স্মিথ, এতটা দুঃসাহস ভালো না

মাথায় বলের আঘাত পেয়ে উইকেটে পড়ে আছেন স্মিথ। ছবি: এএফপি
মাথায় বলের আঘাত পেয়ে উইকেটে পড়ে আছেন স্মিথ। ছবি: এএফপি
>লর্ডস টেস্টে কাল মাথায় মারাত্মক আঘাত পেয়েছিলেন স্টিভ স্মিথ। হেলমেট পরা থাকলেও বল আঘাত হেনেছে বাঁ কানের নিচে উন্মুক্ত জায়গায়। হেলমেটের নিচে স্টেম গার্ড না পরায় চোটটা আরও বেশি লেগেছে স্মিথের। দ্বিতীয়বার মাঠে নামার সময়েও ওই গার্ড তিনি ব্যবহার করেননি বলেই জানা গেছে

অ্যাশেজে এ পর্যন্ত তিন ইনিংস ব্যাট করার সুযোগ পেয়েছেন স্টিভ স্মিথ। ১৪৪, ১৪২ ও ৯২—এজবাস্টন ও চলতি লর্ডস টেস্ট মিলিয়ে তিন ইনিংসে স্মিথের স্কোর। ইংলিশ ধারাভাষ্যকার ডেভিড লয়েড তাই রসিকতা করেছেন, ‘স্টিভ স্মিথকে কীভাবে আউট করতে হবে, তা জানা থাকলে দয়া করে ইংল্যান্ড ড্রেসিং রুমকে জানান।’

জফরা আর্চার পথটা বের করেছিলেন। কাল ঘণ্টায় ১৫০ কিমি গতির আশপাশে গোলার মতো বাউন্সার দিয়েছেন স্মিথকে। তেমনই একটি ডেলিভারি এড়াতে গিয়েও পারেননি। বল আঘাত হানে বাঁ কানের নিচে উন্মুক্ত জায়গায়। আঘাতটা যে বেশ মারাত্মক ছিল তা স্মিথের হুমড়ি খেয়ে পড়া দেখেই বোঝা গেছে। পরে উঠে দাঁড়িয়েছেন, চিকিৎসার জন্য মাঠ ছেড়ে গিয়ে আবার ফিরে এসে আউটও হয়েছেন। লর্ডসে কাল সাবেক অস্ট্রেলিয়া অধিনায়কের বলের আঘাত পাওয়ার পর একটা প্রশ্ন উঠেছে, হেলমেটের নিচের অংশে অতিরিক্ত যে নিরাপত্তা ‘স্টেম গার্ড’ তা স্মিথ ব্যবহার করেননি কেন?

২০১৪ সালে মাথায় বলের আঘাত পেয়ে মারা যান অস্ট্রেলিয়ার ওপেনার ফিল হিউজ। তাঁর মৃত্যুর পর ব্যাটসম্যানদের নিরাপত্তা বাড়াতে হেলমেটের পেছনে নিচের অংশে ‘স্টেম গার্ড’ ব্যবহার শুরু হয়। আর এটি তৈরি করেছিল ব্রিটেনের হেলমেট প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠান মাসুরি। তারপর থেকে বিশ্বের বেশির ভাগ ব্যাটসম্যানই স্টেম গার্ড জুড়ে দেওয়া হেলমেট পরে ব্যাট করে থাকেন। ফোম ও প্লাস্টিকে বানানো এ স্টেম গার্ড মাথার পেছনে নিচের অংশ ও ঘাড়ের ওপরে নিরাপত্তা নিশ্চিত করে থাকে।

অস্ট্রেলিয়ার কোচ জাস্টিন ল্যাঙ্গার সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছেন, হেলমেটের সঙ্গে এ স্টেম গার্ড পরে ব্যাট করতে স্বচ্ছন্দবোধ করেন না স্মিথ। আর এটি ব্যবহার করা বাধ্যতামূলকও নয়। তবে ল্যাঙ্গার মনে করেন, কালকের ঘটনার পর স্মিথ হয়তো হেলমেটে স্টেম গার্ড ব্যবহার করা শুরু করবেন। আর এটি ব্যবহার করা বাধ্যতামূলক করা হলেও অবাক হবেন না ল্যাঙ্গার।

শুধু হেলমেট পরে স্মিথ ব্যাট করতে নামার পেছনে অস্ট্রেলিয়ার এ কোচ নিজেকেও কিছুটা দোষী বলে মনে করেন, ‘আসলে বুঝতে পারিনি...হয়তো আমারই ভুল...বুঝতে পারিনি আজকের আগ পর্যন্ত এটা (স্টেম গার্ড) বাধ্যতামূলক ছিল না। তা ছাড়া স্টিভ তার বইয়েও লিখেছে এটা পরতে পছন্দ করে না। ঠিক স্বস্তি পায় না। সবারই এমন কিছু নিজস্ব ছোটখাটো পছন্দ-অপছন্দ থাকে। জুতো নোংরা করা যেমন তার অপছন্দ।’

স্মিথ আঘাত পাওয়ার পর এই স্টেম গার্ড পরা না পরা নিয়ে নতুন করে আলোচনা শুরু হবে বলেও মনে করেন ল্যাঙ্গার, ‘আমি নিশ্চিত আজকের (কাল) পর এ নিয়ে আবার কথা শুরু হবে। হিউজ মারা যাওয়ার পর এটা (স্টেম গার্ড) এসেছে। আর আজকের পর সে (স্মিথ) নিজেও এটা পরার ব্যাপারে পুনর্বিবেচনা করতে পারে। এ মুহূর্তে পছন্দটা খেলোয়াড়ের তবে ভবিষ্যতে তা বাধ্যতামূলক করা হলে আমি অবাক হব না।’

মাথায় এমন আঘাত নিয়ে মাঠ ছেড়ে বেরিয়ে যান স্মিথ। তখন তাঁর রান ছিল ৮০। ১০ ওভার পর আবারও মাঠে নামেন। ১২ রান যোগ করে যেভাবে বল ছেড়ে এলবিডব্লু হয়েছেন, তা দেখে মনে হয়েছে, মাথার আঘাতটা মনে দ্বিধার বীজ ঢুকিয়ে দিয়েছে হয়তো! অ্যাশেজে টানা তৃতীয় সেঞ্চুরিটা হাতছাড়া হলো মাত্র ৮ রানের জন্য।

তবে এর কিছুই নয়, স্মিথ সবচেয়ে বেশি চমকে দিয়েছেন, দ্বিতীয়বার ব্যাট করতে নামার সময়েও স্টেম গার্ড পরেননি! সামাজিক মাধ্যমে তাঁর ভক্তেরা এর জন্য অনুযোগই করছেন। স্মিথকে এরপর থেকে স্টেম গার্ড পরে খেলার অনুরোধ তাঁদের কণ্ঠে।