দলবদলের পর: কেমন হলো লিভারপুল?

এবার লিগ জেতা হবে লিভারপুলের? ছবি: এএফপি
এবার লিগ জেতা হবে লিভারপুলের? ছবি: এএফপি
>গত রাতে শেষ হয়েছে ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগের ক্লাবগুলোর দলবদল। নিজেদের শক্তিমত্তা বিবেচনা করে প্রিমিয়ার লিগের দলগুলো এর মধ্যেই প্রয়োজনীয় খেলোয়াড় এনেছে, অপ্রয়োজনীয় খেলোয়াড় ছেড়ে দিয়েছে। আগামী জানুয়ারি পর্যন্ত প্রিমিয়ার লিগের দলগুলো আর দলে খেলোয়াড় আনতে পারবে না। দলবদল শেষে দলগুলোর অবস্থা কেমন হলো? এই পর্বে আমরা দেখে নেব লিভারপুল সম্পর্কে।

কোনো ক্লাব চ্যাম্পিয়নস লিগ জিতলে সাধারণত সে ক্লাবে যাওয়ার জন্য খেলোয়াড়েরা আগ্রহী হয়ে ওঠেন। চেলসি যেমন চ্যাম্পিয়নস লিগ জিতেছিল বলেই অন্যান্য ক্লাবকে হারিয়ে এডেন হ্যাজার্ডকে কিনতে পেরেছিল। সে হিসেবে এবার লিভারপুলের নতুন খেলোয়াড় কেনার সুযোগ অনেক ছিল। সে সুযোগ তাঁরা নেয়নি। এই দলবদলে বলতে গেলে লিভারপুলে নতুন কেউই আসেনি। যে তিনজন এসেছে, তাদের কেউই মূল একাদশের জন্য নন।

ইয়ুর্গেন ক্লপ বারবার বলেছেন, তাঁর দলে এখন কাউকে দরকার নেই, বর্তমান দল নিয়ে সন্তুষ্ট। এই দল নিয়েই পয়েন্টের দিক দিয়ে নিজেদের প্রিমিয়ার লিগ ইতিহাসের সবচেয়ে সফল মৌসুম কাটিয়েছিল লিভারপুল। যদিও লিগ জয়ের জন্য সেটা যথেষ্ট ছিল না। তাও মূল একাদশে খেলতে পারেন, এমন নতুন কাউকে আনেননি ক্লপ। তা ছাড়া অ্যালেক্স অক্সলেড চেম্বারলাইন, জো গোমেজ, অ্যাডাম লালানার মতো বেশ কিছু খেলোয়াড় চোট কাটিয়ে দলের সঙ্গে যোগ দিয়েছেন। ক্লপ তাদের নতুন খেলোয়াড় হিসেবেই মনে করছেন। ফলে সব মিলিয়ে মূল একাদশে খেলানোর মতো নতুন কাউকে কেনেননি ক্লপ। ৮ মিলিয়ন পাউন্ডের বিনিময়ে ক্লাবের দ্বিতীয় গোলরক্ষক সিমোন মিনিওলে বেলজিয়ান ক্লাব ব্রুজেসে যোগ দিয়েছেন, যে কারণে বিকল্প গোলরক্ষক হিসেবে ফ্রিতে ওয়েস্ট হামের সাবেক গোলরক্ষক আদ্রিয়ানকে এনেছে লিভারপুল। ১৭ বছর বয়সী ডাচ সেন্টারব্যাক সেপ ফন ডার বার্গ ও ১৬ বছর বয়সী ইংলিশ উইঙ্গার হার্ভে এলিয়টকে আনা হয়েছে ভবিষ্যতের কথা মাথায় রেখেই।

মিনিওলে ছাড়াও, যেসব খেলোয়াড়কে খেলানোর ইচ্ছে নেই ক্লপের, তাদের বিক্রি করে দিয়েছেন। যেমন ইংলিশ স্ট্রাইকার ড্যানিয়েল স্টারিজ ও ড্যানি ইংস, স্প্যানিশ লেফটব্যাক আলবার্তো মোরেনো, মিডফিল্ডার রাফা কামাচো ও গোলরক্ষক অ্যাডাম বোগদান। মোরেনো, বোগদান আর স্টারিজের সঙ্গে চুক্তি নবায়ন করেনি লিভারপুল। ওদিকে ইংস, কামাচো ও মিনিওলেকে বিক্রি করে মোটামুটি ৩০ মিলিয়ন পাউন্ডের মতো আয় হয়েছে তাদের।

লিভারপুলের স্কোয়াড আগের মতোই আছে। ছবি: সংগৃহীত
লিভারপুলের স্কোয়াড আগের মতোই আছে। ছবি: সংগৃহীত

