ক্রিকেট মাঠে চোট - মনে পড়ে হিউজ, লাম্বাদের

হিউজ ও লাম্বা: ক্রিকেট মাঠে দুই শোকাতুর ঘটনার যাদের ঘিরে। ফাইল ছবি
হিউজ ও লাম্বা: ক্রিকেট মাঠে দুই শোকাতুর ঘটনার যাদের ঘিরে। ফাইল ছবি
>

লর্ডস টেস্টে মাথায় মারাত্মক আঘাত পেয়েছিলেন স্টিভ স্মিথ। হেলমেট পরা থাকলেও জফরা আর্চারের দুরন্ত বাউন্সার আঘাত হেনেছে স্মিথের বাঁ কানের নিচে উন্মুক্ত জায়গায়। এখনো পুরোপুরি সুস্থ হননি, কনকাশানে ভুগছেন। গতকাল ঘোষণা এসেছে, অ্যাশেজের তৃতীয় টেস্টে খেলা হবে না তাঁর। ক্রিকেটে এমন ভয়–জাগানিয়া চোট কিংবা কনকাশানের ঘটনা আর কী কী আছে?

এখনো সকালে ঘুম থেকে ওঠার পর স্টিভ স্মিথের মাথা ঝিমঝিম করছে, যন্ত্রণা করছে বেশ। কনকাশানের লক্ষণ স্পষ্ট। এই অবস্থায় যেকোনো খেলোয়াড়কেই বিশ্রামে রাখতে হয়। অস্ট্রেলীয় ক্রিকেট দল সেটিই করেছে। হেডিংলিতে অ্যাশেজের তৃতীয় টেস্টের জন্য বিবেচনা করা হচ্ছে না তাঁকে। মাথার আঘাতটা একদম সেরে না উঠলে তাঁকে নিয়ে ঝুঁকি নিতে চায় না অস্ট্রেলিয়া। তবে স্মিথই প্রথম নন। ক্রিকেট মাঠে চোটের ঘটনার তালিকা কিন্তু যথেষ্ট দীর্ঘ। ক্রিকেট মাঠে চোট লেগে আছে মৃত্যুর ঘটনাও। ১৯৯৮ সালে ঢাকা লিগের ম্যাচে মাথায় আঘাত পেয়ে ভারতীয় ক্রিকেটার রমন লম্বার আহত হওয়া ও এরপর মৃত্যুর স্মৃতিতে আজও শিউরে ওঠেন ক্রিকেটপ্রেমীরা। ফিল হিউজের মৃত্যু তো ক্রিকেট ইতিহাসেরই এক বিয়োগান্ত ঘটনা।

ক্রিকেট মাঠে আঘাতের অজস্র ঘটনা থেকে কয়েকটি পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হলো...

ফিল হিউজ, অস্ট্রেলিয়া
ক্রিকেট মাঠে চোট পাওয়ার সবচেয়ে মারাত্মক আর বিষাদময় উদাহরণ সম্ভবত এটাই। ২০১৪ সালের ২৫ নভেম্বর শেফিল্ড শিল্ডের এক ম্যাচে তরুণ অস্ট্রেলিয়ান পেসার শন অ্যাবটের এক বাউন্সার আঘাত ফিল হিউজের মাথায়। সেই যে লুটিয়ে পড়েছিলেন মাঠে, আর ওঠা হয়নি তাঁর। দুই দিন পর মারা যান অস্ট্রেলিয়ার অন্যতম সম্ভাবনাময় এ ওপেনার।

