৬.৭৮ গড়ে ৬৫৫ রান করে দুইয়ে মুশফিক। তিনে আছেন তামিম, সমান ম্যাচে করেছেন ৪৪০ রান। এ বছর রানসংখ্যায় সবার ওপরে থাকা সাকিবের সঙ্গে তামিমের পার্থক্য এতটাই। গড়টা শুনে বাঁহাতি ওপেনার অস্বস্তিই বোধ করবেন—২৫.৮৮। স্ট্রাইকরেটও খুব একটা উজ্জ্বল নয়—৭২.২২। ওয়ানডেতে তামিম তিন অঙ্কের দেখা পান না এক বছর হয়ে গেল।

বিশ্বকাপে প্রত্যাশা অনুযায়ী ভালো খেলতে পারেননি। শ্রীলঙ্কা সফরেও দুঃসময় পেছনে ফেলতে পারেননি। কী হয়েছে তামিমের—এ প্রশ্ন গত কিছুদিনে এতবার হয়েছে, নতুন করে তোলাটাও বাহুল্য। বিশ্বকাপের পর তামিম দাবি করেছেন, তাঁর টেকনিকে কোনো সমস্যা নেই। দলের ব্যাটিং কোচ নিল ম্যাকেঞ্জি নাকি বলেছেন, টেকনিকে সমস্যা হলে তাঁকে বলতেন। টানা ৬ ম্যাচে বোল্ড হওয়া, বারবার ইয়র্কারে ভারসাম্য রক্ষা করতে না পেরে উইকেটে ভূপাতিত হওয়া, বল স্টাম্পে টেনে আনা—টেকনিকে ত্রুটি একেবারেই নেই, সেটি কি এখন আর বলা যায়?

যদি টেকনিকে সমস্যা না থাকে, তবে সমস্যাটা কি মনস্তাত্ত্বিক? তামিম দুঃসময়ের মধ্য দিয়ে যাচ্ছেন, এটি প্রতিপক্ষের অজানা নয়। প্রতিপক্ষ বোলাররা সেটিই কাজে লাগাচ্ছেন। কিন্তু তামিম কেন বের হয়ে আসতে পারছেন না ব্যর্থতার বৃত্ত থেকে? এটা ঠিক তাঁর চেষ্টার ত্রুটি নেই। ইংল্যান্ডেই তিনি নিয়মিত ঐচ্ছিক অনুশীলনে গিয়েছেন, ব্যাটিং নিয়ে কাজ করেছেন। দেশে ফিরে যখন সবাই ছুটিতে, তামিম মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে ব্যাটিং অনুশীলন চালিয়ে গেছেন। কালও তো প্রেমাদাসায় ঐচ্ছিক অনুশীলনে তামিম নেটে ব্যাটিং নিয়ে কাজ করেছেন। তার মানে তিনি চেষ্টা করছেন।

আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে তামিম এমন চাপে আগেও পড়েছেন। সেখান থেকে বেরিয়েও এসেছেন। তবে এবার তিনি চাপটা এমনভাবে নিয়ে নিয়েছেন, সেটি থেকে মুক্ত হতে পারছেন। সারাক্ষণ হয়তো ভাবছেন, ‘কেন খারাপ করছি, কেন পারছি না...।’ এবার আবার যোগ হয়েছে অধিনায়কত্বের চাপ। হয়তো তিনি ভাবছেন, ‘আমি ভালো না করলে দলের ওপর চাপ বাড়বে।’ টেকনিক্যাল সমস্যা, মনস্তাত্ত্বিক সমস্যা—তামিম যেন এক গভীর কুয়ায় পড়েছেন। সেখান থেকে বের হতে চেষ্টা করছেন, হাঁসফাঁস করছেন, চিৎকার করছেন—কিন্তু বের হওয়ার পথ খুঁজে পাচ্ছেন না!

এ কঠিন সময় পেছনে ফেলতে তামিমের লাগবে একটা দুর্দান্ত ইনিংস। সেই ইনিংসটা তিনি যত দ্রুত খেলবেন, তাঁর জন্য, দলের জন্য ততই মঙ্গল!