উত্তর কোরিয়া 'ভয়ংকর' হবে আবাহনীর জন্য?

উত্তর কোরিয়া সফরকারী ফুটবল দলের জন্য সব সময়ই চ্যালেঞ্জের। সংগৃহীত ছবি
উত্তর কোরিয়া সফরকারী ফুটবল দলের জন্য সব সময়ই চ্যালেঞ্জের। সংগৃহীত ছবি
>এএফসি কাপের ইন্টার জোনাল সেমিফাইনালের দ্বিতীয় লেগের ম্যাচ খেলতে আজ উত্তর কোরিয়া পৌঁছার কথা রয়েছে আবাহনী লিমিটেডের। তবে মাঠের খেলার চেয়ে মাঠের বাইরের বিষয়গুলো ভাবনায় ফেলে দিয়েছে বাংলাদেশ প্রতিনিধিদের।

এএফসি কাপের ইন্টার জোনাল সেমিফাইনালের প্রথম লেগে উত্তর কোরিয়ার এপ্রিল টোয়েন্টি ফাইভ ক্লাবকে ৪-৩ গোলে হারিয়েছে বাংলাদেশের আবাহনী লিমিটেড। দ্বিতীয় লেগের ম্যাচটি ২৮ আগস্ট পিয়ংইয়ংয়ে। ইতিহাস হাতছানি দিয়ে ডাকছে দেশের অন্যতম জনপ্রিয় এ ক্লাবকে। ন্যূনতম ড্র করলেই ইন্টার জোনাল ফাইনালে নাম লেখাবে তারা। কিন্তু এ ম্যাচটি বড় চ্যালেঞ্জই হয়ে আসছে আকাশি-নীল বাহিনীর জন্য।

এপ্রিল টোয়েন্টি ফাইভ শক্তিশালী দল, তারা খেলবে নিজেদের মাঠে—এসব চ্যালেঞ্জ তো থাকছেই। এগুলো মোকাবিলা করার উপায়ও আছে আবাহনীর জানা। কিন্তু উত্তর কোরিয়ার তাদের দেশে খেলতে যাওয়া দলগুলোকে যেভাবে ‘আতিথ্য’ দেয়, সেটিই দুশ্চিন্তার কারণ হয়ে উঠছে। বাইরের দুনিয়ার কাছ থেকে নিজেদের সব সময়ই আড়াল করে রাখা এ দেশটিতে খেলতে গিয়ে অতীতে অনেক দলই ভয়ংকর সমস্যার মুখোমুখি হয়েছে।

‘ভয়ংকর’ সে সমস্যাগুলো কী কী? প্রতিপক্ষ দলের খেলোয়াড়দের বিরক্ত করা বা অস্বস্তিতে ফেলার জন্য অনেক কিছুই উত্তর কোরীয় কর্তৃপক্ষ করে থাকে। এমন কিছু তারা করে থাকে, যে সব ব্যাপারে সরাসরি অভিযোগ করার কোনো উপায় নেই, কিন্তু সমস্যার মুখোমুখি হতে হবে। যেমন ধরুন, দলের খেলোয়াড়দের ক্রীড়া সামগ্রীই হয়তো বিমানবন্দরে হারিয়ে গেল, রাতে হোটেলের ওপর দিয়ে বিকট শব্দে ছুটে গেল ক্ষেপণাস্ত্র। রাতে ঘুমের সময় চলে গেল হোটেলের বিদ্যুৎ। হতে পারে পানির কষ্ট। ইন্টারনেটের দুনিয়া সমাজতান্ত্রিক দেশটিতে প্রায় নিষিদ্ধ। মোটকথা তারা এমন একটা পরিবেশ তৈরি করতে পারে, যেটিতে খেলার সব মনোযোগ হারিয়ে ফেলতে পারেন সফরকারী দলের খেলোয়াড়েরা।

এ ধরনের গুমোট পরিস্থিতির মুখোমুখি হয়েছিল ভারতীয় ক্লাব বেঙ্গালুরু এফসি। ২০১৭ সালে এই এএফসি কাপেই খেলতে গিয়েছিল তারা উত্তর কোরিয়া। পিয়ংইয়ং থেকে ফিরে বেঙ্গালুরুর অস্ট্রেলিয়ান ডিফেন্সিভ মিডফিল্ডার এরিক পার্তালু বিবিসিকে শুনিয়েছিলেন সেই অভিজ্ঞতা। তিনি জানিয়েছিলেন দল পিয়ংইয়ং নামার সঙ্গে সঙ্গেই ইমিগ্রেশনের সব লোকজন নাকি বিমানবন্দরের আলো-টালো নিভিয়ে চলে গিয়েছিল। অন্ধকারের মধ্যে পুরো দলকে কাটাতে হয়েছিল পাক্কা দুই ঘণ্টা।

