ক্যারিবীয়দের উত্থান যেখানে বাংলাদেশের দীর্ঘশ্বাস

গত বছর বাংলাদেশের বিপক্ষে বিধ্বংসী কেমার রোচ। ছবি: এএফপি
গত বছর বাংলাদেশের বিপক্ষে বিধ্বংসী কেমার রোচ। ছবি: এএফপি
>গত দুই বছরে টেস্টে দেশের মাঠে আশ্চর্য উন্নতি হয়েছে ওয়েস্ট ইন্ডিজের ফাস্ট বোলারদের। সোনালি সে সময়ের ওয়েস্ট ইন্ডিজ পুরোপুরি হয়তো নয়, তবে ফাস্ট বোলিং আক্রমণে এই ওয়েস্ট ইন্ডিজ বেশ মুগ্ধ করে। দুঃসময় পেছনে ফেলে ক্যারিবীয়রা ভালো মানের ফাস্ট বোলার পেয়েছে, কিন্তু বাংলাদেশ এখানে যে পিছিয়েই থেকেছে

অ্যান্ডি রবার্টস, মাইকেল হোল্ডিং, জোয়েল গার্নার, কলিন ক্রফট,ম্যালকম মার্শালদের মশালটা পরে বয়েছেন কার্টলি অ্যামব্রোস-কোর্টনি ওয়ালশ। অ্যামব্রোস-ওয়ালশের মতো কিংবদন্তিরা বিদায় নেওয়ার পর পেস বোলিং আক্রমণে বিরাট এক শূন্যতাই তৈরি হয় উইন্ডিজ ক্রিকেটে। প্রতিপক্ষকে ধারাবাহিক ধসিয়ে দেওয়ার মতো ভালো মানের ফাস্ট বোলার না থাকায় গত দশকের শুরুতে ওয়েস্ট ইন্ডিজ ক্রিকেট বোর্ড হাঁটে অন্য পথে।

দেশের মাঠে তারা টেস্ট খেলতে থাকে মন্থর ও নিচু উইকেটে। জয়ের চেয়ে ড্রয়ে বেশি মনোযোগী হয় ক্যারিবীয়দের। ওয়েস্ট ইন্ডিজের মাটিতে তখন গড়ে পাঁচ টেস্টের দুটি ড্র দেখা গেছে এ কারণেই। সেখানে খেলতে গিয়ে ব্যাটসম্যানরা ব্যাটিং গড় উন্নত করতে পারছেন না, স্কোরিং রেট উজ্জ্বল হচ্ছে না। এক দশকের বেশি সময় এই একঘেয়ে ক্রিকেটই দেখা গেছে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। সীমিত ওভারের ক্রিকেটে পারফর্ম যেমনই হোক, সেই উইন্ডিজ টেস্টে এখন অন্য দল। সাদা পোশাকে তারা খেলে ডিউক বল দিয়ে। কঠিন, গতিময়, এমনকি কখনো পেস-সহায়ক সবুজ উইকেটে ফাস্ট বোলিংয়ের স্বর্গ বানিয়ে প্রতিপক্ষ ব্যাটসম্যানদের ঘাম ছুটিয়ে দেয়। সোনালি সে সময়ের ওয়েস্ট ইন্ডিজ পুরোপুরি হয়তো নয়, তবে ফাস্ট বোলিং আক্রমণে এই ওয়েস্ট ইন্ডিজ বেশ মুগ্ধ করে।

