যাঁকে দলে নিলে শিরোপা নিশ্চিত!

হ্যাটট্রিক শিরোপা জয়ের পর ইমন মাহমুদ বাবু। ছবি: ফেসবুক
হ্যাটট্রিক শিরোপা জয়ের পর ইমন মাহমুদ বাবু। ছবি: ফেসবুক
>আবাহনী লিমিটেডের হয়ে টানা দুই মৌসুম প্রিমিয়ার লিগ জয়ের পর ইমন বাবু এবার নাম লিখিয়েছিলেন বসুন্ধরা কিংসে। সেখানে গিয়েও জিতেছেন লিগ শিরোপা। ফলে দুই ক্লাবের জার্সিতে হ্যাটট্রিক শিরোপা জয়ের স্বাদ পেয়েছেন এই মিডফিল্ডার। এর আগে শেখ রাসেলের ট্রেবল জয়ী দলের সদস্যও ছিলেন তিনি। ফলে তাঁর ঝুলিতে জমা পড়েছে চারটি লিগ শিরোপা। 

প্রচলিত একটা কথা আছে, ‘সোনার হাতে সোনার কাঁকন, কে কার অলংকার।’ বাংলাদেশের প্রিমিয়ার লিগ ফুটবলের সঙ্গে মিলিয়ে জিজ্ঞাসা করা যায়, গর্বোজ্জ্বল একটি মৌসুম কাটানো বসুন্ধরা কিংস দল নাকি পরশপাথর হয়ে ওঠা ইমন মাহমুদ বাবু—কে আসলে কার অলংকার। কার ছোঁয়ায় উজ্জ্বল কে!

ফুটবলে ‘ওয়ান ম্যান টিম’ কথাটা তেমন খাটে না। এ এমন একটা খেলা, যেখানে ১১ জনকে সমানতালে লড়াই করতে হয়। তবে দলে দু–একজন প্লেমেকার থাকতেই পারেন। মাঠে কঠিন সময়ে যাঁরা ঠিকই দলকে বের করে আনার ক্ষমতা রাখেন। বসুন্ধরার মিডফিল্ডার ইমনের সেই গুণ আছে। তবে তাঁর সবচেয়ে বড় গুণ বোধ হয় চ্যাম্পিয়ন হওয়ার সৌভাগ্য। এবার শিরোপা জয়ের মধ্য দিয়ে হ্যাটট্রিক লিগ শিরোপা জিতেছেন এই মিডফিল্ডার।

আবাহনীর হয়ে টানা দুই মৌসুম প্রিমিয়ার লিগের শিরোপা জেতায় দলটির হয়ে হ্যাটট্রিক চ্যাম্পিয়ন দলের সদস্য হওয়ার হাতছানি ছিল। কিন্তু দেশের ফুটবল ইতিহাসে রেকর্ড পরিমাণ ৬৫ লাখ টাকা দিয়ে আবাহনী থেকে ইমনকে দলে টেনে নেয় বসুন্ধরা। দেশের সেরা মিডফিল্ডারকে তো দলে টানলই নবাগতরা, সঙ্গে শিরোপাভাগ্যটাও বোধ হয় ধানমন্ডি এলাকা থেকে নিয়ে গেলেন বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায়। ব্যস, বসুন্ধরার সুবাদে হ্যাটট্রিক চ্যাম্পিয়ন হওয়ার স্বাদ পেলেন ইমন। হ্যাটট্রিক চ্যাম্পিয়ন হওয়ার সৌভাগ্য বেশ কয়েকজন ফুটবলারের আছে। কিন্তু দুই দলের জার্সিতে খেলে এমন হ্যাটট্রিক ইমন ছাড়া আর কারও আছে বলে জানা নেই।

নতুন ক্লাবে খাপ খাইয়ে নেওয়ার চাপ নিয়েই মৌসুম শুরু করা। সঙ্গে শিরোপার প্রত্যাশা। সেই কঠিন পথটার কথা শোনালেন ইমন, ‘আবাহনী ছাড়ার সিদ্ধান্তটা কঠিন ছিল। ক্লাবে আমার সময়টা ভালো যাচ্ছিল। সেখান থেকে নতুন ক্লাবে এসে মানিয়ে নেওয়ার চ্যালেঞ্জ ছিল। সঙ্গে ব্যক্তিগত হ্যাটট্রিক শিরোপা জয়ের হাতছানি। খুব চ্যালেঞ্জিং একটা মৌসুম পার করলাম।’

