হিউজের মৃত্যুর ছবিটাই ভেসে উঠেছিল স্মিথের মনে

এই হাসি উবে যেতে বসেছিল! ছবি: ফেসবুক
এই হাসি উবে যেতে বসেছিল! ছবি: ফেসবুক

২০১৪ সালে শেফিল্ড শিল্ডের সেই ম্যাচে মাঠে ছিলেন না স্টিভ স্মিথ। কিন্তু মুহূর্তেই মনে হলো, ঘড়ির কাঁটা তাঁকে নিয়ে গেল ৫ বছর পেছনে। লর্ডস হয়ে গেল সিডনি ক্রিকেট গ্রাউন্ড। আর তিনি যেন ফিলিপ হিউজ!‍ ক্রিকেটের সবচেয়ে বড় শোকগাথাগুলোর একটির জন্ম হয়েছিল হিউজের মৃত্যুতে। হিউজের মতোই ঠিক একইভাবে চলতি অ্যাশেজের দ্বিতীয় টেস্টে আঘাত পেয়েছিলেন স্মিথ। প্রথমে বিষয়টি অতটা গুরুতর মনে হয়নি। ড্রেসিংরুমে বিশ্রাম নিয়ে পরে ব্যাট হাতে নেমেও পড়েছিলেন। কিন্তু পরে বোঝা গেছে, ব্যাপারটা গুরুতরই ছিল।

সাংবাদিকদের স্মিথ বলেছেন, ‘আমার মাথায় কয়েকটা বিষয় ঘুরপাক খাচ্ছিল, বিশেষ করে মাথার যে জায়গায় চোট পেয়েছিলাম, সেটা বেশি ভাবাচ্ছিল। নিশ্চয়ই বুঝতে পারছেন আমি কী বোঝাতে চাইছি। ওই যে কয়েক বছর আগের ওই ঘটনাটা। ওটাই সম্ভবত সবার আগে আমার মাথায় এসেছিল। তার পর অবশ্য মনে হলো, নাহ্‌, অতটা গুরুতর কিছু নয়, আমি ঠিকই আছি। আমি ঠিক ছিলামও। শুধু মনটা একটু খারাপ হয়ে ছিল (ভালো খেলছিলেন, অনার্স বোর্ডে সেঞ্চুরি করে নাম তুলতে চেয়েছিলেন)। তবে মানসিকভাবে বাকি পুরো বিকেল ভালোই ছিলাম।’

মাথায় এমন আঘাত নিয়ে মাঠ ছেড়ে যখন বেরিয়ে যান, স্মিথের রান ছিল ৮০। ১০ ওভার পর আবারও মাঠে নামেন। ১২ রান যোগ করে যেভাবে বল ছেড়ে এলবিডব্লু হয়েছেন, তা দেখে মনে হয়েছে, মাথার আঘাতটা মনে দ্বিধার বীজ ঢুকিয়ে দিয়েছে হয়তো! অ্যাশেজে টানা তৃতীয় সেঞ্চুরিটা হাতছাড়া হলো মাত্র ৮ রানের জন্য।

তবে এর কিছুই নয়, স্মিথ সবচেয়ে বেশি চমকে দিয়েছেন, দ্বিতীয়বার ব্যাট করতে নামার সময়েও স্টেম গার্ড পরেননি! দ্বিতীয়বার যে ব্যাট করতে নেমেছেন, এর জন্যও অনেকে কোচকে দুষছেন। জাস্টিন ল্যাঙ্গার অবশ্য বারবার বলছিলেন, সিদ্ধান্তটা স্মিথেরই ছিল। কারণ স্মিথ তখনো মাথার আঘাতটা তেমন পাত্তা দেননি।

পরে বুঝেছেন, এটা আসলে ছিল ‘ডিলেড কনকাশন’। মাথায় আঘাতজনিত সমস্যার ফলে যেসব প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়, সেটি স্মিথের বেলায় প্রকাশ পাচ্ছিল দেরিতে। অনেক বেশি অ্যালকোহল নিয়ে যে অনুভূতি হয়, তেমনটাই নাকি মনে হচ্ছিল তাঁর, ‘ওই দিন সন্ধ্যা থেকে আসলে খারাপ লাগতে শুরু করে। যখন ডাক্তার জিজ্ঞেস করলেন, আমার কেমন লাগছে, আমি বললাম, মনে হচ্ছে ছয় বোতল বিয়ার না খেয়েই ছয় বোতল বিয়ার খাওয়ার অনুভূতি হচ্ছে। একটু অসুস্থও লাগছিল।’

বেশ কদিন এমন খারাপ লাগার ভেতরে ছিলেন স্মিথ। সেই খারাপ লাগা আরও বেড়ে গেছে, হেডিংলির এমন একটা বিস্ময়কর টেস্ট যে খেলতে পারলে না, সে কারণে। তিনি থাকলে ম্যাচটা জিতে অ্যাশেজের ভস্মাধার ধরে রাখাও নিশ্চিত করে ফেলত অস্ট্রেলিয়া—এমনও বলছে অনেকে। তবে সেই আক্ষেপ ফেলে সিরিজের চতুর্থ টেস্টের জন্য প্রস্তুত হচ্ছেন। আর সেই প্রস্তুতি এমন, এবার জফরা আর্চারের বাউন্সার ধেয়ে এলে একটুও ঘাবড়াবেন না। হয় সেটিকে এড়িয়ে যাবেন, না হয় সপাটে পুল করে পাঠিয়ে দেবেন সীমানায়।