ক্রিকেট ওয়েবসাইট ‘ক্রিকইনফো’র প্রতিবেদন বলছে, লম্বা বিরতির পর ওয়েস্ট ইন্ডিজ ফাস্ট বোলিংয়ের ‘বিপ্লব’ ঘটিয়েছে শ্যানন গেব্রিয়েল, কেমার রোচ, জেসন হোল্ডার, আলজাইরি জোসেপের মতো কজন দুর্দান্ত ফাস্ট বোলারদের হাত ধরে। এই ফাস্ট বোলারদের ওপর ভরসা করেই গত বছর ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ডিউক বলে সবুজ উইকেটে খেলেছে ক্যারিবীয়রা এবং সফলও হয়েছে। পেস বোলিংয়ে ওয়েস্ট ইন্ডিজ কতটা এগিয়েছে গত দুই বছরে এই পরিসংখ্যানে পরিষ্কার—২০১১ সালের পর নিজেদের মাটিতে ক্যারিবীয় পেসারদের গড় ছিল ২৫.৪৪, ২০১৭ সালে সেটি নেমে এসেছে ২১.১১-এ। ২০১৭ সালের পর ক্যারিবীয় দ্বীপপুঞ্জে সবচেয়ে সফল তিন টেস্ট পেসার গ্যাব্রিয়েল (গড় ১৯.২৫), হোল্ডার (১৪.৯১) ও রোচ (১৫.৮৫)। ওয়েস্ট ইন্ডিজের মাটিতে ক্যারিবীয় পেস বোলারদের গড় ১৯.০৫ আর সফরকারী পেসারদের গড় ২৪.১৬।

টেস্টে পেস বোলিং আক্রমণে ওয়েস্ট ইন্ডিজ তাদের ঐতিহ্য ফিরিয়ে আনতে সর্বোচ্চ চেষ্টা করছে। সফলও হচ্ছে। কিন্তু বাংলাদেশের পেস আক্রমণটা যে শুরু থেকেই ভোঁতা হয়ে রইল। পেসার-ত্রয়ী দূরে থাক, বাংলাদেশের একটি পেস জুটিই দাঁড়াল না এখনো। এটা ঠিক, ১৮ বছরে পেস বোলিং গড়ে কিছুটা উন্নতি হয়েছে। ২০১১ সালের পর বাংলাদেশের পেসারদের গড় ছিল ৩৭.৯৩। এখন সেটি ৩২.৯৬। এ সামন্য উন্নতি যে টেস্টের প্রেক্ষাপটে কিছুই নয়, ওয়েস্ট ইন্ডিজের পরিবর্তন দেখেই বুঝতে পারছেন।

ইংল্যান্ড-নিউজিল্যান্ড-দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে গেলে পেসারদের কদর হয়তো কিছুটা বাড়ে। কিন্তু সাদা পোশাকে দেশের মাঠে এমন অনাদরে কাটে, পেস-সহায়ক কন্ডিশনে গিয়েও বাংলাদেশের পেসাররা খুব একটা ধার দেখাতে পারেন না। আর দেশের মাঠে টেস্ট হলে কথাই নেই—তারা উপেক্ষিত থাকবেন, এটাই অলিখিত রীতি। ২০১৬ সালের ইংল্যান্ড সিরিজ থেকে ঘরের মাঠে বাংলাদেশের টেস্ট উইকেট অতিমাত্রায় স্পিন সহায়ক। স্পিনে প্রতিপক্ষকে ধসিয়ে দেওয়াই ঘরের মাঠে বাংলাদেশের মূল পরিকল্পনা। কোর্টনি ওয়ালশকে তাঁর সময়ে এই অধারাবাহিকতার সঙ্গে লড়াই করতে হয়েছে।

বাংলাদেশের নতুন পেস বোলিং কোচ চার্ল ল্যাঙ্গেভেল্টকে বাংলাদেশে তাঁর প্রথম সংবাদ সম্মেলনে এই প্রশ্নটা তাই শুনতে হলো—দেশের টেস্টে পেসাররা থাকেন উপেক্ষিত। এমনও হয়েছে বাংলাদেশ পেসার ছাড়াই খেলতে নেমেছে। এই যদি হয় অবস্থা, বড় দৈর্ঘ্যের ক্রিকেটে বাংলাদেশের ফাস্ট বোলিংয়ে উন্নতি তিনি আনবেন কীভাবে? ল্যাঙ্গেভেল্ট অবশ্য বলছেন এ সমস্যার সমাধান তাঁর অজানা নয়, ‘বিষয়টা দক্ষিণ আফ্রিকার মতো। সেখানকার উইকেটের কারণে তিন পেসার খেলাবেন আপনি। আপনি নেটে উন্নতি করার চেষ্টা করতে পারেন। মৌলিক বিষয় হচ্ছে লাইন-লেংথ ঠিক রাখা। উপমহাদেশ বলেই সব বদলে ফেলতে হবে না।’