ছিপছিপে শরীরকে কাঁচকলা দেখিয়েছেন তাঁরা

ওয়েস্ট ইন্ডিজের বয়সভিত্তিক দলে সতীর্থের সঙ্গে কর্নওয়াল। ছবি: টুইটার
ওয়েস্ট ইন্ডিজের বয়সভিত্তিক দলে সতীর্থের সঙ্গে কর্নওয়াল। ছবি: টুইটার

ছিপছিপে শরীর, পেশিবহুল হলেও সমস্যা নেই, তবে মেদ আর প্রয়োজনের অতিরিক্ত ওজন একদম নয়—আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ক্রিকেটারদের কাছে এই হলো কোচদের প্রত্যাশিত ফিটনেস। এর বাইরেও আরও অনেক কিছু আছে। তবে সাদা চোখে এটুকু লাগেই। যদিও প্রত্যাশিত এ ফিটনেসের মধ্যে না থেকেও চুটিয়ে খেলে যাচ্ছেন অনেক ক্রিকেটার। অতীতেও খেলেছেন। কিন্তু হঠাৎ করেই ফিটনেসের প্রসঙ্গ ওঠার কারণ রাকিম কর্নওয়াল। ‘মাউন্টেন ম্যান’ খ্যাত ২৬ বছর বয়সী এই স্পিনিং অলরাউন্ডার ডাক পেয়েছেন ওয়েস্ট ইন্ডিজের টেস্ট দলে। ভারতের বিপক্ষে টেস্ট সিরিজে ওয়েস্ট ইন্ডিজের হয়ে মাঠে নামলে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলা সবচেয়ে বেশি ওজনের ক্রিকেটার হওয়ার রেকর্ড গড়বেন কর্নওয়াল।

২০১৫ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজ বোর্ড সভাপতি একাদশের হয়ে নজর কেড়েছিলেন কর্নওয়াল। ভারতের বিপক্ষে সে প্রস্তুতি ম্যাচে বিরাট কোহলি, চেতেশ্বর পূজারা ও অজিঙ্কা রাহানেসহ তুলে নিয়েছিলেন মোট ৫ উইকেট। ব্যাটিংটাও ভালোই পারেন কর্নওয়াল। ধরে খেলার সঙ্গে ছক্কাও মারতে পারেন অবলীলায়। তবে ব্যাটিং-বোলিংয়ের চেয়ে কর্নওয়ালের যে বিষয়টি আলাদা করে নজর কাড়বে, সেটি হলো তাঁর উচ্চতা ও ওজন—৬ ফুট ৬ ইঞ্চি উচ্চতার শরীরটির ওজন ১৪০ কেজি। সাধেই কী আর পর্বতের সঙ্গে তাঁর তুলনা হয়!

আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ঠিক কর্নওয়ালের মতো না হলেও তাঁর ধারে-কাছে ওজন নিয়ে খেলেছেন বেশ কিছু ক্রিকেটার। শুধু খেলেছেন কী, রীতিমতো মাঠ মাতিয়েছেন। ডব্লিউ জি গ্রেস থেকে ওয়ারউইক আর্মস্ট্রং, কলিন মিলবার্ন, ইনজামাম উল হক, অর্জুনা রানাতুঙ্গা, ডেভিড বুন...এমনকি আকরাম খানও থাকবেন এ তালিকায়। তবে নথিপত্র ঘেঁটে বিশ্লেষকেরা মনে করছেন, কর্নওয়ালের মতো ওজন আর কারও নেই। এখন শুধু আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে তাঁর অভিষেকের অপেক্ষা। তাহলেই পেছনে পড়বেন ওয়ারউইক আর্মস্ট্রং।

ক্যারিয়ারের একপর্যায়ে শুধু লাগামহীন ওজনের জন্যই আলোচনার খোরাক হয়েছেন, এমন পাঁচ ক্রিকেটার সমন্ধে আসুন জেনে নেই:

ওয়ারউইক আর্মস্ট্রং। আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলা সবচেয়ে বেশি ওজনের খেলোয়াড়। ছবি: টুইটার
ওয়ারউইক আর্মস্ট্রং। আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলা সবচেয়ে বেশি ওজনের খেলোয়াড়। ছবি: টুইটার


ওয়ারউইক আর্মস্ট্রং:
সবচেয়ে ওজনদার ক্রিকেটারদের একাদশ গঠন করা হলে ওয়ারউইক আর্মস্ট্রং নিশ্চিতভাবেই সে দলের অধিনায়ক হতেন। ১৯২০ থেকে ১৯২১—এ সময়ের মধ্যে অস্ট্রেলিয়াকে ১০ টেস্টে নেতৃত্ব দিয়ে হারের মুখ না দেখা আর্মস্ট্রংকে সবাই ডাকতেন ‘বিগ শিপ’। পাঁচ টেস্টের অ্যাশেজে অস্ট্রেলিয়ার যে তিনটি দল ইংল্যান্ডকে হোয়াইটওয়াশ করতে পেরেছে তার মধ্যে আছে আর্মস্ট্রংয়ের দলও। সে যা-ই হোক, এই অলরাউন্ডারকে ‘বিগ শিপ’ নামে ডাকার কারণ তাঁর উচ্চতা ও ওজন—৬ ফুট ৩ ইঞ্চি শরীরের ওজন ছিল ১৩৩ কেজি। মনে করা হয়, আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলা সবচেয়ে বেশি ওজনের ক্রিকেটারটি ওয়ারউইক আর্মস্ট্রং।