বসুন্ধরার জার্সিতে প্রথম বছরেই লিগ শিরোপা। একক প্রাধান্য দেখিয়েই লিগ নিজেদের করে নিয়েছে ইমনদের দল। এই শিরোপা জয়ের মাহাত্ম্য অনেক। তবে এর চেয়ে বেশি কঠিন ছিল আবাহনীর হয়ে আগের মৌসুমের শিরোপা জয়, ‘এই বছর চ্যাম্পিয়ন হওয়াটা অনেক কঠিন ছিল। তবে কঠোর পরিশ্রম করে আমরা খুব দাপটের সঙ্গে জিতেছি। তবে এর আগের মৌসুমে আরও কঠিন কাজ ছিল আমাদের (আবাহনীর) জন্য। লি টাক (ইংলিশ মিডফিল্ডার) দল ছেড়ে যাওয়ায় ওই মৌসুমে আবাহনী দলটা খুব বেশি ভালো ছিল না। তবে শেষ পর্যন্ত আমরাই চ্যাম্পিয়ন হয়েছিলাম।’

ঘরোয়া ফুটবলের বেশ কয়েক বছর ধরে সেরা মিডফিল্ডার ইমন, এই কথায় হয়তো ভুল ধরার লোক পাওয়া যাবে না। বসুন্ধরা তো আর এমনি এমনি সর্বোচ্চ ৬৫ লাখ টাকা দিয়ে তাঁকে দলে ডাকেনি। বাংলাদেশের ফুটবলার ৬৫ লাখ টাকা পাওয়ার যোগ্য কে না, সে তর্কে যাচ্ছি না। কিন্তু খেলোয়াড় হিসেবে মিডফিল্ডার ইমন কেমন? জবাব পেতে ফিরে যান বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে প্রায় তিন বছর আগের এক সন্ধ্যায়। ২০১৫-১৬ মৌসুমে আবাহনী লিগ শিরোপা জয়ের পর অস্ট্রিয়ান কোচ জর্জ কোটানকে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল, আপনার দলের শিরোপা জয়ের পেছনে কার অবদান সবচেয়ে বেশি? বাংলাদেশের জাতীয় ফুটবল দলের ইতিহাসে সেরা এই কোচের সাফ জবাব, ‘অবশ্যই ইমন। সে-ই আমার দলের সেরা খেলোয়াড়।’ অথচ কোটানের সে দলে ইংলিশ লি টাকের মতো খেলোয়াড়ও ছিলেন।

আসলে কুশলী মিডফিল্ডার বলতে যা বোঝায়, তা-ই হলেন ইমন। দর্শকের মন কেড়ে নেওয়ার মতো পায়ে কারিকুরি দেখা যায় না। কিন্তু তাঁর পা থেকে ভুল পাস দেখলে চোখ কচলে বিশ্বাস করতে হয়, মিস পাস দিয়েছেন ইমন! সবচেয়ে বড় যোগ্যতা, ক্ষুরধার পাসে প্রতিপক্ষের জমাট রক্ষণের তালা খুলে দিতে পারেন অনায়াসে। তাই দলের স্ট্রাইকারদের কাছে ইমনের কদরটা একটু বেশিই। বিশেষ করে বিদেশি স্ট্রাইকারদের কাছে। বিদেশি কোচদের পছন্দের তালিকাতেও থাকেন সব সময় শীর্ষে। যাঁর হাত ধরে ২০০৯ সালে জাতীয় দলে অভিষেক হয়েছিল ইমনের, সেই ব্রাজিলিয়ান কোচ এডসন সিলভা ডিডোর পক্ষ থেকে তাঁকে বাইরের দেশে লিগ খেলানোর চেষ্টাও করা হয়েছিল একবার।

২০০৯ সাল থেকে জাতীয় দলে খেললেও কখনোই পাদপ্রদীপের আলোয় আসা হয়নি ইমনের। অথচ প্রায় কয়েক বছর ধরে বাংলাদেশের সেরা ফুটবলারের প্রসঙ্গ উঠলে তাঁর নামটাই আসবে সবার আগে। কিন্তু একেবারেই আড়ালে থাকতে পছন্দ করেন বলে প্রচারের আলোটা তাঁর গায়ে লাগে না। অবশ্য গতবার দৃশ্যটা বদলে গিয়েছে। কারণ ৬৫ লাখ টাকায় ক্লাব বদল করায় আলোচনায় চলে আসেন। আর এসেই বসুন্ধরার হয়েও জিতলেন শিরোপা। ইমন একটু অহংকার মিশিয়ে বলতেই পারেন, ‘শিরোপা জিততে চাইলে আমাকে দলে নিতে পারেন!’