নয় বছর ধরে জটিল চোট বয়ে বেড়াচ্ছেন সাইফউদ্দিন!

মোহাম্মদ সাইফউদ্দিন। পিঠের চোট তাঁকে স্বস্তিতে থাকতে দিচ্ছে না। ছবি: প্রথম আলো
মোহাম্মদ সাইফউদ্দিন। পিঠের চোট তাঁকে স্বস্তিতে থাকতে দিচ্ছে না। ছবি: প্রথম আলো
>মোহাম্মদ সাইফউদ্দিনের পিঠের চোট নতুন কিছু না। মাঝে-মধ্যেই তাঁর এ চোটে ভোগার কথা শোনা যায়। বিসিবির চিকিৎসক দেবাশীষ চৌধুরী জানালেন, প্রায় নয় বছর ধরে পিঠের চোটে ভুগছেন বাংলাদেশের এ অলরাউন্ডার। চিকিৎসার জন্য তাঁকে বাইরে পাঠানোর চেষ্টা করছে বিসিবি

পিঠে চোটের জন্য শ্রীলঙ্কা সফরে যেতে পারেননি মোহাম্মদ সাইফউদ্দিন। এই চোট তাঁকে ভুগিয়েছে বিশ্বকাপেও। ম্যাচ খেলেছেন ইনজেকশন নিয়ে। চিকিৎসার জন্য বিসিবি এখন তাঁকে দেশের বাইরে পাঠানোর প্রস্তুতি নিচ্ছে। বিসিবি চিকিৎসক দেবাশীষ চৌধুরী আজ জানালেন, সাইফউদ্দিনের এ চোট আজকের নয়। সংশ্লিষ্ট সবাইকে প্রায় নয় বছর ধরে এ চোটের কথা বলে আসছেন এই অলরাউন্ডার।

দেবাশীষ চৌধুরী আজ সংবাদকর্মীদের বলেন, ‘সাইফউদ্দিন একটা ক্রনিক লো ব্যাক পেইনে (কোমরের ব্যথা) ভুগছে। প্রায় নয় বছর ধরে এ সমস্যাটার কথা সে মাঝে-মধ্যেই আমাদের বলে আসছে। সাম্প্রতিক সময়ে ওর ব্যথাটা বেড়ে যাওয়ায় মাস ছয়েক আগে আমরা পরীক্ষার মাধ্যমে নিশ্চিত হই, ও এক ধরনের ফ্যাসেট জয়েন্ট (অস্থিসন্ধির) সমস্যায় ভুগছে। ফলশ্রুতিতে চিকিৎসার অংশ হিসেবে বিশ্বকাপের আগে আমরা ওর পুনর্বাসন ও ব্যবস্থাপনার চেষ্টা করি। এ চেষ্টায় পুরোপুরি সাফল্য না আসায় আমরা ওকে ইনজেকশন দিই। এতে ওর ব্যথা কিছুটা কমে এবং সে তার খেলা চালিয়ে যেতে পারে।’

বিশ্বকাপের আগে আয়ারল্যান্ডে ত্রিদেশীয় সিরিজ খেলেছে বাংলাদেশ। এ সফরে যাওয়ার সময় সাইফউদ্দিনের চোটের ব্যথা বেড়েছিল, জানিয়েছেন দেবাশীষ চৌধুরী। ইংল্যান্ডে চিকিৎসকদের শরণাপন্ন হওয়ার পর তাঁরাও জানান, সাইফউদ্দিনের চোটটা আসলে ‘ফ্যাসেট জয়েন্ট’ সমস্যা। সেখানে দ্বিতীয়বারের মতো ইনজেকশন দেওয়া হয় সাইফউদ্দিনকে। এতে ব্যথা কিছুদিন কমলেও একেবারে সারেনি। পরে ব্যথাটা ফিরে আসে।

দেশে ফিরে আসার পর সাইফউদ্দিনের চিকিৎসার ব্যাপারে সিদ্ধান্তে পৌঁছানোর চেষ্টা করে হচ্ছে বলে জানিয়েছেন বিসিবির এ চিকিৎসক। এ ব্যাপারে দেবাশীষ চৌধুরী বলেন, ‘যেভাবে আমরা আগাচ্ছি সেটা হচ্ছে ওর এই সমস্যার কারণটা বের করতে হবে। সেটা নির্ণয় করা আমাদের দেশে সম্ভব না।এ জন্য আমরা চেষ্টা করছি ওকে বাইরে কোথাও পাঠিয়ে ওর একটা বায়োমেকানিক্যাল পরীক্ষার জন্য। কোনো বায়োমেকানিক্যাল সমস্যার জন্য ওর কোমরে কোনো বিশেষ জায়গায় বারবার চাপ পড়ছে কি না, তা নির্ণয় করতে গেলে এ ধরনের সুবিধা আছে এমন জায়গায় ওকে পাঠাতে হবে। বিসিবি প্রধান নির্বাহী জানিয়েছেন, কোথায় এ ধরনের সুবিধা আছে সে ব্যাপারে খোঁজ নেওয়ার জন্য। আমরা যোগাযোগ শুরু করেছি, আশা করছি সপ্তাহখানেকের মধ্যে জানতে পারব। ওর কোনো মেকানিক্যাল সমস্যা আছে কি না, তা ধরা গেলে সেটি ঠিক করতে ওদের (বাইরের চিকিৎসক) নির্দেশনা অনুসরণের চেষ্টা করব।’