বারমুডার ডোয়াইন লেভেরক। আলোচনার ঝড় তুলেছিলেন ২০০৭ বিশ্বকাপে। ছবি: এএফপি
বারমুডার ডোয়াইন লেভেরক। আলোচনার ঝড় তুলেছিলেন ২০০৭ বিশ্বকাপে। ছবি: এএফপি


ডোয়াইন লেভেরক:
ওজনদার ক্রিকেটারের প্রসঙ্গ উঠলে তাঁর নামটিই উঠে আসবেই। শুধু লেভেরকের কারণেই ২০০৭ বিশ্বকাপে ভারত-বারমুডা ম্যাচটা মনে রেখেছেন অনেকে। আর সেই দৌড় কীভাবে ভুলবে কেউ! দ্বিতীয় ওভারেই ওপেনার রবিন উথাপ্পার ব্যাট ছুঁয়ে বল চলে যায় স্লিপে। সেখানে অবিশ্বাস্য ডাইভে বলটা এক হাতে মুঠোবন্দী করে লেভেরক যখন মাটিতে ল্যান্ড করলেন, অনেকেরই মনে হয়েছিল মাঠে ভূমিকম্প হতে পারে! সেটি ছিল বিশ্বকাপ ইতিহাসেই অন্যতম সেরা ক্যাচ, ক্যাচ নিয়েই লেভেরকের সে কী দৌড়! তবে সে বিশ্বকাপে আরও একটি কীর্তি গড়েছিলেন লেভেরক। সে বিশ্বকাপে তিনি ছিলেন সবচেয়ে বেশি ওজনের ক্রিকেটার। ১২৭ কেজি ওজন দিয়ে মাঠে ভুঁড়ি দুলিয়ে তাঁর হাঁটার দৃশ্যটা ছিল দেখার মতো।

রিচি কাশচুলা:
তিনি আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলার সুযোগ পাননি। তবে জিম্বাবুয়ের ঘরোয়া ক্রিকেটে কিংবদন্তিতুল্য। আর সমসাময়িক ক্রিকেটাররা (১৯৭০-১৯৮২) রিচি কাশচুলাকে চিনেছেন তাঁর অতিকায় ওজনের জন্য। ১২৬ কেজি ওজনের এ বাঁহাতি বোলার ফিল্ডিংয়ে দলকে বেশ ভোগালেও বোলিংয়ে অনেক ম্যাচ জিতিয়েছেন। প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে ৪৮ ম্যাচে ১৯৬ উইকেট নিয়েছেন কাশচুলা। ১৯৭২ সালে দক্ষিণ আফ্রিকা ক্রিকেটের বর্ষসেরাও হয়েছিলেন। প্রথম শ্রেণিতে তাঁর নেওয়া মোট উইকেটের ১২০টি সাবেক রোডেশিয়ার (জিম্বাবুয়ে সাবেক নাম) হয়ে, আর ৪৪ উইকেট নিয়েছেন জিম্বাবুয়ের হয়ে। তবে সেটি জিম্বাবুয়ে টেস্ট মর্যাদা পাওয়ার আগে।

দুর্ঘটনার জন্য ক্যারিয়ার বেশি দিন টেকেনি মিলবার্নের। ছবি: টুইটার
দুর্ঘটনার জন্য ক্যারিয়ার বেশি দিন টেকেনি মিলবার্নের। ছবি: টুইটার


কলিন মিলবার্ন:
গাড়ি দুর্ঘটনায় চোখের ক্ষতি হওয়ায় খুব বেশি দিন ক্রিকেট খেলার সুযোগ পাননি। ইংল্যান্ডের হয়ে খেলেছেন মাত্র ৯ টেস্ট। তবে এই স্বল্প সময়েই (১৯৬৬-১৯৬৯) নিজেকে সহজাত পাওয়ার হিটার হিসেবে চিনিয়েছিলেন কলিন মিলবার্ন। আর সে সময় নিজ প্রজন্মের যে কোনো ক্রিকেটারের চেয়ে বেশি ওজন ছিল তাঁর। ১২১ কেজি ওজনের মিলবার্নকে ওয়ারউইক আর্মস্ট্রংয়ের পর ভারতে খেলা সবচেয়ে স্থূলকায় ক্রিকেটার হিসেবে স্মরণও করেছিল উইজডেন ক্রিকেটার্স অ্যালমানাক।

পাকিস্তানের সাবেক ব্যাটসম্যান ইনজামাম উল হক। ছবি: এএফপি
পাকিস্তানের সাবেক ব্যাটসম্যান ইনজামাম উল হক। ছবি: এএফপি


ইনজামাম উল হক:
পাকিস্তানের ইতিহাসে অন্যতম সেরা তো বটেই, ইনজামাম উল হক তাঁর প্রজন্মেরও অন্যতম সেরা ব্যাটসম্যান। অথচ এক সময় এই একই ব্যাটসম্যানের দখলে ছিল ওয়ানডেতে সর্বোচ্চ সংখ্যকবার রান আউটের রেকর্ড। বিশালদেহী শরীর নিয়ে তাঁর ব্যাটিং যাঁরা দেখেছেন, তাঁরা জানেন, ক্যারিয়ারে কতবার হাস্যকরভাবে রান আউট হয়েছেন ইনজামাম। ২০০৩ বিশ্বকাপের আগে ১০ কেজি ওজন কমানোর কথা এক সাক্ষাৎকারেই বলেছিলেন ইনজামাম। তবে ক্যারিয়ারের একপর্যায়ে ইনজামামের ওজন ছিল ১০৬ কেজি। অবিশ্বাস্য ব্যাপার, খেলোয়াড়ি জীবনে এত ওজন নিয়েও স্লিপে দারুণ কিছু ক্যাচ আছে ইনজামামের।