সৌম্যর চোখে ভুল সবকিছুতেই, বিশেষ করে ব্যাটিংয়ে

কাল ফিফটি পেলেও দলের হার এড়াতে পারেননি সৌম্য। ছবি: এএফপি
কাল ফিফটি পেলেও দলের হার এড়াতে পারেননি সৌম্য। ছবি: এএফপি
>শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে সিরিজ হারের পেছনে ব্যাটিং, বোলিং ও ফিল্ডিং—তিন বিভাগেই ব্যর্থতা স্বীকার করে নিলেন সৌম্য সরকার। জিতলে প্রশ্নগুলো উঠত না বলেও মনে করেন এ ব্যাটসম্যান

প্রথম ম্যাচে ৯১ রানের হার। পরের ম্যাচে হারটা ৭ উইকেটে। আর কাল শেষ ম্যাচে হারতে হয়েছে ১২২ রানে। হারের ব্যবধানগুলোই বলে দেয়, তেমন কোনো প্রতিরোধই গড়তে পারেনি দল। ব্যাটিং, বোলিং ও ফিল্ডিং—তিন বিভাগেই ব্যর্থ হলে যা হয় আরকি। কাল শেষ ম্যাচে হোয়াইটওয়াশ নিশ্চিত হওয়ার পর সৌম্য সরকারও স্বীকার করে নিলেন এ তিনটি বিভাগেই ভালো করতে পারেনি বাংলাদেশ। বিশেষ করে ব্যাটিংয়ে, আরও খোলাসা করে বললে টপ অর্ডার ব্যাটসম্যানেরা ব্যর্থ হয়েছে। টপ অর্ডার ভালো করলে সিরিজের ফল অন্যরকমও হতে পারত।

টপ অর্ডার ব্যাটসম্যানদের মধ্যে সৌম্য নিজেও একজন। দোষটা তাঁর ওপরও বর্তায়। সাকিব আল হাসানের অনুপস্থিতিতে দায়িত্ব নিতে হতো তাঁকেও। মুশফিকুর রহিম একাই যা একটু লড়েছেন আর শেষ ম্যাচে দীর্ঘ রানখরা কাটিয়ে ফর্মে ফেরার আভাস দিয়েছেন সৌম্য (৬৯)। কিন্তু এ ইনিংস লঙ্কাওয়াশ এড়াতে যথেষ্ট হয়ে ওঠেনি। এ সিরিজে শীর্ষ পাঁচ রান সংগ্রাহকের মধ্যে বাংলাদেশ থেকে শুধু মুশফিক। এ পরিসংখ্যানই বলে দেয়, টপ অর্ডার মোটেও ভালো করতে পারেনি। শুধু ব্যাটিং নয়, বোলিংয়েও ধার ছিল না আর ফিল্ডিংয়ে ক্যাচ ফসকেছে প্রতি ম্যাচেই।

ম্যাচ শেষে সংবাদ সম্মেলনে সৌম্য সরকার তাই সত্যটা স্বীকার করে নিলেন, ‘তিন বিভাগেই আমরা ভুল করেছি। বিশেষ করে ব্যাটিংয়ে এবং টপ অর্ডারে। প্রথম চার-পাঁচ ব্যাটসম্যান রান পেলে ফলটা অন্যরকমও হতে পারত।’ দৃষ্টিকটু ব্যাপার হলো, তিন ম্যাচেই প্রায় একই ভুল করেছেন দলের কিছু খেলোয়াড়। ব্যাটসম্যানরা নিজেদের আউট থেকে শিক্ষা নেননি, তেমনি বোলাররাও। মুখে বললেও মাঠের খেলায় ভুল থেকে কেউ শিক্ষা নেননি। সৌম্যর ব্যাখ্যা, ‘হ্যাঁ, দেখতে বাজে লেগেছে। একই জায়গায় একইরকম ভুল হয়েছে। এটা হয়তো অন্যরকম হতে পারত। যেমন ভালো বলে উইকেট নিয়ে গেলে অতটা মনে হতো না।’

সবাই মিলে ভালো পারফর্ম করতে না পারার জন্যই এই সিরিজ হার, মনে করছেন সৌম্য। ইংল্যান্ডে বিশ্বকাপের পরপরই সম্পূর্ণ ভিন্ন কন্ডিশনে এ সিরিজ খেলেছে বাংলাদেশ। কন্ডিশনের দোহাই দিচ্ছেন না এ ব্যাটসম্যান। সবাই মিলে ভালো খেলা উচিত ছিল বলেই মনে করছেন তিনি। সিরিজটা নিয়ে সবাই অনেক ভেবেছে, কীভাবে বাজে সময় কাটিয়ে ওঠা যায় তা নিয়ে খেলোয়াড়েরা আলোচনা করেছেন নিজেদের মধ্যে। সৌম্য মনে করেন, খুব বেশি ভাবনাও অনেক সময় ভালো খেলার পথে বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারে।

শ্রীলঙ্কার মাটিতে তিন ম্যাচে বাংলাদেশ শুধু হারেনি, সঙ্গে হারের ধরনও যেকোনো ক্রিকেটপ্রেমীর চোখে বিঁধবে। কোনো ম্যাচেই প্রতিপক্ষের ওপর তেমন প্রভাব বিস্তার করতে পারেনি সফরকারিরা। দু-একটা সময় চাপে রাখলেও চাপটা ধরে রাখতে পারেনি দল। এ নিয়ে সৌম্যর ব্যাখ্যা, ‘উইকেটগুলো দ্রুত পড়েছে। হয়তো একসঙ্গে দুটো পড়েছে, আমরা আরেকটু যদি থাকার চেষ্টা করতাম তাহলে হারলেও হয়তো এত বড় ব্যবধান হতো না। আজও যেমন অনেক ওভার (১৪ ওভার) বাকি ছিল। আমরা টপ অর্ডাররা দ্রুত আউট হওয়ায় এখান থেকেই চাপটা বেশি এসেছে। সবাই দ্বিধায়ও ছিল। উইকেট পড়ে গেছে আমি কি নিজের মতো খেলব না মন্থর খেলব—এসব আরকি।’

সিরিজ শুরুর আগে বাংলাদেশকে এগিয়ে রেখেছিলেন অনেকে। অন্তর্বর্তীকালীন কোচ খালেদ মাহমুদ সুজনের কথায় ছিল আত্মবিশ্বাসের প্রতিচ্ছবি। কিন্তু মাঠের খেলায় দেখা গেল উল্টোটা। বিশ্বকাপে দীর্ঘ সময় খেলার মধ্যে থাকায় এ সিরিজে খেলোয়াড়দের মধ্যে ক্লান্তি ভর করেছিল কি না, এ প্রশ্নের জবাবে সৌম্য বলেন, ‘যখন ভালো যায় তখন সবকিছুই ভালো যায়। যখন খারাপ যায় সবকিছু খারাপ হয়। এখানে আবহাওয়াটা একটু গরম। সবাই চেষ্টা করছে যার যার দিক থেকে। হ্যাঁ, আমরা আরও ভালো করতে পারতাম। তবে আমরা জিতলে এমন প্রশ্নগুলো আসত না।’