দলবদলের পর : কেমন হলো টটেনহাম?

এবার কিছু জিতবে স্পার্স? ছবি : এএফপি
এবার কিছু জিতবে স্পার্স? ছবি : এএফপি
গত পরশু শেষ হয়েছে ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগের ক্লাবগুলোর দলবদল। নিজেদের শক্তিমত্তা বিবেচনা করে প্রিমিয়ার লিগের দলগুলো এর মধ্যেই প্রয়োজনীয় খেলোয়াড় এনেছে, অপ্রয়োজনীয় খেলোয়াড় ছেড়ে দিয়েছে। আগামী জানুয়ারি পর্যন্ত প্রিমিয়ার লিগের দলগুলো আর দলে খেলোয়াড় আনতে পারবে না। দলবদল শেষে দলগুলোর অবস্থা কেমন হলো? এই পর্বে আমরা দেখে নেব টটেনহাম হটস্পার সম্পর্কে।


দেড় বছরেরও বেশি সময় ধরে একটা খেলোয়াড়ও কেনেনি টটেনহাম হটস্পার। সেই ২০১৮ সালের জানুয়ারির দলবদলের সময় যে পিএসজি থেকে ব্রাজিল তারকা লুকাস মউরাকে নিয়ে এল, তারপর আর কোনো নতুন খেলোয়াড় আসেনি স্পার্সে। এ সময়ে নিজের হাতে থাকা খেলোয়াড়দের উন্নত করেছেন কোচ মরিসিও পচেত্তিনো। সে স্কোয়াড নিয়েই খেলেছেন চ্যাম্পিয়নস লিগের ফাইনাল। একদম খেলোয়াড় না কেনার পরেও টটেনহামের এমন সাফল্য দেখেই কি না, ক্লাবটার মালিক পক্ষ সন্তুষ্ট হয়েছেন কোচের ওপর। এবার হাত খুলে খরচ করতে দিয়েছেন পচেত্তিনোকে।

সুযোগ পেয়ে পচেত্তিনোও দলের খুঁতগুলো বের করে উপযুক্ত খেলোয়াড় নিয়ে এসেছেন। সঙ্গে বেশ কিছু খেলোয়াড়কে বিক্রিও করেছেন। বিক্রি করা খেলোয়াড়দের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল ইংলিশ রাইটব্যাক কিয়েরান ট্রিপিয়ের, অ্যাটলেটিকো মাদ্রিদের কাছে যে রাইটব্যাককে বিক্রি করা হয়েছে ২০ মিলিয়ন পাউন্ডের বিনিময়ে। গত তিন বছর ধরে দলের বিকল্প স্ট্রাইকার হিসেবে থাকা ডাচ তারকা ভিনসেন্ট ইয়ানসেনকেও বিক্রি করা হয়েছে মেক্সিকোর ক্লাব মন্তেরের কাছে, ৬.৩ মিলিয়ন পাউন্ডের বিনিময়ে। স্প্যানিশ স্ট্রাইকার ফার্নান্দো ইয়োরেন্তে, ডাচ গোলরক্ষক মিচেল ভর্মের মতো কিছু তারকার চুক্তি শেষ হয়ে যাওয়ার কারণে বেতনও বেঁচেছে কিছু। ফলে সব মিলিয়ে বেশ ভালোভাবেই নিজের স্কোয়াডকে এবার সাজাতে পেরেছেন পচেত্তিনো।

টটেনহামের সবচেয়ে বড় সমস্যা ছিল মিডফিল্ডে। দলে মিডফিল্ডারের সংখ্যা ছিল অনেক কম। ফলে চোটসমস্যা দেখা দিলে মিডফিল্ডে খেলানোর মতো কাউকে পাওয়া যেত না। উল্টো ফুলব্যাকদের সেন্ট্রাল মিডফিল্ডার হিসেবে খেলাতে হতো। সেই সমস্যার সমাধান এবার করা হয়েছে। দলে এসেছেন ফরাসি মিডফিল্ডার ট্যাঙ্গয় এনদোমবেলে ও আর্জেন্টাইন মিডফিল্ডার জিওভান্নি লো চেলসো।

