ছিয়াশি বিশ্বকাপ ফাইনালে গোলদাতা আর্জেন্টাইন নায়কের বিদায়

>
ছিয়াশি বিশ্বকাপে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ম্যাচে হোসে লুইস ব্রাউন (বাঁয়ে)। ফাইল ছবি।
ছিয়াশি বিশ্বকাপে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ম্যাচে হোসে লুইস ব্রাউন (বাঁয়ে)। ফাইল ছবি।

অনেক দিন ধরে আলজেইমার রোগে ভুগতে থাকা হোসে লুইস ব্রাউন কাল ৬২ বছর বয়সে মারা গেছেন। ১৯৮৬ বিশ্বকাপে জার্মানির বিপক্ষে ফাইনালে আর্জেন্টিনার প্রথম গোলটি এই সেন্টারব্যাকের

মেক্সিকোর আজটেকা স্টেডিয়াম। ১৯৮৬ বিশ্বকাপ ফাইনাল, মুখোমুখি জার্মানি-আর্জেন্টিনা। ম্যাচের ২৩ মিনিটে ফ্রি-কিক আর্জেন্টিনার। জার্মানি বক্সের ডান দিকে পাওয়া সেই ফ্রি-কিকে হোর্হে বুরুচাগার ক্রস, সামনে থাকা মার্কারের চেয়ে বেশি লাফিয়ে তাতে হেড হোসে লুইস ব্রাউনের। বল জালে। প্রথম এগিয়ে যাওয়া আর্জেন্টিনার। একটু দৌড়ে গিয়ে মাটিতে বসে আকাশপানে হাত তুলে উদ্‌যাপন ক্যারিয়ারজুড়ে ‘টাটা’ নামে পরিচিত সেন্ট্রাল ডিফেন্ডারের। আর্জেন্টিনার জার্সিতে তাঁর প্রথম ও শেষ গোল সেটি।

শুধু কী গোল? ওই ম্যাচের শেষদিকে কাঁধের হাড় সরে গিয়েছিল তাঁর। কিন্তু বিশ্বকাপের ফাইনাল বলে কথা! ‘টাটা’ মাঠ ছাড়েননি, লড়াই ছাড়েননি। আর্জেন্টিনাকে বিশ্বকাপ জিতিয়ে হয়ে গেছেন দেশটির ফুটবল রূপকথার অংশ।

ম্যারাডোনা-বুরুচাগাদের ভিড়ে আর্জেন্টিনার ছিয়াশি বিশ্বকাপজয়ী নায়ক হিসেবে তাঁর নাম অতটা আসে না। ডিফেন্ডারদের ভাগ্যে যা হয় আর কী! কিন্তু আজটেকার ওই ফাইনাল বলবে হোসে লুইস ব্রাউনের কথা। তাঁর আজীবনের গর্বের কথা। সেই গর্ব সঙ্গী করেই ৬২ বছর বয়সে কাল পৃথিবীকে বিদায় জানিয়ে দিলেন ‘টাটা।’ অনেক দিন ধরেই আলজেইমার রোগে ভুগছিলেন। তাঁর পরিবারই জানিয়েছে, রোগটা সাবেক আলবিসেলেস্তে ডিফেন্ডারের শরীরে নানান প্রভাব ফেলছিল। সব লড়াই সাঙ্গ হলো কাল লা প্লাতায় নিজের বাড়িতে।

বোকা জুনিয়র্সে মাত্র নয়টি ম্যাচ ছাড়া ক্যারিয়ারে তেমন বড় ক্লাবে খেলেননি। লা প্লাতারই ক্লাব এস্তুদিয়ান্তেসেই কেটেছে বড় সময়। সেখানে প্রায় ৩০০ ম্যাচ খেলার পর কলম্বিয়ার আতলেতিকো নাসিওনালে গেছেন, সে সময়ই আর্জেন্টিনার আকাশি-সাদা গায়ে জড়ানোর সুযোগ আসে। ’৮৬ বিশ্বকাপের ঠিক আগে গিয়েছিলেন বোকা জুনিয়র্সে, সেখানের নয় ম্যাচের ওই ‘ক্যামিও’ শেষে সে বছরই ক্লাব বদলেছেন। কোচ কার্লোস বিলার্দো যে তাঁকে বিশ্বকাপের দলে নিয়েছিলেন, সে-ই বড় চমক ছিল! মূলত দানিয়েল পাসারেলার বিকল্প হিসেবে তাঁকে বিশ্বকাপে নিয়ে গিয়েছিলেন বিলার্দো, কিন্তু বিশ্বকাপে দলের মূল সেন্টারব্যাকদের একজনই হয়ে গিয়েছিলেন ব্রাউন। আর্জেন্টিনার জার্সিতে তাঁর ৩৬ ম্যাচের মধ্যে বিশ্বকাপের পাশাপাশি খেলেছেন ১৯৮৩, ১৯৮৭ ও ১৯৮৯ কোপা আমেরিকায়ও।

কোচ হিসেবেও কাজ করেছেন অনেক ক্লাবে। বোকা জুনিয়র্সে বিলার্দোর সহকারী ছিলেন, ২০০৫ থেকে ২০০৯ সাল পর্যন্ত আর্জেন্টিনার অনূর্ধ্ব-১৭ দলের কোচ ছিলেন। যদিও কোচিংয়ে কোথাও কিছু জেতার রেকর্ড নেই।

তাতে কী! এক বিশ্বকাপই তো ব্রাউনকে রঙিন করে রেখেছে আর্জেন্টিনার ফুটবল ইতিহাসে।