দলের চুক্তি নবায়ন হয়নি, সাকিবের চুক্তি হয়ে গেছে

টানা তিন মৌসুম ঢাকায় খেলার পর জার্সি বদলে ফেলছেন সাকিব। ছবি: প্রথম আলো
টানা তিন মৌসুম ঢাকায় খেলার পর জার্সি বদলে ফেলছেন সাকিব। ছবি: প্রথম আলো

আজ অনির্ধারিত এক বৈঠকে বিসিবি কার্যালয়ে বসেছিলেন বিপিএল গভর্নিং কাউন্সিলের সদস্যরা। পরে তাঁরা বসেছিলেন গুলশানে বিসিবি সভাপতির বাসভবনেও। সভায় অংশ নেওয়া বিসিবির পরিচালকেরা বলছেন, শ্রীলঙ্কা সফরে বাংলাদেশ দলের ব্যর্থতা, প্রধান কোচ নিয়োগ আর বিপিএলের কিছু বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে।

জানা গেল, শ্রীলঙ্কা সফরে বাংলাদেশ দলের ব্যর্থতা নিয়ে বিসিবি সভাপতি ভীষণ অসন্তুষ্ট। দ্রুতই চূড়ান্ত হয়ে যেতে পারে বাংলাদেশ দলের প্রধান কোচও। এসবের বাইরে বৈঠকে আসলে বিপিএল নিয়েই বেশি আলোচনা হয়েছে। আর সেখানে সবচেয়ে বেশি প্রাধান্য পেয়েছে সাকিব আল হাসানের ফ্র্যাঞ্চাইজি বদল-প্রসঙ্গটি। কদিন আগে সাকিব ঘটা করেই বিপিএলের দল বদলেছেন। টানা তিন বছর ঢাকা ডায়নামাইটসে খেলা বাঁহাতি অলরাউন্ডার এবার নাম লিখিয়েছেন রংপুর রাইডার্সে। তাঁর এই আকস্মিক ফ্র্যাঞ্চাইজি বদলে বেশ বিপাকে পড়েছে ঢাকা ডায়নামাইটস। এই ফ্যাঞ্চাইজিটির সঙ্গে বোর্ড সভাপতিসহ কয়েকজন প্রভাবশালী পরিচালক জড়িত। স্বাভাবিকভাবেই বিষয়টি তাঁরা সহজভাবে নিতে পারছেন না।

ফ্র্যাঞ্চাইজি সূত্র বলছে, সাকিবের চলে যাওয়াটা ঢাকা শুধু ভীষণ অবাকই হয়নি, অসন্তুষ্টও হয়েছে। প্রত্যেক ফ্র্যাঞ্চাইজির সুযোগ আছে চারজন ক্রিকেটার ধরে রাখা (রিটেনশন)। যে সব ক্রিকেটারকে ধরে রাখা হয় না তাঁরা চলে যান ড্রাফটে। ধরে রাখার নিয়ম অনুযায়ী গত তিন বিপিএলে ঢাকা ধরে রেখেছে তাদের ‘আইকন’ বা ‘এ-প্লাস’ ক্যাটাগরির সাকিবকে। এখানে নিয়মের একটা ফাঁকও আছে—প্রত্যেক আইকন নিজেদের ইচ্ছে মতো অনেক সময় দল বদল করে থাকেন। সে সুযোগ কাজে লাগিয়ে মাশরাফি বিন মুর্তজা, তামিম ইকবাল, মুশফিকুর রহিম, মাহমুদউল্লাহ অতীতে দল বদল করেছেন। এবারও করবেন বা করছেন। আনুষ্ঠানিকভাবে সাকিবও সেটা করেছে। এতে রংপুরেরও একটা অস্বস্তি আছে, সেটা মাশরাফিকে নিয়ে। বাংলাদেশ ওয়ানডে অধিনায়ক রংপুরেই থাকবেন না ছাড়বেন—এটি নিয়ে আছে ধোঁয়াশা।

