দিনকে দিন কোথায় নামছে আম্পায়ারিংয়ের মান!

অ্যাশেজের প্রথম দিনেই বিতর্ক ছড়িয়েছেন দুই আম্পায়ার আলিম দার ও জোয়েল উইলসন। ছবি: দা ক্রিকেটার
অ্যাশেজের প্রথম দিনেই বিতর্ক ছড়িয়েছেন দুই আম্পায়ার আলিম দার ও জোয়েল উইলসন। ছবি: দা ক্রিকেটার
>

অ্যাশেজের প্রথম দিনেই আম্পায়ারিংয়ের মান নিয়ে তুমুল সমালোচনা চলছে। সাত-সাতটি ভুল সিদ্ধান্ত দিয়েছেন আম্পায়াররা। আন্তর্জাতিক ম্যাচে নিরপেক্ষ আম্পায়ার নিয়ম বদলাতে আইসিসিকে অনুরোধ করেছেন অস্ট্রেলিয়ার সাবেক অধিনায়ক রিকি পন্টিং

বিশ্বকাপের স্মৃতি এখনো পুরোনো হয়নি। গোটা টুর্নামেন্টেই দৃষ্টিকটু সব ভুল করেছেন আম্পায়াররা। ৭ বলে ওভার থেকে আউট দেওয়া আর না দেওয়ার ক্ষেত্রে নানা পদের ভুল সিদ্ধান্ত, এমনকি সিদ্ধান্ত দেওয়ার সময় নিয়ম ভুলে যাওয়ার মতো ঘটনাও ঘটেছে! সব বাদ দিয়ে শুধু ফাইনালটাই স্মরণ করে দেখুন। শেষ ওভারে গাপটিলের ওভার থ্রোয়ে কুমার ধর্মসেনার ৬ রান দেওয়া—যা নিয়ে পরে তুমুল বিতর্ক হয়েছে, ধর্মসেনা ভুল স্বীকারও করেছেন।

ভুল হতেই পারে। আম্পায়াররাও তো মানুষ। কিন্তু বারবার তার পুনরাবৃত্তি ঘটলে প্রশ্ন ওঠে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে আম্পায়ারিংয়ের মান নিয়ে। বিশ্বকাপের পর যেমন উঠেছে অ্যাশেজের প্রথম দিনেও।

মাঠের দুই আম্পায়ার আলিম দার ও জোয়েল উইলসনের ভুলে পরিপূর্ণ ছিল অস্ট্রেলিয়ার প্রথম ইনিংস। সংবাদমাধ্যম জানাচ্ছে, সাত-সাতটি ভুল সিদ্ধান্ত দেওয়া হয়েছে, রিভিউ নিয়ে পাল্টানো হয়েছে ৫টি সিদ্ধান্ত। দুর্ভাগাও আছেন দুজন। ডেভিড ওয়ার্নার ও জেমস প্যাটিনসনকে আউট দেওয়ার সিদ্ধান্ত দুটি ছিল ভুল। কিন্তু রিভিউ নেননি দুজনই! আবার এই ওয়ার্নারই দ্বিতীয় ওভারে আউট হতে পারতেন, স্টুয়ার্ট ব্রডের ডেলিভারি তাঁর ব্যাটের কানা ছুঁয়ে গিয়েছিল। কিন্তু অস্ট্রেলিয়ার সৌভাগ্য যে ইংল্যান্ড রিভিউ নেয়নি। মজার ব্যাপার, ওয়ার্নারকে আম্পায়ার আলিম দার যখন ভুলভাবে এলবিডব্লিউর আউট দিলেন, তখন অস্ট্রেলিয়াও রিভিউ নেয়নি। টিভি রিপ্লেতে দেখা গেছে, বলটা লেগ স্টাম্পের বাইরে দিয়ে চলে যেত।

উসমান খাজা, স্টিভ স্মিথ, ম্যাথু ওয়েড, পিটার সিডলদের নিয়েও ভুল সিদ্ধান্তের পসরা সাজিয়েছেন মাঠের আম্পায়ার। খাজাকে আউট দেননি আম্পায়ার জোয়েল উইলসন। ইংল্যান্ড রিভিউ নেওয়ায় দেখা গেল, বলটি খাজার ব্যাটের কানা ছুঁয়ে জমা পড়েছে গ্লাভসে। ম্যাথু ওয়েডের ক্ষেত্রেও একই ব্যাপার ঘটেছে। নিশ্চিত এলবিডব্লিউ ছিলেন ওয়েড। উইলসন সাড়া দেননি। ইংল্যান্ড রিভিউ নিয়ে সিদ্ধান্ত পাল্টেছে। আবার এই রিভিউ নিয়েই বেঁচে গেছেন স্মিথ। এবারও সেই এলবিডব্লিউ নিয়ে । বলটা খেলার চেষ্টা করেননি স্মিথ। তাঁর ভেতরের পায়ে লাগায় আবেদন হয়েছিল। সাড়া দেন আলিম দার। কিন্তু স্মিথ রিভিউ নেওয়ার পর দেখা গেল, বলটা অফ স্টাম্পের বাইরে ছিল। সিডলও আম্পায়ারদের হাত থেকে বেঁচেছেন রিভিউ নিয়ে।

অ্যাশেজের প্রথম দিনেই আম্পায়ারিংয়ের এমন মানের সমালোচনা করেছেন শেন ওয়ার্ন ও নাসের হুসেইন। ওয়ার্নের টুইট, ‘প্রথম বল থেকেই ভয়াবহ আম্পায়ারিং...।’ নাসের হুসেইন বলেছেন, ‘আম্পায়ারদের জঘন্য দিন। আমরা জানি, কাজটা কঠিন, তা মেনে নিয়েও বলছি, সত্যিই খুব বাজে আম্পায়ারিং হয়েছে।’ মাইকেল ভনের টুইট, ‘কোনটি বেশি খারাপ বুঝতে পারছি না—ব্যাটিং না আম্পায়ারিং।’

সবচেয়ে বড় প্রশ্ন তুলেছেন রিকি পন্টিং। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে নিরপেক্ষ আম্পায়ার দিয়ে ম্যাচ পরিচালনার সিদ্ধান্তটা আইসিসিকে পুনর্বিবেচনা করার অনুরোধ করেছেন অস্ট্রেলিয়ার সাবেক অধিনায়ক। বিষয়টি ব্যাখ্যার দাবি রাখে। নিজের দেশের ম্যাচ পরিচালনা করতে পারেন না আম্পায়াররা। ২০০২ সালে আইসিসি আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে এ নিয়ম করে দেওয়ার পর সমস্যাও কম হচ্ছে না। যেমন ধরুন, বিশ্ব ক্রিকেটে বেশির ভাগ সেরা আম্পায়ারই ইংল্যান্ড ও অস্ট্রেলিয়ার। কিন্তু আইসিসির নিয়মের জন্য অ্যাশেজে তাঁদের দেখা যাচ্ছে না।

এমসিসির ইনফ্লুয়েনশিয়াল ক্রিকেট কমিটির সদস্য পন্টিং মনে করেন, আইনটি পাল্টানো উচিত, ‘আমি মনে করি, খেলাটা এত দূর চলে এসেছে যে খেলার স্বার্থেই আর নিরপেক্ষ আম্পায়ারের দরকার নেই। খেলোয়াড়দের মধ্যে এ নিয়ে অনেক কথা হয়েছে। এমসিসির আগামী বৈঠকে আলোচ্যসূচিতে বিষয়টি না থাকলে আমি তা রাখার ব্যবস্থা করব।’