আলো ফিরলে ইমিগ্রেশন পাড়ি দেওয়ার সময় তাঁদের মোবাইল ফোন ও ট্যাব পরীক্ষা করেছিলেন বিমানবন্দরের কর্মকর্তারা—কোনো ছবি তোলা হয়েছে কি না, তা দেখার জন্য। এ সময় খেলোয়াড়দের ব্যাগ তল্লাশি করা হয় এবং তাঁদের ছবি তোলার ব্যাপারেও সাবধান করে দেওয়া হয়। শুধু ছবি তোলায় নিষেধাজ্ঞা নয়, খেলোয়াড়েরা ফোন পর্যন্ত ব্যবহার করতে পারেননি! ইন্টারনেট তো সেখানে নিষিদ্ধই।

খেলোয়াড়দের জন্য সবচেয়ে ভয়ানক অভিজ্ঞতা হলো খেলার সরঞ্জাম হারিয়ে যাওয়া। পিয়ংইয়ং বিমানবন্দরে বেঙ্গালুরুর বেশ কিছু খেলোয়াড়ের ব্যাগ হারিয়ে গিয়েছিল। এসব ব্যাগে তাঁদের খেলার সরঞ্জাম ছিল। অগত্যা হোটেলের দোকান থেকে চড়া দামে (১৫০-২০০ ডলার) তাঁদের বুট কিনতে হয়। পার্তালুর মতে, এগুলো ছিল ‘নকল বুট’! তবে ম্যাচের মাত্র ৪৮ ঘণ্টা খেলার সরঞ্জাম ফেরত পেয়েছিলেন তারা।

এ পর্যন্ত হলেও চালিয়ে নেওয়া যেত। কিন্তু সফরের শেষ দিনের গল্পটা পিলে চমকে ওঠার মতো। পার্তালুর বর্ণনাটা এমন, ‘সফরের শেষ দিনে হোটেলে আমাদের কামরার ওপর দিয়ে ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়া হয়। এ ধরনের পরিস্থিতির জন্য কেউ প্রস্তুত ছিল না।’

এসব গল্পগুলো জানা আবাহনীর পর্তুগিজ কোচ মারিও লেমোসের। তাই সেভাবেই শিষ্যদের মানসিকভাবে তৈরি থাকতে বলেছেন। খেলোয়াড়দের সঙ্গের হ্যান্ড লাগেজে রাখতে বলা হয়েছে ম্যাচ ও অনুশীলনের জন্য দুই জোড়া বুট এবং প্রয়োজনীয় খাদ্য সামগ্রী। গতকাল রাতে বেইজিং থেকে লেমোস ফোনে শোনালেন তাঁর দলের আগাম প্রস্তুতির কথা, ‘গত বছর কোরিয়া সফর করা আমার এক কোচ বন্ধুর মাধ্যমে সেখানকার বিষয়গুলো আমি জানি। খেলোয়াড়দের তাই আগে থেকেই বলে দিয়েছি হাত ব্যাগেই যেন তারা দুই জোড়া বুট ও প্রয়োজনীয় সামগ্রীসহ কিছু খাবার রাখে। তবে খেলোয়াড়েরা যেন আতঙ্কিত না হয়, সেদিকেও খেয়াল রাখতে হচ্ছে আমাদের।’

শনিবার রাতে পিয়ংইয়ংয়ের উদ্দেশে ঢাকা ছেড়েছে আবাহনী। চীনে মাঝে একদিন থেকে আজ পিয়ংইয়ংয়ে নামার কথা রয়েছে তাদের। নাইজেরিয়ার স্ট্রাইকার সানডে চিজোবা দলের সঙ্গে যাননি। চীন তাঁকে ভিসা না দেওয়ায় ব্যাংকক হয়ে চীনের বিমানবন্দরে দলের সঙ্গে যোগ দেওয়ার কথা রয়েছে তাঁর। এর পর গোটা দল চীন থেকে একসঙ্গে যাবে পিয়ংইয়ং।