শাস্ত্রীই তাহলে ভারতের যোগ্য কোচ?

ভারতের হেড কোচ রবি শাস্ত্রী। ছবি: এএফপি
ভারতের হেড কোচ রবি শাস্ত্রী। ছবি: এএফপি
>

বিরাট কোহলিদের নতুন কোচ খুঁজছে ভারত। এদিকে সংবাদমাধ্যমে গুঞ্জন, বর্তমান হেড কোচ রবি শাস্ত্রীর মেয়াদ আরও দুই বছর বাড়ানো হবে। কোহলিদের সামলাতে শাস্ত্রী আর যাই হোক অযোগ্য কেউ নন

বিসিসিআই বিশ্বের সবচেয়ে ধনী ক্রিকেট বোর্ড। এমন বোর্ডের দলের কোচ হতে কে না চায়! আবেদনপত্র জমা পড়ার সংখ্যা (২০০০) সে কথাই বলছে। বিরাট কোহলিদের কোচ হওয়ার এ দৌড়ে কেউ চাচ্ছেন নতুন কোচ, কেউ আবার রবি শাস্ত্রীর ওপরেই আস্থা রাখছেন। সংবাদমাধ্যমের ভাষ্য, কোচ হওয়ার দৌড়ে শাস্ত্রীই টিকে যেতে পারেন। তাঁর মেয়াদ দুই বছরের জন্য বাড়ানো হতে পারে। পুরস্কারটি শাস্ত্রী পেলে সেটি কিন্তু যোগ্যতার বলেই।

স্বয়ং অধিনায়ক সমর্থন দিচ্ছেন শাস্ত্রীকে। ‘সিএসি (ক্রিকেট অ্যাডভাইজরি কমিটি) আমার সঙ্গে এখনো যোগাযোগ করেনি। তাঁরা মতামত চাইলে বলব, রবি ভাইয়ের সঙ্গে আমাদের পারস্পরিক বোঝাপড়া খুব ভালো। সে চালিয়ে গেলে অবশ্যই খুশি হব। কিন্তু আমার সঙ্গে কেউ এখনো যোগাযোগ করেনি’—ওয়েস্ট ইন্ডিজের উদ্দেশে উড়াল দেওয়ার আগে এ কথাগুলো বলেছিলেন অধিনায়ক বিরাট কোহলি।

আগেই জানা গেছে, এবার ভারতের কোচ নির্বাচনে অধিনায়কের পছন্দ-অপছন্দ প্রাধান্য দেবে না সিএসি। সে হিসেবে শাস্ত্রীর জন্য কোহলির সুপারিশ হয়তো কোনো কাজে আসবে না। তবে চাইলেই অধিনায়কের কথা একেবারে ফেলেও দেওয়া যায় না। একটি দেশের ক্রিকেট কোন পথে যাচ্ছে, কী তার ভবিষ্যৎ—এসব নির্ধারণে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ দুটি পদ জাতীয় দলের অধিনায়ক ও কোচ। দুজনের মধ্যে মনের মিল থাকলে তা কিন্তু ওই দেশের ক্রিকেটের জন্যই ইতিবাচক। সিএসির কমিটিতে থাকা সাবেক তিন ক্রিকেটারের (কপিল দেব, অংশুমান গায়কোয়ার ও শান্তা রঙ্গস্বামী) নিশ্চয়ই তা অজানা নয়।

হ্যাঁ, এ কথা সত্য, স্বয়ং ভারতের ক্রিকেট মহল থেকে ক্রিকেটপ্রেমীদের মধ্যে শাস্ত্রীকে নিয়ে বিরক্তিও আছে। সাবেক ক্রিকেটারদের মধ্য থেকে মাঝে-মধ্যেই শাস্ত্রীর বিপক্ষে আওয়াজ তোলা হয়। আর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও সমর্থকদের নিয়মিত ‘ট্রল’-এর খোরাক শাস্ত্রী। ভারত কোনো সিরিজ বা টুর্নামেন্টে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করলে বিষয়টি ভালোই টের পাওয়া যায়। দোষটা যে শুধু একপক্ষের তাও নয়। বেফাঁস কথা বলতেও ভালোই পারেন শাস্ত্রী। এর আগে অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে সিরিজ জয়কে বিশ্বকাপ জয়ের চেয়েও এগিয়ে রেখে বিতর্ক কুড়িয়েছিলেন সাবেক এ ক্রিকেটার।