ঢাকার প্রশ্ন, খেলোয়াড় ধরে রাখার বিষয়টি চূড়ান্ত না হতেই সাকিব কীভাবে দল বদলে ফেললেন? একজন খেলোয়াড় তখনই দল বদলান, যখন ফ্র্যাঞ্চাইজির সঙ্গে তাঁর রসায়নটা আর জমছে না বা অন্য দলের কাছ থেকে বড় আর্থিক প্রস্তাব পেয়ে থাকেন। দল ছাড়ার আগে ক্রিকেটারের সঙ্গে কর্তৃপক্ষের অনানুষ্ঠানিক ‘সমঝোতা’ও হয়ে থাকে । ঢাকার দাবি, সাকিবের সঙ্গে তাদের এসবের কিছুই হয়নি। বাঁহাতি অলরাউন্ডার কিছুই জানাননি তাদের। ঢাকা ডায়নামাইটসের প্রধান নির্বাহী ওবায়েদ নিজাম বললেন, ‘বিষয়টি আমাদের কাছে বিস্ময়কর। যেহেতু হাতে সময় আছে আমরা কোন খেলোয়াড়কে ধরে রাখব, কোন খেলোয়াড়কে ধরে রাখব না, এ বিষয়ে বোর্ডকে চিঠি দিইনি। খেলোয়াড় রিটেনশনের আগে সাধারণত ফ্র্যাঞ্চাইজি কর্তৃপক্ষ, কোচ, অধিনায়ক সবাই বসেন। আমাদের এসবের কিছুই হয়নি। কোনো ক্রিকেটার যদি এসে বলে আপনার দলে খেলব না, আপনি কি রাখবেন? কিন্তু বিষয়টি তো সঠিক পদ্ধতিতে হতে হবে।’

২০১৪ সালে বন্ধ থাকার পর ২০১৫ সালে নতুন করে বিপিএল শুরু হলে বোর্ডের সঙ্গে প্রত্যেকটি ফ্র্যাঞ্চাইজির চুক্তির মেয়াদ ছিল চার বছর। যেটি শেষ হয়েছে এ বছর। এবার প্রতিটি ফ্র্যাঞ্চাইজিকে নতুন করে চুক্তি নবায়ন করতে হবে। দলের চুক্তি নবায়ন হওয়ার আগে খেলোয়াড়ের চুক্তি হয়ে কীভাবে, এ প্রশ্ন বিপিএল গভর্নিং কাউন্সিলের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শেখ সোহেলের, ‘বিপিএল গভর্নিং কাউন্সিলকে না জানিয়েই তারা এটা করেছে (রংপুর রাইডার্সের সঙ্গে সাকিবের চুক্তি)। সব ফ্র্যাঞ্চাইজির চুক্তির মেয়াদ শেষ। তারা থাকবে কি থাকবে না এটাই তো এখনো নিশ্চিত নয়। এখানে বোর্ড বা গভর্নিং কাউন্সিলের অনুমতি তারা নেয়নি। এ কারণেই গভর্নিং কাউন্সিল বসছে। চুক্তি নবায়ন না করেই তারা এটা করতে পারে না।’

চুক্তি নবায়ন না হওয়ার আগেই তো তারকা বিদেশি ক্রিকেটারদের দলে নিচ্ছে ফ্র্যাঞ্চাইজিগুলো। ঢাকা যেমন নিয়েছে এউইন মরগানকে। রাজশাহী জেপি ডুমিনি, খুলনা টাইটানস শেন ওয়াটসনকে। সেটি তারা পারছে কীভাবে? বিপিএলে যেমন নিয়ম আছে, নিয়মের অনেক ফাঁকও আছে। অতীতে এই ফাঁকগুলো অনেক সময় ঢাকার পক্ষে এসেছে। এবার সাকিব দল বদলের বিষয়টা বিপক্ষে যাওয়ায় তারা বেশ বিপাকে পড়েছে। যেটি আবার উপভোগ্য হয়ে উঠেছে প্রতিদ্বন্দ্বী ফ্র্যাঞ্চাইগুলোর কাছে!