কাশ্মীরের এই ক্রিকেটার পরিবারকে ঈদের শুভেচ্ছাও জানাতে পারেননি

ভারতের শারীরিক প্রতিবন্ধী ক্রিকেট দলের ওপেনার ওয়াসিম ইকবাল। ছবি: ইন্ডিয়া টুডে
ভারতের শারীরিক প্রতিবন্ধী ক্রিকেট দলের ওপেনার ওয়াসিম ইকবাল। ছবি: ইন্ডিয়া টুডে
>ইংল্যান্ডে ফিজিক্যাল ডিজঅ্যাবিলিটি ওয়ার্ল্ড সিরিজ টুর্নামেন্টে চ্যাম্পিয়ন হয়েছে ভারত। তাদের দলের ব্যাটসম্যান ওয়াসিম ইকবাল উঠে এসেছেন কাশ্মীর থেকে। সেমিতে পাকিস্তানকে হারানোর পথে দুর্দান্ত ব্যাট করেন ওয়াসিম। কাশ্মীরে অস্থিরতা ও সহিংসতা চলায় ইংল্যান্ড থেকে পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারেননি ওয়াসিম। এমনকি ঈদের দিনেও শুভেচ্ছাটুকু পর্যন্ত জানাতে পারেননি

ঈদ মানে আনন্দ আর তা স্বজনদের সঙ্গে ভাগ করে নিতে চায় সবাই। কিন্তু ওয়াসিম ইকবালের জন্য এবারের ঈদটা যেন ‘হরিষে বিষাদ’। ভারতের শারীরিক প্রতিবন্ধী ক্রিকেট দলের এ ওপেনার জীবনে প্রথমবারের মতো ঈদ কাটালেন পরিবার ছাড়াই। ঈদের দিন তাঁকে মুখোমুখি হতে হয়েছে চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী পাকিস্তানের। আর সে ম্যাচে ভারতকে জিতিয়ে ম্যাচসেরাও হয়েছেন ওয়াসিম। এ হরিষে বিষাদ কিংবা বিষাদে হরিষ নয় তো আর কী!

ইংল্যান্ডে ফিজিক্যাল ডিজঅ্যাবিলিটি ওয়ার্ল্ড সিরিজ টুর্নামেন্টে সোমবার পাকিস্তানকে ৮ উইকেটে হারিয়ে ফাইনালে ওঠে ভারত। এ ম্যাচে ৪৩ বলে ৬৯ রানের ম্যাচজয়ী ইনিংস খেলেন ওয়াসিম ইকবাল। পরে ফাইনালে ইংল্যান্ডকে হারিয়েও চ্যাম্পিয়ন হয় ভারত। দল শিরোপা জেতায় ওয়াসিমের পরিবার ছাড়াই ঈদ করার কষ্টটা তাই কিছুটা হলেও লাঘব হওয়ার কথা। কিন্তু তাঁর দুশ্চিন্তা অন্য জায়গায়। তাঁর দেশ যে কাশ্মীর!

জম্মু-কাশ্মীরের অনন্তনাগ জেলার গোপাল পোরা গ্রামে ওয়াসিমের পরিবারের বসবাস। তিনি নিজেও উঠে এসেছেন সেখান থেকে। পরিবারের সঙ্গে ওয়াসিমের শেষ কথা হয়েছে ৩ আগস্ট। পরদিনই ভারতীয় সংবিধানের ৩৭০ ধারা বাতিল করে জম্মু-কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা খারিজ করে দেয় ভারতের নরেন্দ্র মোদী সরকার। এ ছাড়া জম্মু-কাশ্মীর রাজ্যকে দুই টুকরো করে দেওয়ার পদক্ষেপও নেওয়া হয়েছে। জম্মু-কাশ্মীরে বিশেষ মর্যাদা খারিজের ঘোষণার দিন থেকেই উত্তেজনা বিরাজ করে ওই অঞ্চলে। কাশ্মীরে ১৪৪ ধারা জারি করা হয়। মোবাইল ও ইন্টারনেট পরিষেবা বন্ধ করে দেওয়া হয়। প্রচুর সৈন্যও মোতায়েন করা হয়েছে সেখানে। আতঙ্কে সাধারণ মানুষ কাশ্মীর ছাড়ছে।

ওয়াসিম তাই পরিবারের নিরাপত্তা নিয়ে ভীষণ চিন্তিত। পাকিস্তানের বিপক্ষে ম্যাচেই একই ভাবনা তাঁকে কুরে কুরে খেয়েছে। তবে খেলায় মনঃসংযোগ হারাননি। ভারতকে জেতাতে ঠিকই নিজের দায়িত্ব পালন করেছেন কাশ্মীরের ২৫ বছর বয়সী এ ক্রিকেটার। ভারতীয় সংবাদমাধ্যমকে ওয়াসিম বলেন, ‘খুব চিন্তায় ছিলাম, এখনো আছি। প্রায় ১০ দিন ধরে পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারিনি। এসব ভুলে খেলায় মনোযোগী হওয়া অনেক কঠিন, এমনকি পাকিস্তানের বিপক্ষেও—যেটা কিনা আমাদের জন্য সবচেয়ে প্রত্যাশিত ম্যাচ ছিল। তবে দলকে শেষ পর্যন্ত জেতাতে পেরেছি।’

পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করতে না পেরেও হতাশ ওয়াসিম, ‘জীবনে এই প্রথমবারের মতো পরিবার ছাড়াই ঈদ করেছি, তাদের শুভেচ্ছাও জানাতে পারিনি। তাদের সত্যিই খুব মনে পড়েছে কিন্তু ফোন ও ইন্টারনেট সংযোগ বিচ্ছিন্ন থাকায় গত সপ্তাহ ধরে যোগাযোগ করতে পারিনি। ঘরের কী অবস্থা, সবাই কেমন আছে তা জানি না। তাদের নিয়ে সত্যিই খুব দুশ্চিন্তায় আছি। আশা করি, কাশ্মীর পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে।’

ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে গ্র্যাজুয়েশন সম্পন্ন করা ওয়াসিম মহেন্দ্র সিং ধোনির ভক্ত। শৈশবে ডান পায়ে অস্ত্রোপচার গড়বড় হওয়ায় সমস্যাটা একেবারে স্থায়ী হয়ে যায়। কাশ্মীরের মতো অস্থিতিশীল স্থানে পঙ্গুত্ব নিয়ে জীবনযুদ্ধে বাকিরা অন্য পেশা বেছে নিলেও ওয়াসিম লেখাপড়ার পাশাপাশি বেছে নেন ক্রিকেটও। ভারতের হয়ে একটি করে ওয়ানডে ও টি-টোয়েন্টি খেলা পারভেজ রাসুলের পরিচালনায় স্থানীয় ক্লাব ‘খান সুলতান’-এ যোগ দেন ওয়াসিম। ভারতের শারীরিক প্রতিবন্ধী দলে কাশ্মীর থেকে সুযোগ পাওয়া ওয়াসিম ও পেসার আমির হাসানের খেলার সরঞ্জামের জোগান দেন পারভেজ রাসুল।

পারভেজের কাছ থেকে উপহার পাওয়া ব্যাট দিয়েই পাকিস্তানের বিপক্ষে ৬ ছক্কায় সাজানো ইনিংসটি খেলেন ওয়াসিম। তাঁর ভাষায়, ‘কাশ্মীরে ক্রিকেট প্রতিভার অভাব নেই। সেখানে শান্তি প্রতিষ্ঠা হলে ভারতের হয়ে খেলার মতো অনেক ক্রিকেটারই উঠে আসবে।’