রমন লাম্বা, ভারত
রমন লম্বার মৃত্যু খুব সম্ভবত বাংলাদেশের ক্রিকেটের সবচেয়ে বিয়োগান্ত ঘটনা। ১৯৯৮ সালের ফেব্রুয়ারিতে বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে প্রিমিয়ার লিগের ম্যাচে মাথায় আঘাত পেয়েছিলেন এ ভারতীয় টেস্ট ক্রিকেটার। কয়েক দিন পর সেই আঘাতই তাঁকে ঠেলে দেয় মৃত্যুর মুখে।
ব্যাটসম্যানের কাছাকাছি ফিল্ডিং করার সময় হেলমেট না পরার এক বদভ্যাস ছিল এই তারকার। আর সেই বদভ্যাসটাই কাল হয়েছিল। আবাহনীর হয়ে লম্বা খেলছিলেন মোহামেডানের বিপক্ষে। মেহরাব হোসেনের এক শট লাগে ফরওয়ার্ড শর্ট লেগে ফিল্ডিং করতে থাকা লাম্বার মাথায়। কাছেই ছিলেন আমিনুল ইসলাম বুলবুল, লাম্বা ঠিক আছে কি না, জিজ্ঞেস করতে যান। রমন বলেন, ‘ম্যায় তো মার গায়া বুলি! (আমি তো মরে গেলাম বুলবুল!)। প্রথমে চোটটা অত গুরুতর না লাগলেও অভ্যন্তরীণ রক্তক্ষরণে আক্রান্ত হন লাম্বা। দিল্লি থেকে চিকিৎসক এনেও লাভ হয়নি। তিন দিন পর মারা যান তিনি।

মুশফিকুর রহিম, বাংলাদেশ
বাংলাদেশের খেলোয়াড়রাও এই কনকাশানের ছোবল থেকে মুক্তি পাননি। ২০১৭ সালের ১৬ জানুয়ারি, কুই পেসার টিম সাউদির এক বল লাগে মুশফিকুর রহিমের মাথায়। ঠিক সময়ে মাথা সরাতে পারেননি, ফলে কনকাশানে আক্রান্ত হন এই তারকা। ২০ মিনিট ধরে শুশ্রূষা করা হয় মুশফিকুরের। তারপর আস্তে আস্তে ঠিক হয়ে যান।

জর্জ সামার্স, ইংল্যান্ড
এমসিসির বিপক্ষে ১৮৭০ সালে এক ম্যাচ খেলতে নেমেছিলেন ইংলিশ ব্যাটসম্যান জর্জ সামার্স। জন প্লাটসের এক বাউন্সার আঘাত হানে তাঁর মাথায়। চোটাক্রান্ত সামার্সকে মাঠের বাইরে নিয়ে যাওয়া হয়। তখন আশেপাশে থাকা সতীর্থ ও চিকিৎসক দলের মনে হলো, সুস্থ হয়ে উঠছেন সামার্স। তাই আর তাঁকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়নি। আর সেটাই কাল হয়েছিল এই ব্যাটসম্যানের। চার দিন পর মারা যান তিনি।

নরি কনট্রাক্টর, ভারত
মাথার চোট শেষই করে দিয়েছিল এই ভারত অধিনায়কের ক্যারিয়ার। ১৯৬২ সালে বার্বাডোজের কেনসিংটন ওভালে ওয়েস্ট ইন্ডিজ পেসার চার্লি গ্রিফিথের এক বাউন্সার সরাসরি গিয়ে আঘাত করে নরি কনট্রাক্টরের মাথার পেছনে। খুলির ভেতর রক্ত জমাট বেঁধে গিয়েছিল কনট্রাক্টরের, দু-দুটি অস্ত্রোপচারের পর সে সমস্যার সমাধান হয়। সে যাত্রায় কনট্রাক্টর বেঁচে গেলেও, ক্রিকেট মাঠে আর ফেরা হয়নি তাঁর।

আজহার আলী, পাকিস্তান
রমন লাম্বার মতো আজহার আলীও সেদিন ফিল্ডিং করছিলেন ফরওয়ার্ড শর্ট লেগে। অস্ট্রেলিয়ার ব্যাটসম্যান ম্যাথু ওয়েডের এক জোরালো পুল শট আঘাত হানে তাঁর মাথায়। মাঠেই লুটিয়ে পড়েন আজহার আলী। তাও মাথায় হেলমেট ছিল বলে রক্ষা। পরে আস্তে ধীরে সুস্থ হয়ে যান তিনি।