মধুর স্মৃতি যখন এপ্রিল টোয়েন্টি ফাইভ

নাসের হেজাজির অধীনে মোহামেডানের এ দলটিই ১৯৮৮ সালে হারিয়েছিল উত্তর কোরিয়ার এপ্রিল টোয়েন্ট ফাইভকে।
নাসের হেজাজির অধীনে মোহামেডানের এ দলটিই ১৯৮৮ সালে হারিয়েছিল উত্তর কোরিয়ার এপ্রিল টোয়েন্ট ফাইভকে।
>ইমতিয়াজ সুলতান জনি। জাতীয় ফুটবল দলের সাবেক অধিনায়ক। মোহামেডানের হয়ে দুইবার উত্তর কোরিয়ার এপ্রিল টোয়েন্টি ফাইভের বিপক্ষে খেলার স্মৃতি আছে তাঁর। সে স্মৃতি মধুরই।

ইমতিয়াজ সুলতান জনি বেশ স্মৃতি কাতরই হয়ে পড়েছেন। আজ এএফসি কাপের ইন্টার জোনাল সেমিফাইনালে আবাহনী লিমিটেড মুখোমুখি হবে উত্তর কোরিয়ার এপ্রিল টোয়েন্টি ফাইভ স্পোর্টস ক্লাবের বিপক্ষে। এ ম্যাচটিকে সামনে রেখেই তিনি স্মৃতিকাতর। ৩১ বছর আগে মালয়েশিয়ার পাহাংয়ে মোহামেডানের সাদা-কালো জার্সি গায়ে তিনি খেলেছিলেন এই ক্লাবটির বিপক্ষেই। কেবল খেলেন-ই-নি, জয়ও তুলে নিয়েছিল তাঁর দল। ১-০ গোলের সে জয় তাঁর ফুটবল জীবনেরই অন্যতম স্মরণীয় ঘটনা হয়ে আছে।

ইরানি কোচ নাসের হেজাজির সেই মোহামেডানের লেফট ব্যাক ছিলেন জনি, ‘আমি সে মৌসুমেই আবাহনী ছেড়ে মোহামেডানে যোগ দিয়েছিলাম। মালয়েশিয়াতে এশিয়ান ক্লাব কাপের সেমিফাইনাল লিগ খেলতে গিয়েছিলাম আমরা। প্রথম ম্যাচেই হারিয়ে দিই উত্তর কোরিয়ার এপ্রিল টোয়েন্টি ফাইভকে। সেটি আমার ফুটবল জীবনের অন্যতম মধুর স্মৃতি।’

৩১ বছর আগের সে স্মৃতি আজ ভীষণভাবেই মনে পড়ছে তাঁর, ‘আজ আবাহনী খেলবে সেই এপ্রিল টোয়েন্টি ফাইভের বিপক্ষে। আবাহনীর খেলোয়াড়েরা আমাদের সেই সাফল্যকে অনুপ্রেরণা হিসেবে নিতেই পারে। সত্যি বলতে কি, ৩১ বছর আগের সেই মোহামেডান দলটিও ছিল দুর্দান্ত। নাসের হেজাজির মতো কোচ ছিল। দেশি খেলোয়াড়েরাও ছিল দুর্দান্ত। দলে ছিল এমেকা ইজিউগো, রেজা নালজেগার ও বিজেন তাহিরির মতো উঁচু মানের বিদেশি ফুটবলার। তবে এপ্রিল টোয়েন্টি ফাইভ ক্লাব এশিয়ারই অন্যতম সেরা ক্লাব ছিল সে সময়। আমরা গোটা ম্যাচে সমান তালে খেলেই জিতেছিলাম।’

সে ম্যাচে মোহামেডানের পক্ষে জয়সূচক গোলটি করেছিলেন ইরানি ফুটবলার বিজেন তাহিরি। সেই তাহিরিই ১৯৮৮-৮৯ মৌসুমে ঢাকা লিগে ২৪ গোল করে সর্বোচ্চ গোলদাতা হয়েছিলেন। জনি মনে করেন এত উঁচু মানের বিদেশি ফুটবলারদের অন্তর্ভুক্তিই সে টুর্নামেন্টে মোহামেডানকে দারুণ একটা দলে পরিণত করেছিল। তবে তাঁর আক্ষেপও আছে। সে আসরেই এপ্রিল টোয়েন্টি ফাইভ ক্লাবকে হারানোর পর কাতারের বিখ্যাত আল-সাদের সঙ্গে ২-২ গোলে ড্র করেছিল মোহামেডান। সৌদি আরবের আল ইত্তিফাকের বিপক্ষে ৩-১ গোলে হারলেও শেষ ম্যাচে মালয়েশিয়ার পাহাং এফসির বিপক্ষে ২-১ গোলে হেরে যাওয়াটা আজও দুঃখ দেয় তাঁকে, ‘আল-সাদের সঙ্গেও আমরা ড্র করেছিলাম। সৌদি আরবের আল-ইত্তিফাক ক্লাব ছিল প্রচণ্ড শক্তিশালী। সে ম্যাচটা হেরে যাই। কিন্তু দুঃখ দেয় শেষ ম্যাচটায় পাহাংয়ের কাছে হারটা। যেকোনো বিচারে আমরা ছিলাম শক্তিশালী দল। খুব বাজে দুটি গোল খেয়েছিলাম মনে আছে।’

মোহামেডানের সেমিফাইনাল লিগে পৌঁছানোর স্মৃতিটাও মধুর। পথটা কঠিন ছিল। প্রাথমিক পর্বে মোহামেডানের গ্রুপে ছিল শ্রীলঙ্কার স্যান্ডার্স ক্লাব ও ইরানের শক্তিশালী পিরুজি। স্যান্ডার্সের সঙ্গে গোলশূন্য ড্র করলেও পিরুজিকে ২-১ গোলে হারিয়ে সেমিফাইনাল পর্বে পৌঁছে যায় মোহামেডান। জনির ভুলতে পারেন না সে স্মৃতিও, ‘এপ্রিল টোয়েন্টি ফাইভের চেয়েও শক্তিশালী ছিল ইরানের পিরুজি। ওদেরকে আমরা হারিয়েছিলাম। আসলে হেজাজির অধীনে মোহামেডান সেই কয়েক বছর অন্য পর্যায়ের ফুটবল খেলেছিল। ওই ধরনের খেলা আমি অন্তত বাংলাদেশের কোনো ক্লাবকে খেলতে দেখিনি। এমনকি মোহামেডানও পরে খেলতে পারেনি।’

এপ্রিল টোয়েন্টি ফাইভের বিপক্ষে আরও একটি ম্যাচ খেলেছিলেন জনি। সেটি ১৯৯১ সালের জুলাইতে। দশম এশিয়ান ক্লাব কাপ ফুটবলের চূড়ান্ত পর্ব সেবার অনুষ্ঠিত হয়েছিল ঢাকায়। উত্তর কোরিয়ার ক্লাবটির বিপক্ষে মোহামেডান গোলশূন্য ড্র করে। প্রথম ম্যাচে থাইল্যান্ডের ব্যাংকক ব্যাংকের সঙ্গে ১-১ গোলে ড্র করার পর শেষ ম্যাচে ইরানের ইশতেগলালের সঙ্গেও ১-১ গোল ড্র করে মোহামেডান। ইরানের ক্লাবটির বিপক্ষে জিতলে সেমিফাইনাল নিশ্চিত হতো সাদা-কালোদের। কিন্তু সেটি হয়নি।