সংবাদকর্মীদের প্রশ্ন ছিল, সমস্যা ধরতে পারার পর সাইফউদ্দিনের বোলিং অ্যাকশনে কোনো পরিবর্তন আসার সম্ভাবনা আছে কি না? দেবাশীষ চৌধুরীর জবাব, ‘এটা পুরোপুরি কৌশলগত ব্যাপার। ওর সঙ্গে যিনি থাকবেন তিনি ব্যাপারটা পুরোপুরি বুঝে আসার চেষ্টা করবেন। ওখানকার চিকিৎসকদের সঙ্গে আলোচনা করবেন। এবং এক কথায় বলা যায় যে, যেটা ওর ক্যারিয়ারের জন্য সবচেয়ে ভালো মনে করবেন ওখানকার বিশেষজ্ঞরা, আমরা সেটাই অনুসরণের চেষ্টা করব। এখন টেকনিক্যাল পরিবর্তন আসবে কি না, সেগুলো অ্যাসেসমেন্টের (পরীক্ষা-নিরীক্ষা) পর জানতে পারব। ওদের নির্দেশনা এবং আমাদের যিনি থাকবেন—এ দুটো মিলিয়েই আমরা চেষ্টা করব ওর খেলোয়াড়ি জীবনটা দীর্ঘায়িত করার।’

এ ধরনের পরীক্ষার পর কত দিন পর একজন ক্রিকেটার ম্যাচের জন্য ফিট হয়ে ওঠেন—প্রশ্নটির জবাবে গোটা ব্যাপারটি বুঝিয়ে বলেন দেবাশীষ চৌধুরী, ‘অ্যাসেসমেন্ট কোনো চিকিৎসা নয়, এটা এক ধরনের পরীক্ষা। অ্যাসেসমেন্টের পরদিনই আপনি খেলতে পারবেন না। আমরা জানতে চাইছি ওর (সাইফউদ্দিন) সমস্যাটা কোথায়। এ ধরনের পরীক্ষা বিশেষ কিছু জায়গায় হয়। অস্ট্রেলিয়াতে আছে, ইংল্যান্ডে আছে, এমনকি ভারতেও আছে। আমরা সবার সঙ্গে চেষ্টা করব যোগাযোগ করার। যারা সাড়া দেবে আমরা তাদের সঙ্গে এগোনোর চেষ্টা করব।’

আয়ারল্যান্ডে ত্রিদেশীয় সিরিজ থেকে টানা খেলার মধ্যে আছেন সাইফউদ্দিন। এর মধ্যে চোটে পড়লেও টানা আছেন দলের সঙ্গে। এ ছাড়া ঘরোয়া ক্রিকেট তো আছেই। চোট এড়াতে সাকিব আল হাসান এর আগে খেলোয়াড়দের ঘুরিয়ে ফিরিয়ে খেলানোর কথা বলছিলেন বিসিবিকে। এ নিয়ে দেবাশীষ চৌধুরী বলেন, ‘আমরা একটানা ওয়ার্ক লোড ম্যানেজমেন্টের আওতায় নিয়ে আসছি। প্রতিদিন কয়টা বল করবে কিংবা প্রতি সপ্তাহে কয়টা বল করবে এটার একটা বৈজ্ঞানিক নীতিমালা আছে। যাদেরই এ ধরনের সমস্যা হচ্ছে, যেমন এ মুহূর্তে সাইফউদ্দিন যেহেতু ব্যাক-পেইনে ভুগছে, ও বোলিং ওয়ার্ক লোড ম্যানেজমেন্টের আওতায় আছে। তবে এর আওতায় ও কিন্তু এখন বল করছে না। যখন ও বোলিংয়ে ফিরে আসবে তখন কিন্তু ওয়ার্ক লোড ম্যানেজমেন্ট ধরে সে এগোবে। প্রতিটি খেলোয়াড়ের জন্য এভাবে ওয়ার্ক লোড ম্যানেজমেন্ট প্রক্রিয়া চলমান আছে।’