তাঁর অবসর চোখ ফেরায় ২০১০-এর সুখস্মৃতিতে

২০১০ বিশ্বকাপে ব্রাজিলের বিপক্ষে ম্যাচে আরিয়েন রোবেন (বাঁয়ে) ও ডার্ক কাউটের (ডানে) সঙ্গে ওয়েলসি স্নেইডার। ফাইল ছবি
২০১০ বিশ্বকাপে ব্রাজিলের বিপক্ষে ম্যাচে আরিয়েন রোবেন (বাঁয়ে) ও ডার্ক কাউটের (ডানে) সঙ্গে ওয়েলসি স্নেইডার। ফাইল ছবি
>আন্তর্জাতিক ফুটবল থেকে অবসরের ঘোষণা দিয়েছেন ডাচ্‌ তারকা ওয়েসলি স্নেইডার।

একসময় বিশ্বের সেরা ক্লাব হওয়ার জন্য রিয়াল মাদ্রিদ তাঁকে দলে রাখার প্রয়োজন মনে করেনি। উল্টো তিনি রিয়াল থেকে ইন্টার মিলানে গিয়ে ইন্টারকে তুলেছিলেন ক্লাব-শ্রেষ্ঠত্বের চূড়ায়। তাঁর জাদুতেই ইন্টার প্রথম ইতালিয়ান ক্লাব হিসেবে অনবদ্য ট্রেবল জেতে। সেই ওয়েসলি স্নেইডারই এমন আরও অনেক সুখস্মৃতিকে পেছনে রেখে অবসরের ঘোষণা দিলেন গতকাল। তাঁর বুটজোড়া পাকাপাকিভাবে উঠে গেল শোকেসে, যেখানে ক্যারিয়ারজুড়ে পাওয়া অন্য ট্রফি-স্মারকগুলোও আছে।

এখন ম্যাথিস ডি লিট, ফ্রেঙ্কি ডি ইয়ংরা যে আয়াক্সের যুব দল থেকে উঠে এসেছেন, এককালে সে যুব দলেরই রত্ন ছিলেন স্নেইডার। ২০০২ সালে আয়াক্স দলের বিভিন্ন খেলোয়াড় চোটসমস্যায় জর্জরিত ছিলেন। উপায়ন্তর না দেখে তৎকালীন কোচ রোনাল্ড কোম্যান মূল দলে নিয়ে আসেন স্নেইডারকে। আর পেছনে তাকাতে হয়নি টাক–মাথার এই তারকাকে। ওদিকে তত দিনে নেদারল্যান্ডস দলেরও অন্যতম অংশ হয়ে গিয়েছিলেন তিনি। ২০০৬ বিশ্বকাপে নিজের প্রতিভা দেখিয়েছিলেন, যা দেখে আকৃষ্ট হয়ে তাঁর দিকে হাত বাড়িয়েছিল রিয়াল মাদ্রিদ। ডেভিড বেকহামের ফেলে যাওয়া ২৩ নম্বর জার্সি গায়ে জড়িয়েছিলেন তিনি। ২০০৯ সালে রিয়ালের ‘ডাচ্‌ হটাও’ প্রকল্পের বলি হয়ে স্বদেশি আরিয়ান রোবেন, রুড ফন নিস্টলরয় ও ক্লাস-ইয়ান হান্টেলারের সঙ্গে ক্লাব ছাড়েন স্নেইডার। রিয়াল তখন ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো, করিম বেনজেমা, কাকা, জাবি আলোনসোদের নিয়ে ‘দ্বিতীয় গ্যালাকটিকো’ নির্মাণের স্বপ্নে উন্মাতাল।

কিন্তু না, রোনালদো-কাকা-আলোনসোরা এত কিছুর পরও যা এনে দিতে পারলেন না রিয়ালকে, তা ইন্টারকে এনে দিলেন রিয়াল থেকে ব্রাত্য হয়ে পড়া স্নেইডার। স্নেইডারকে দলের মূল প্রাণভোমরা বানিয়ে হোসে মরিনহো ইন্টারকে জেতালেন চ্যাম্পিয়নস লিগ, ইতালিয়ান লিগ ও কাপের দুর্দান্ত ট্রেবল, যে গৌরব এখনো অন্য কোনো ইতালিয়ান ক্লাবের ভাগ্যে জোটেনি। সে মৌসুমের চ্যাম্পিয়নস লিগে স্নেইডার একাই নয়টি গোলে ভূমিকা রাখেন, কখনো করে, কখনো করিয়ে। জাতীয় দলের হয়েও সেবার স্নেইডার ছিলেন দুর্দান্ত। শেষ মুহূর্তে ইনিয়েস্তা নামের শেলটা বুকে না বিঁধলে হয়তো ওপারে থাকা ইয়োহান ক্রুইফদের মুখে হাসি ফুটিয়ে তিনিই নেদারল্যান্ডসকে এনে দিতে পারতেন প্রথম বিশ্বকাপ শিরোপা। আর সেই ব্যর্থতার কারণেই এত কিছু করার পরেও ব্যালন ডি’অর জেতা হয়নি এই তারকার। অনেকের মতে, মেসি নয়, সেবার বিশ্বের সেরা খেলোয়াড় হওয়ার কথা ছিল এই ডাচ্‌ তারকারই।

হাঁটুর চোটের কারণে এরপর আর কখনোই সেই উচ্চতায় উঠতে পারেননি স্নেইডার। ক্যারিয়ারের শেষ দিনগুলো কাটিয়েছিলেন গ্যালাতাসারাই, নিস ও আল ঘারাফার মতো ক্লাবে খেলে। নিজেই হয়তো বুঝতে পারছিলেন, সময় ফুরিয়ে যাচ্ছে। শেষমেশ তাই অবসরের ঘোষণা দিয়ে দিলেন নেদারল্যান্ডসের ইতিহাসের সবচেয়ে বেশি ম্যাচ খেলা এই তারকা।

খেলা ছেড়ে এখন ডাচ্‌ ক্লাব উটরেখটের মিডিয়াসংক্রান্ত চাকরিতে যোগ দেবেন তিনি, যে শহরে জন্মেছিলেন স্নেইডার।