তবে শুধু ভালো সম্পর্কের খাতিরে শাস্ত্রীকে সমর্থন দিয়ে যাওয়ার মতো অ-ক্রিকেটীয় মানসিকতা নেই কোহলির। গত বছরের শুরু থেকেই শাস্ত্রীকে গোচরে-অগোচরে সমর্থন দিচ্ছেন কোহলি। ২০১৭ সালের জুলাইয়ে ভারতের হেড কোচের দায়িত্ব পান শাস্ত্রী। এরপর তাঁর অধীনে টানা পাঁচ ওয়ানডে সিরিজ জিতেছে ভারত। যার মধ্যে জয় রয়েছে দক্ষিণ আফ্রিকার মাটিতেও। গত বছর ইংল্যান্ডের মাটিতে অল্পের জন্য ওয়ানডে সিরিজ হার এড়াতে পারেনি ভারত। এ ছাড়া অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ডের মাটিতেও ওয়ানডে সিরিজ জিতেছে শাস্ত্রী অ্যান্ড কোহলি কোং।

সে তুলনায় টেস্টে কিছুটা ম্রিয়মাণ কোচ শাস্ত্রী। দক্ষিণ আফ্রিকায় ২-১ ব্যবধানে ও ইংল্যান্ডে ৪-১ ব্যবধানের সিরিজ হারলেও অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে গত ডিসেম্বর-জানুয়ারিতে টেস্ট সিরিজে ঐতিহাসিক জয় পেয়েছে তাঁর শিষ্যরা। পরিসংখ্যানই বলছে, ভারতের হয়ে ক্রিকেটে শাস্ত্রীর পছন্দের রং সাদা নয় নীল।

এ তো গেল হার-জিতের পরিসংখ্যান। খেলোয়াড়দের পরিচর্যা করে প্রতিষ্ঠিত করাতেও বড় অবদান রয়েছে শাস্ত্রীর। যশপ্রীত বুমরার কথাই ধরুন, সব সংস্করণে এ পেসার ভারতের ‘ব্রহ্মাস্ত্র’ হয়েছেন কিন্তু শাস্ত্রীর অধীনেই। দুই স্পিনার যুজবেন্দ্র চাহাল ও কুলদীপ যাদবের ‘কুলচা’ জুটি হয়ে ওঠাও শাস্ত্রীর অধীনে। কিংবা হার্দিক পাণ্ডিয়ার পরীক্ষিত অলরাউন্ডার হয়ে ওঠা, ঋষভ পন্ত থেকে পৃথ্বী শ-দের জাত চিনে তুলে আনা—এসবই হয়েছে শাস্ত্রীর সময়ে। হয়তো সব সিদ্ধান্তই তাঁর একার নয় কিন্তু জাতীয় দলের কোনো ব্যাপারে হেড কোচকে এড়িয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার সংস্কৃতি ভারতীয় ক্রিকেটে আছে বলে মনে হয় না।

বরং বর্তমান কোচ অধিনায়কের পছন্দের ব্যক্তি জেনেও সীমারেখাটা স্মরণ করিয়ে দেওয়ার সংস্কৃতি রয়েছে ভারতীয় ক্রিকেটে। সিএসির পক্ষ থেকে সাফ বলে দেওয়া হয়েছে, ‘অধিনায়ক যা খুশি বলতে পারে। এ নিয়ে আমাদের মাথাব্যথা নেই। তার মতামতকে বিসিসিআই আমলে নিতে পারে, আমরা নই।’

যাঁরা কোচ নির্বাচন করবেন তাঁদের এমন সাফ কথার পরও শাস্ত্রীকে আরও দুই বছরের জন্য কোচ হিসেবে দেখছে সংবাদমাধ্যম। বিশ্বকাপের সেমিফাইনাল থেকে ছিটকে পড়লেও পরিসংখ্যান, অর্জন আর সমর্থন যে তাঁর পক্ষে। অযোগ্য লোকের পক্ষে নিশ্চয়ই এত কিছু অর্জন করা সম্ভব না!