লিচের চশমা মোছার কারণ তাহলে এই...

হেডিংলি টেস্টের অমর দৃশ্য। চশমার কাচ মুছছেন জ্যাক লিচ। ছবি: টুইটার
হেডিংলি টেস্টের অমর দৃশ্য। চশমার কাচ মুছছেন জ্যাক লিচ। ছবি: টুইটার
>

হেডিংলি টেস্টে ইংল্যান্ডের জয়ের পার্শ্বনায়ক জ্যাক লিচ। ম্যাচের শেষ দিকে বারবার তাঁর চশমার কাচ পরিষ্কারের দৃশ্যটা ভাইরাল হয়েছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। কেন বারবার কাচ পরিষ্কার করছিলেন লিচ? আর এ চশমাই–বা কোত্থেকে পেয়েছেন?

মাইকেল ভনের মতে, ‘ইতিহাসের সেরা অপরাজিত ১ রান।’ ইএসপিএনের সাংবাদিক ইয়ান ডার্কের মতে, ‘অ্যাশেজ ইতিহাসের সেরা এক রানের ইনিংস।’ আর এই ১ রানের ইনিংসটা যে জ্যাক লিচের, তা এখন না বললেও চলে। হেডিংলি টেস্টে ইংল্যান্ডের জয়ে ১৭ বলের ইনিংসটা দিয়ে ইংলিশদের হৃদয়ে চিরস্থায়ী জায়গা পেয়ে গেছেন লিচ। প্রতিবার ব্যাটিং প্রান্তে গিয়ে তাঁর চশমার কাচ পরিষ্কারের দৃশ্য তো এখন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল। অনেকে বলছেন, লিচের চশমার জায়গা হওয়া উচিত ব্রিটিশ মিউজিয়াম। এ কথা শুনে অমর শাহর নিশ্চয়ই খুশি হওয়ার কথা!

কিন্তু কে এই অমর শাহ? ভদ্রলোকের পরিচয় দেওয়ার আগে লিচের ব্যাটিংয়ের সে সময়টা একটু ফিরে দেখা যাক। শেষ ব্যাটসম্যান হিসেবে যখন উইকেটে এলেন, জয়ের জন্য ৭৩ রান দরকার ছিল ইংল্যান্ডের। বেন স্টোকস অন্য প্রান্তে অপরাজিত ৬১ রানে। খেলে ফেলেছেন ১৭৪ বল, একে তো ভীষণ মানসিক চাপ তার ওপর ছিল ক্লান্তি। আর অস্ট্রেলিয়ানরা তা বুঝতে পেরেই ব্যাটসম্যানদের তেমন একটা সময় দেননি উইকেটে। খানিক ফুরসতে তাঁরা যেন বিশ্রাম নিতে না পারে, সে জন্য নিজেদের কাজগুলো খুব দ্রুত করেছে অস্ট্রেলিয়া। কিন্তু লিচ এসে পাশার দান পাল্টে দেন চশমা দিয়ে!

বিষয়টি নিশ্চয়ই ধরতে পেরেছেন। লিচের ইনিংসে সবচেয়ে পরিচিত দৃশ্যটি তো মনে আছে? প্রতিবার স্ট্রাইকে গিয়েই হেলমেট খুলে একটু ধাতস্থ হয়েছেন। এরপর চোখের চশমার কাচগুলো পরিষ্কার করেছেন ছোট্ট এক টুকরো কাপড় দিয়ে। এতে সময় লাগায় বোলারদের ছন্দে ব্যাঘাত ঘটেছে আর অন্য প্রান্তে স্টোকসও বিশ্রাম নেওয়ার সুযোগ পেয়েছেন। প্রয়োজনের মুহূর্তে ওই ১ রান নেওয়া ছাড়া আর কখনোই তাড়াহুড়ো করতে দেখা যায়নি লিচকে। কাচ পরিষ্কারের ছলে সতীর্থকে অমর ইনিংস খেলার জন্য প্রয়োজনীয় বিশ্রামের সময়টুকু এনে দেওয়ায় লিচের চশমা এখন ভাইরাল। কৌতূহলের বশে অনেকেরই প্রশ্ন ছিল, লিচের চোখে এ চশমা তুলে দিয়েছেন কে? কিংবা এই চশমার পেছনের কারিগর কে?

