ওরা এত খেপল কেন - মিল খুঁজতে কোহলিকে রিচার্ডস

ভিভ রিচার্ডস ও বিরাট কোহলি। ছবি: বিসিসিআই
ভিভ রিচার্ডস ও বিরাট কোহলি। ছবি: বিসিসিআই
>বিরাট কোহলিকে মাঠে খুবই আক্রমণাত্মক মনে হয় আপনার? কখনো মনে হয়, কোহলি কোনো কারণ ছাড়াই বেশি উত্তেজনা দেখাচ্ছেন! এতটা না দেখালেও পারতেন। এটাই কোহলির আসল শক্তি। কোহলির সঙ্গে নিজের মিল খুঁজতে গিয়ে তা-ই বললেন ভিভ রিচার্ডস

শুধু হেলমেট? এখন মাথার বাড়তি অংশের নিরাপত্তার জন্য স্টেম গার্ড ব্যবহার হচ্ছে। ফিলিপ হিউজ মারা যাওয়ার পর থেকে সবাই কত সতর্ক। এই তো সেদিক মাথায় বাউন্সারের আঘাতে লুটিয়ে পড়েছিলেন স্টিভ স্মিথও। এমন যুগে অনেকের মনে পড়ে যাওয়ার কথা ভিভ রিচার্ডস কীভাবে ব্যাটিংটা করতেন। মাথায় হেলমেটের বদলে ওয়েস্ট ইন্ডিজের মেরুন রঙের ব্যাগি টুপিটা ছিল সব সময়। আর মুখে চুইংগাম। কেমন নির্লিপ্ত ভঙ্গিতে একের পর এক বল পাঠাচ্ছেন সীমানার ওপারে!

কাছে পেতেই কোহলি তাই প্রশ্নটা পেড়ে বসলেন ভিভ রিচার্ডসকে। আর রিচার্ডসও দিলেন দারুণ উত্তর। ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ডের সামাজিক মাধ্যমের জন্য কোহলি ক্ষণিকের সাংবাদিকের ভূমিকা নিয়েছিলেন। প্রশ্ন করেছেন রিচার্ডসকে। ক্যারিবীয় কিংবদন্তিও দারুণ উপভোগ করেছেন কোহলির এই সাংবাদিকতা।

কোহলির ভারত এখন ওয়েস্ট ইন্ডিজে সফর করছে। আজ শুরু হচ্ছে দুই টেস্ট সিরিজের প্রথমটি। এর আগে দুই যুগের দুই আগ্রাসী ব্যাটসম্যান মুখোমুখি হয়েছিলেন প্রশ্নোত্তরে।

কোহলি রিচার্ডসকে বলেন, ‘যতবারই আপনার ব্যাটিং ভিডিওতে দেখেছি, ব্যাট করতে নেমেছেন মাথায় কেবল টুপি পরে, তখন তো এক সময় হেলমেটই ছিল না। তার পর যখন হেলমেট এল, আপনি এক সময় ওটা না ব্যবহার করার সিদ্ধান্ত নিলেন। মুখে চুইংগাম। তখন তো উইকেট এখনকার মতো এত যত্ন করে বানানো হতো না, ঢেকে রাখাও হতো না। তখন ব্যাপারটা কেমন ছিল? খুব বেশি সুরক্ষা নিয়ে নামছেন না এই ব্যাপারটা আপনাকে কতটা ভাবাত? তখন তো ওভারে কয়টা বাউন্সার দেওয়া যাবে, এমন নিয়মও ছিল না। তবু আপনি চড়াও হয়ে পাল্টা আক্রমণ করতেন!’

উত্তরে রিচার্ডস বলেছেন, ‘আমার বিশ্বাস ছিল কেউ পারলে আমিই পারব এভাবে ব্যাট করতে। শুনতে মনে হতে পারে আমি উদ্ধত। কিন্তু আমার সব সময়ই মনে হয়েছে, আমি এমন একটা খেলা খেলছি, যে খেলাটা আমি খুব ভালো জানি। তাই সব সময়ই নিজেকে সাহস দিতে পারতাম। তোমাকে সেই সাহসটা দিতে হবে। বল গায়ে লাগলে লাগবে, আঘাত সহ্য করতে হলে করবে। তোমাকে মিথ্যা বলব না, হেলমেট ব্যাপারটা আমি পরার চেষ্টা করে দেখেছি। কিন্তু কিছুটা অস্বস্তি হতো ওটা পরে ব্যাট করতে নামলে। তাই সিদ্ধান্ত নিলাম, আমার মেরুন টুপিটাই সই, এটা নিয়ে আমার খুব গর্ব হতো। আমার ভাবনাটা ছিল এমন, আমি যথেষ্ট ভালো ব্যাটসম্যান। যদি বল সামলাতে না পেরে আহতও হই, সেটা ঈশ্বরের ইচ্ছা। কিন্তু আমি ঠিকই সামলে নিতে পারব।’

কোহলি তখন যোগ করেন, ‘আমার সব সময় মনে হয় এই গায়ে লাগল, গায়ে লাগল ভেবে ভয়ে থাকার চেয়ে ব্যাটিং করার শুরুর দিকেই আঘাতটা পেয়ে গেলে ভালো। তাই আমি বরং চাইব আঘাত লাগলে শুরুর দিকেই লাগুক, আর সেটা এত জোরে, যেন সেটা আমাকে উজ্জীবিত করে পরের বার এটা আবার না হতে দিতে। সেই ব্যথাটা শরীরে ছড়িয়ে দিয়ে ভাবা, ঠিক আছে, এটা আর হচ্ছে না।’

কোহলির আক্রমণাত্মক মেজাজটা যে উপভোগ করেন, সেটিও বলেছেন রিচার্ডস, ‘আমার সব সময়ই মনে হয়েছে মাঠে লড়াই করার জন্য আমি উপযুক্ত। সম্ভাব্য সেরা উপায়েই নিজেকে তুলে ধরার চেষ্টা করতাম। আমি কিন্তু কিছুটা হলেও তোমার মধ্যে এটা দেখি। সেই একই তীব্র আবেগ। কখনো কখনো এমন সময় আসে, যখন আমাদের মতো খেলোয়াড়দের দেখে বাকিরা ভাবে, ‘‘ঘটনা কী, ওরা এত খেপল কেন?’’

১৯৯১ সালে অবসর নেওয়া রিচার্ডস টেস্টে ৮ হাজার ৫৪০ ও ওয়ানডেতে ৬ হাজার ৭২১ রান করেছেন। কোহলির সঙ্গে যে নিজের ব্যাটিংয়ের অনেক মিল পান. সে কথা রিচার্ডস আগেও বলেছেন।