দলবদলের বাজারে যেহেতু তেমন কাউকে কেনেনি তাঁরা, সেহেতু গত মৌসুমের মতোই পরিকল্পনা ও মূল একাদশ নিয়ে এগোবেন ক্লপ, এটা নিশ্চিত। গোলবারের নিচে থাকবেন ব্রাজিলের অ্যালিসন, তাঁর বিকল্প হিসেবে থাকবেন আদ্রিয়ান। দলের মূল রাইটব্যাক ট্রেন্ট আলেক্সান্ডার আরনল্ড, তাঁর কোনো বিকল্প দরকার হলে মিডফিল্ডার জেমস মিলনার বা সেন্টারব্যাক জো গোমেজ সে জায়গায় খেলবেন। লেফটব্যাক হিসেবেও যথারীতি স্কটিশ তারকা অ্যান্ডি রবার্টসন আছেন। তাঁর বিকল্পের দরকার হলে ফরাসি তরুণ ইয়াসের লারুকি বা মিলনারকে খেলানো হবে। তবে দুই ফুলব্যাকের বিকল্প হিসেবে কোনো অভিজ্ঞ খেলোয়াড় না থাকার মাশুল দিতে পারে লিভারপুল। লিভারপুলের আক্রমণ দুই ফুলব্যাকের ওপর বেশ ভালো নির্ভরশীল। তাই আরনল্ড বা রবার্টসনের কেউ চোটে পড়লে বেশ সমস্যায় পড়তে পারে মার্সিসাইডের লাল দলটা।

সেন্টারব্যাক হিসেবে যথারীতি ডাচ তারকা ভার্জিল ফন ডাইক থাকবেন। তাঁর সঙ্গী হওয়ার জন্য পুরো মৌসুম লড়াই করবেন মূলত ক্যামেরুনের মাতিপ ও ইংল্যান্ডের গোমেজ। এ ছাড়াও আছেন ক্রোয়েশিয়ার দেয়ান লভরেন। খর্বশক্তির দলগুলোর বিপক্ষে সুযোগ পাবেন নতুন আসা সেপ ফন ডার বার্গ।

মিডফিল্ডের তিন জায়গার জন্য পুরো মৌসুম ধরে লড়াই করবেন ব্রাজিলের ফাবিনহো, ইংল্যান্ডের জর্ডান হেন্ডারসন, জেমস মিলনার, অ্যাডাম লালানা ও অ্যালেক্স অক্সলেড চেম্বারলাইন, নেদারল্যান্ডসের জর্জিনিও ভাইনাল্ডাম ও গিনির নাবি কেইটা। ডিফেন্সিভ মিডফিল্ডার হিসেবে থাকবেন ফাবিনহো, তাঁর কোনো সমস্যা হলে সে জায়গায় খেলবেন হেন্ডারসন বা ভাইনাল্ডামের একজন। ৪-৩-৩ ফরমেশনে অপেক্ষাকৃত আক্রমণাত্মক মিডফিল্ডার হিসেবে খেলার জন্য লড়বেন চেম্বারলাইন, লালানা ও কেইটা।

আক্রমণভাগের তিন খেলোয়াড়ের মধ্যে যথারীতি মোহাম্মদ সালাহ, সাদিও মানে ও রবার্তো ফিরমিনোর জায়গা পাকা। বিকল্প স্ট্রাইকার হিসেবে দলে আছেন বেলজিয়ামের ডিভক অরিগি। তরুণ ইংলিশ স্ট্রাইকার রিয়ান ব্রুস্টারকেও এবার অনেক সুযোগ দেওয়া হবে, জানিয়েছেন ক্লপ নিজেই। ইংল্যান্ডের হয়ে অনূর্ধ্ব-১৭ বিশ্বকাপ জেতা এই তারকা ২৩ ম্যাচে এর মধ্যেই গোল করেছেন ২০টি। গত অনূর্ধ্ব-১৭ বিশ্বকাপের সর্বোচ্চ গোলদাতা ও তৃতীয় সেরা খেলোয়াড় তিনিই হয়েছিলেন।

সব মিলিয়ে নতুন মৌসুমে লিভারপুলকে দেখা যাবে মোটামুটি আগের রূপেই। আজ রাতে নরউইচের বিপক্ষে ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগের অভিযান শুরু করতে যাচ্ছে লিভারপুল। এবার কি ২৯ বছরের আক্ষেপ মিটবে? নাকি গতবারের মতো এবারও দ্বিতীয় হয়েই সন্তুষ্ট থাকতে হবে?