জবাব খুঁজে বের করতে গিয়ে অমর শাহর নাম তুলে এনেছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম ‘ব্রিস্টল লাইভ’। ব্রিস্টলেরই এ ‘অপ্টোমেট্রিস্ট’-এর চেম্বার রয়েছে কোথাম হিলে। ক্রিকেট, ফুটবল, রাগবি ও অন্যান্য খেলাধুলায় নামকরা সব ক্রীড়াবিদদের চোখ দেখেছেন এ চক্ষু বিশেষজ্ঞ। ব্রিটিশ অলিম্পিক দল, ইংল্যান্ড রাগবি দল, ইংল্যান্ড ক্রিকেট দল, আর্সেনাল, গ্লুস্টারশায়ার কাউন্টি দলের সঙ্গে কাজ করেছেন অমর শাহ। চার বছর আগে তিনি যোগ দেন সমারসেট ক্রিকেট ক্লাবের সঙ্গে। আর এখানেই তাঁর পরিচয় ঘটে লিচের সঙ্গে। সমারসেটের এ স্পিনার তার আগে কখনোই কোনো চিকিৎসকের কাছে চোখ দেখাননি। অমর শাহর ভাষায়, ‘জ্যাক তার আগে কখনো চোখ পরীক্ষা করায়নি এবং জানত না যে তার চশমার প্রয়োজন। তার দৃষ্টি পরিষ্কার ছিল না কিন্তু যতটুকু দেখত সেটাই স্বাভাবিক বলে মনে করত।’

চক্ষু বিশেষজ্ঞ অমর শাহ। অবসরে খেলেন ক্রিকেটও। ছবি: ইনস্টাগ্রাম
চক্ষু বিশেষজ্ঞ অমর শাহ। অবসরে খেলেন ক্রিকেটও। ছবি: ইনস্টাগ্রাম

কয়েক দফা লিচের চোখ পরীক্ষার পর তাঁকে কন্টাক্ট লেন্স ও চশমা দেন অমর শাহ। আর চশমাটা ছিল তাঁরই হাতে তৈরি। ছুটি কাটাতে স্পেনে থাকা অমর শাহ সেখান থেকেই চোখ রেখেছিলেন হেডিংলি টেস্টে। আর হাইলাইটস দেখার সময় নিজের একটু ভুলের জন্য হতাশও হয়েছেন এ চিকিৎসক। টিভি পর্দায় হাইলাইটসে লিচের চশমার কাচ পরিষ্কারের দৃশ্যটা বারবার দেখানো হয়েছে। আর সেটি যেহেতু গোটা ইংল্যান্ডের মানুষের উদ্‌যাপনের বিষয়, তাই অমর শাহ মনে একটু রসিকতাই করেছেন, চশমার লোগোটা আরেকটু বড় করা উচিত ছিল। তাতে সেটি সবার চোখে পড়ত এবং হয়তো পসারও আরেকটু বাড়ত!

অমর শাহ নিজেও ক্রিকেটপ্রেমী এবং ইংল্যান্ডের সমর্থক। লিচের চশমার কাচ পরিষ্কারের দৃশ্যকে ক্রিকেটীয় দৃষ্টিকোণ থেকেই ব্যাখ্যা করেছেন অমর শাহ। স্টোকসকে বিশ্রাম নেওয়ার সময় দিতেই লিচ ওই অভিনয়টুকু করে গেছেন বলে মনে করেন তিনি। অমর শাহর ভাষায়, ‘খেলায় সময় নিতেই সে বারবার কাচ পরিষ্কার করেছে বলে মনে করি। ম্যাচ শেষে সে এক সাক্ষাৎকারে বলেছে, বেন স্টোকস পায়ে শক্তি পাচ্ছিল না, এ কারণে সে তাকে বিশ্রামের সময় করে দিতে চেয়েছে। আর তার চশমায় বাষ্প জমার কোনো কারণ নেই। লেন্সগুলো বিশেষভাবে তৈরি করা হয়েছে যেখানে বাষ্প জমতে পারে না।’

বাষ্প না জমলে কাচগুলো তাহলে পরিষ্কারই ছিল! লিচ সেই পরিষ্কার কাচই বারবার মোছার ছলে সময় বের করেছেন স্টোকসের জন্য—সতীর্থ যেন জয়ের রাস্তা বের করতে পারেন দেশের জন্য। এ যেন ব্যাটম্যানের পার্শ্বনায়ক রবিন!