পচেত্তিনো সব সময় এমন একজন ডিফেন্সিভ মিডফিল্ডার খেলাতে চান, যিনি একই সঙ্গে শারীরিকভাবে শক্তসমর্থ, দীর্ঘকায়, এবং ভালোমতো ড্রিবলে পারদর্শী। শক্তসমর্থ হওয়ার কারণে প্রতিপক্ষের আক্রমণ টটেনহামের রক্ষণভাগ পর্যন্ত আসার আগেই নস্যাৎ হয়ে যাবে, ড্রিবল করতে পারার কারণে বল কেড়ে নিয়ে সে মিডফিল্ডার নিজেই আক্রমণভাগের সঙ্গে সংযোগ স্থাপন করতে পারবেন। এত দিন পর্যন্ত এ কাজটা বেশ দক্ষতার সঙ্গে করেছেন বেলজিয়ামের মিডফিল্ডার মুসা দেম্বেলে। কিন্তু তিনি যথেষ্ট চোট প্রবণ ছিলেন। যে কারণে মাঝেমধ্যেই দলের ডিফেন্সিভ মিডফিল্ডার হিসেবে এরিক ডায়ার, মুসা সিসোকো, ভিক্টর ওয়ানিয়ামা বা হ্যারি উইংকসকে খেলানো হয়েছে। এদের সবারই কিছু না কিছু সীমাবদ্ধতা রয়েছে। কেউ দুর্দান্ত পাস দিয়ে আক্রমণ রচনা করতে পারলেও রক্ষণাত্মক দিক দিয়ে অতটা দক্ষ নন (উইংকস)। আবার কেউ রক্ষণাত্মক কাজগুলো ভালোভাবে করতে পারলেও আক্রমণ রচনা করার কাজটায় অত ভালো নন (ওয়ানিয়ামা, ডায়ার)। আবার কেউ কেউ আছেন, 'জ্যাক অব অল ট্রেডস মাস্টার অব নান' ; অর্থাৎ দুটি কাজই করতে পারেন, কিন্তু কোনোটাই অত ভালো নয় (সিসোকো)। গত জানুয়ারিতে দেম্বেলে দল ছাড়ার পরে এদের দিয়েই কাজ চালিয়েছিলেন পচেত্তিনো। কখনো কখনো লেফটব্যাক ড্যানি রোজ এসেও মিডফিল্ডের কাজ করে দিতেন। 

এনদোমবেলের ওপর অনেক দায়িত্ব এবার। ছবি : টুইটার
এনদোমবেলের ওপর অনেক দায়িত্ব এবার। ছবি : টুইটার

