ডমিঙ্গোকে যে কারণে বেছে নিয়েছে বিসিবি

শেষ পর্যন্ত রাসেল ডমিঙ্গোকেই বেছে নিয়েছে বিসিবি, হেসনকে নয়।
শেষ পর্যন্ত রাসেল ডমিঙ্গোকেই বেছে নিয়েছে বিসিবি, হেসনকে নয়।

টম মুডির সঙ্গে মাইক হেসনকে ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ড (বিসিসিআই) ‘না’ করে দেওয়ার পর কাল সন্ধ্যা থেকেই জোর গুঞ্জন—বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি) যেকোনো সময় সাকিব-তামিমদের প্রধান কোচ চূড়ান্ত করে ফেলতে পারে। ভারতে চাকরি না পাওয়া হেসনের বাংলাদেশ দলের কোচ হওয়ার সম্ভাবনা এতে জোরালো হয়েছে বলেও অনুমান করা হচ্ছিল কাল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত উঁচু মানের (হাই প্রোফাইল) কিউই কোচ নন, বিসিবি বেছে নিয়েছে দক্ষিণ আফ্রিকান রাসেল ডমিঙ্গোকেই।

নামে-ভারে ডমিঙ্গোর তুলনায় হেসন কিছুটা হলেও এগিয়ে থাকবে, সেটি দ্বিমত করার সুযোগ নেই। নিউজিল্যান্ডের সাবেক এ কোচকে পেতে বিসিবিও বেশ আগ্রহী ছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত হেসনের সঙ্গে ‘ব্যাটে-বলে’ ঠিক হয়নি। হেসনকে বিশাল অঙ্কের পারিশ্রমিক দিতেও আপত্তি ছিল না বিসিবির। সমস্যাটা অন্যখানে। হেসন ঠিক বলতে পারছিলেন না কখন থেকে তিনি কাজ শুরু করতে পারবেন বাংলাদেশ দলে। তিন মাস পরেও আসতে পারেন, এমনকি যোগ দিতে ছয় মাসও হয়ে যেতে পারে।

কোচ চূড়ান্তকরণ প্রক্রিয়ার সঙ্গে যুক্ত থাকা বিসিবির একজন পরিচালক খানিকটা বিরক্তি নিয়ে আজ বললেন, ‘প্রথমে এসেছে তাঁর ভারতের কোচ হওয়ার বিষয়টি। আর এখনই আসতে পারবে না সেটা তো সে বুঝিয়েই দিয়েছে। সুনির্দিষ্টভাবে কত দিন কাজ করবে সেটাও বলেনি। কবে যোগ দেবে সেটি পরিষ্কার নয়। আমরা কি এটা নিয়ে ঝুলে থাকব না কি?’ শেষ দিকে আলোচনায় এসেছিল সদ্য পাকিস্তান-পর্ব শেষ করা মিকি আর্থারের নামও। তাঁকেও কেন বিসিবি বিবেচনা করা হয়নি, সেটি জানালেন ওই বোর্ড পরিচালক, ‘সে তো মাত্রই একটা বোর্ডের ডিসকার্ডেড (খারিজ হওয়া) কোচ। তাকে আমরা আবার নিই কীভাবে?’

বিসিবি যে কজন কোচের সাক্ষাৎকার নিয়েছে এর মধ্যে রাসেল ডমিঙ্গোই শুধু সশরীরে নিজের উপস্থাপনা (প্রেজেন্টেশন) দিয়েছেন। বিসিবি ভীষণ খুশি প্রোটিয়া কোচের পরিকল্পনা দেখে। আর অপেক্ষা না করে কাল ডমিঙ্গোকে চূড়ান্ত করে ফেলে বিসিবি। তাঁকে বেছে নিতে যে দুটি বিষয় ভীষণ গুরুত্ব দিয়েছে বিসিবি, সেটিই জানালেন বোর্ড প্রধান নাজমুল হাসান, ‘সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে, তাকে কখন পাওয়া যাচ্ছে। সামনে আমাদের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ আছে। সেখানে কিছু নতুন ক্রিকেটার জায়গা পেতে পারে। আমাদের কিছু বিকল্প লাগতে পারে। সেদিক দিয়ে যদি চিন্তা করেন, এখন থেকেই নিচে থেকে খেলোয়াড়দের নিয়ে আসতে হবে। রাসেল কিন্তু এটাই করতে চাচ্ছে। সে আমাদের অনূর্ধ্ব-১৯ দল, এইচপি এসব এক করে কাজ করতে চাইছে। সে এ রকমই কাজ করেছে দক্ষিণ আফ্রিকায়। এটা একটা বাড়তি পাওয়া। সে আমাদের চার বছরের একটা পরিকল্পনা দিয়েছিল। অন্যরাও দিয়েছে। তবে সে সামনাসামনি দিয়েছে। কেউ স্কাইপেতে দিয়েছে, কেউ লিখিত দিয়েছে। এদিক দিয়ে চিন্তা করলে সে এগিয়ে ছিল।’

আপাতত বিসিবির সঙ্গে দুই বছরের চুক্তি ডমিঙ্গোর। যোগ দেবেন এ সপ্তাহেই। সাবেক এ প্রোটিয়া কোচের আরও একটি দিক ভালো লেগেছে বিসিবি সভাপতির, ‘সে বলেছে, আমার কোনো ছুটির দরকার নেই। আমার কোনো পিছুটান নেই। আমি খেলোয়াড়দের বেশি সময় দিতে চাই।’

যা বোঝা গেল, অন্য হাই প্রোফাইল কোচদের মতো পারিশ্রমিক আকাশ ছোঁয়া নয়, কোচিং পেশায় দীর্ঘ অভিজ্ঞতা, টানা কাজ করার প্রতিশ্রুতি, তরুণ প্রতিভাবান ক্রিকেটারদের আন্তর্জাতিক অঙ্গনে প্রতিষ্ঠিত করার ভাবনা, বাংলাদেশের হয়ে কাজ করতে ভীষণ আগ্রহী—এসব ভেবেই বিসিবি ডমিঙ্গোকে চূড়ান্ত করেছে।

ডমিঙ্গোও ভীষণ খুশি নতুন চ্যালেঞ্জ নিয়ে, ‘বাংলাদেশ জাতীয় দলের কোচ হওয়াটা অনেক বড় সম্মানের। ভীষণ আগ্রহ নিয়ে আমি বাংলাদেশ দলকে অনুসরণ করি। সামর্থ্য অনুযায়ী তারা যে লক্ষ্যে যেতে চায়, সেটি সহায়তা করার সুযোগ পেয়ে আমি রোমাঞ্চিত।’