এই সমস্যা মেটানোর জন্য এবার ফরাসি ক্লাব লিওঁ থেকে ট্যাঙ্গয় এনদোমবেলেকে নিয়ে এসেছেন পচেত্তিনো, ৫৫ মিলিয়ন পাউন্ডের বিনিময়ে। আক্রমণাত্মক মিডফিল্ডার হিসেবে ডেনমার্কের তারকা ক্রিশ্চিয়ান এরিকসেন ও ইংল্যান্ডের ডেলে আলির সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার জন্য রিয়াল বেতিস থেকে ধারে নিয়ে আসা হয়েছে আর্জেন্টিনার মিডফিল্ডার জিওভান্নি লো চেলসোকে। এক বছর পর ৬০ মিলিয়ন পাউন্ডের বিনিময়ে তাকে পাকাপাকিভাবে কিনে নেবে স্পার্স। ফলে সব মিলিয়ে রক্ষণাত্মক মিডফিল্ডার হিসেবে স্পার্সের কাছে এখন আছেন এনদোমবেলে, ডায়ার, ওয়ানিয়ামা, সিসোকো, উইংকস। ১৮ বছর বয়সী অলিভার স্কিপকেও সুযোগ দেওয়া হবে এই মৌসুমে। আক্রমণাত্মক মিডফিল্ডার হিসেবে দলে আছেন লো চেলসো, এরিকসেন ও আলি। উইঙ্গার হিসেবে দলে নতুন কাউকে আনা হয়নি। তেমন অভিজ্ঞ কোনো উইঙ্গার না থাকার কারণে এবারও উইংবিহীন ছকে (৪-৪-২, ৪-৩-১-২, ৩-৫-২) স্পার্সকে খেলাতে পারেন পচেত্তিনো। যেখানে উইঙ্গারের জায়গায় একজন প্রধান স্ট্রাইকার ও একজন সহকারী স্ট্রাইকার থাকেন। প্রধান স্ট্রাইকার হিসেবে অতি অবশ্যই দলের সহ-অধিনায়ক হ্যারি কেইন থাকবেন, কেইনের সহকারী স্ট্রাইকার হিসেবে জায়গা পাওয়ার জন্য লড়াই করবেন ব্রাজিলের লুকাস মউরা ও দক্ষিণ কোরিয়ার সন হিউং মিন।

এবার আসা যাক রক্ষণভাগে। রক্ষণভাগে বিশেষ কেউ আসেননি। মূল গোলরক্ষক হিসেবে আছেন দলের অধিনায়ক হুগো লিওরিস, তাঁর বিকল্প হিসেবে গত মৌসুমের মতো এবারও আছেন আর্জেন্টিনার গোলরক্ষক পাওলো গাজানিগা। সেন্টারব্যাক হিসেবে যথারীতি দুই বেলজিয়ান তারকা ইয়ান ভার্তোনে ও টোবি অল্ডারভেইরেল্ডের পাশাপাশি কলম্বিয়ার ডেভিনসন সানচেজ আছেন। চতুর্থ সেন্টারব্যাক হিসেবে আছেন আর্জেন্টিনার হুয়ান ফয়থ, যিনি দলের প্রয়োজনে রাইটব্যাক হিসেবেও খেলতে পারেন। গত মৌসুমের মূল রাইটব্যাক ট্রিপিয়ের অ্যাটলেটিকোতে যোগ দেওয়ার কারণে এবার দলের মূল রাইটব্যাক সার্জ অরিয়ের। তাঁর বিকল্প হিসেবে আছেন ইংল্যান্ডের কাইল ওয়াকার-পিটার্স। ওদিকে রক্ষণভাগের বাম দিকে মূল লেফটব্যাকের ভূমিকা পালন করবেন ওয়েলসের বেন ডেভিস, তাঁর বিকল্প হিসেবে এবার ফুলহাম থেকে আনা হয়েছে তরুণ তারকা রায়ান সেসেনিওনকে। এই সেসেনিওন লেফট উইঙ্গার হিসেবেও খেলতে পারেন। এই দুজনের কারণে এবার বেঞ্চে চলে যেতে পারেন ড্যানি রোজ। দলবদলের শেষ দিনে রোজ ওয়াটফোর্ডে চলে যাবেন এমন গুঞ্জন উঠলেও সেটা বাস্তবায়িত হয়নি। 

দলবদলের পর স্পার্সের স্কোয়াডটা হয়েছে অনেকটা এমন। ছবি : সংগৃহীত
দলবদলের পর স্পার্সের স্কোয়াডটা হয়েছে অনেকটা এমন। ছবি : সংগৃহীত

এত দিন টটেনহামের লক্ষ্য থাকত লিগে শীর্ষ চারের মধ্যে থাকা। এবার যে ধরনের খেলোয়াড় তাঁরা নিয়ে এসেছে, শিরোপার স্বপ্ন দেখা শুরু করে দিতেই পারে!